খাগড়াছড়ি জেলা ও রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে পাহাড়ের পাদদেশে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে হাজারও লোক বসবাস করছে। প্রশাসনের পক্ষ হতে বারবার সর্তক ও মাইকিং করে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে বলা হলেও কেউ তাতে কর্ণপাত করছেনা। অথচ টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধ্বস ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের প্রাণহানির শঙ্কাও রয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় চারশতাধিক পরিবার।
এদিকে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে বেড়েছে মাইনী ও চেঙ্গী নদীর পানি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে প্লাবিত হবে নিমাঞ্চল। পাহাড় ধ্বস মোকাবেলায় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন। সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, খাগড়াছড়ির জেলা সদরের শালবাগান, কদমতলী, কুমিল্লা, মোল্লাপাড়া, সবুজবাগসহ বেশ কিছু এলাকায় স্থানীয়রা পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। এছাড়া জেলার মাটিরাঙা, দীঘিনালা, রামগড়, লক্ষীছড়ি এবং মহালছড়ি উপজেলাসহ শহরের কলাবাগান, নেন্সিবাজার, মোল্লাপাড়া, কৈবল্যপিঠ, আঠার পরিবার, শালবন ও মোহাম্মদপুরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে সহস্রাধিক পরিবার।
এছাড়া মাটিরাঙ্গা, মানিকছড়ি, রামগড়, মহালছড়ি, গুইমারার সিন্দুকছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলার অনেক জায়গায়ই বিগত বছরগুলোতে পাহাড় ধ্বসে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এদিকে শহরের বেশ কয়েকটি স্পটে পাহাড় কেটে বা অপরিকল্পিতভাবে বাড়িঘর নির্মাণ বেড়ে চললেও প্রশাসনের কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি। প্রতি বছর বর্ষা এলেই প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও সারাবছর পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন নিয়ে প্রশাসন নির্বিকার।
পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা বলছে, থাকার জায়গা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা পাহাড়ের পাদদেশে বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকার পুনর্বাসনের উদ্যোগে নিলে সরে যেতে রাজি তারা। খাগড়াছড়ি জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের অন্যত্র পুনর্বাসনের উদ্যোগ না নিলে ভয়াবহ প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, বর্ষায় পাহাড় ধ্বসে ব্যাপক জীবন হানির শঙ্কায় বুকে কম্পন শুরু হয়েছে। তবে সম্মিলিতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের পুনর্বাসনে উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে মৃত্যুর ঝুঁকিনিয়ে পাহাড়ের ঢালুতে হাজারও লোকের বসবাস করছে। প্রশাসনের পক্ষ হতে বারবার সর্তক ও মাইকিং করে আশ্রয় কেন্দ্রে আসতে বলা হলেও কেউ তাতে কর্ণপাত করছেনা। সপ্তাহ জুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হয়ে ইতোমধ্যে কাপ্তাইয়ের অনেক এলাকায় মাটি নরম হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোন সময় বড়ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কাপ্তাই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় হাজারেও বেশি লোক পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। তারমধ্যে কাপ্তাই লগগেইট, ঢাকাকলোনী, কবরস্থান, শিলছড়ি, বড়ইছড়ি, ওয়াগগা, কলেজ গেইট এলাকা, মিতিঙ্গাছড়ি, কেপিএম, কলাবাগান, রেশমবাগান, রাইখালী, রিফজিপাড়া এলাকা।
কাপ্তাই নতুনবাজার ঢাকাকলোনীর বাসিন্দা মিয়া হোসেন জানান, ঘরবাড়ি নেই, কষ্ট করে থাকি। আমরা যামু কই? আমাদের একটা চিরস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র দেন। মর্জিনা নামের একজন মহিলা বলেন, মরলে এখানে মরব, আর বাঁচলেও এখানে বাঁচব। আমরা কোথাও যাবনা। কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির জাহান জানান, আমরা বারবার পাহাড়ের ঢালুতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে আসতে বলছি। নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে আনার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৩ জুন কাপ্তাইয়ে পাহাড় ধ্বসে ১৮ জনের প্রাণহানি ঘটে।
এদিকে গতকাল শনিবার বিকেলে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান উপজেলার ৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়ন ঢাকাইয়া কলোনিতে বাড়ি, বাড়ি গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে যাবার অনুরোধ জানান।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, বিকালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে না আসলে প্রয়োজনে তাদেরকে জোর করে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হবে। কাপ্তাই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য নিকটস্থ ৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয়, ওয়াগগা মুরালিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওয়াগগা উচ্চ বিদ্যালয়, চিৎমরম ইউপি কার্যালয়, রাইখালি কারিগরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নারায়নগিরি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং চন্দ্রঘোনা ইউপি কার্যালয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, কাপ্তাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রুহুল আমিন, ৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও উপজেলা স্কাউটস সদস্যরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন