হঠাৎ বন্যার প্রভাব পড়তে শুধু করেছে ফরিদপুরের ৫ টি উপজেলা সদরে। ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পদ্মার পানি অব্যাহত ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশা-পাশি ফরিদপুর সদর থানার ডিক্রিচর ইউনিয়নের আইজউদ্দীন মাতুব্বর ডাঙীতে নদী ভাঙ্গনও চলছে।
একদিকে চর অধ্যুষিত নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করছে অন্যদিকে নদীভাঙনের তীব্রতা ও বাড়ছে।
পদ্মার গোয়ালন্দ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও চরভ্রাসন, সদরপুর,ভাঙ্গা, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদরের বহু নিম্নাঞ্চল বৃষ্টির এবং পদ্মা থেকে বানের পানিতে প্লাবিত হতে শুরু করছে।
অপরদিক, জেলার পদ্মা, মধুমতি, আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হতে শুরু করেছে। বর্তমানে বিপৎসীমার ১ মিটার নিচে দিয়ে পদ্মার পানি প্রবাহিত হলেও আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে তা অতিক্রম করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের আইজুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী এলাকার গনমমাধ্যম কর্মী হায়দার আলাী ইনকিলাবকে জানান, ৮/৯দিন ধরে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেলেও গত ২৪ ঘন্টা ধরে সেটির মাত্রা আরও বেড়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেলে কয়েকদিনের মধ্যে অনেক বাড়িতে পানি ওঠা যাবে।
একই ইউনিয়নের কাইমুদ্দিন মাতুব্বর ডাঙ্গী এলাকার নবিরন খাতুন (৬৫) ইনকিলাবকে বলেন, দু’দিন ধইরা যেমন কইরা পানি বাড়তেছে তাতে খুব ভয়ে আছি আমরা। আল্লাহই ভাল জানেন, কি জানি হয়।
ফরিদপুর জেলা সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান মুস্তাক গনমমাধ্যম কে বলেন, ইউনিয়নে হু হু করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নর্থচ্যানেল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হাজ্বী মোঃ মোফাজ্জেল হোসেন গনমমাধ্যম কে বললেন,
গত দু’দিনে প্রায় ১ ফুট পানি বেড়েছে। এ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বাদামসহ অন্যন্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
পার্শ্ববর্তী চরমাধবদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা সাইফুল ইসলাম আজম। ইনকিলাবকে বলেন, হঠাৎ পদ্মায় পানি বৃদ্ধিতে এ ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের বাদাম ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেলে কয়েকদিনের মধ্যে পাট ও তিল ক্ষেতও তলিয়ে যাবে। এছাড়া চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের অন্তত ৫০০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা গনমমাধ্যম কে বলেন হঠাৎ বন্যার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিনই ফরিদপুরের পদ্মা, মধুমতি নদী ও আড়িয়াল খাঁ নদের পানি বাড়ছে। পদ্মার পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বিপৎসীমার ১ মিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমার লেভেল ৮ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার)। তবে এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দুই-তিন দিনে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক কুমার রায় বলেন, ত্রাণ বিতরণের মতো বন্যা এখনও হয়নি। তবে, বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে, ফরিদপুরের ৯টি উপজেলার ইউএনওকে সাত টন করে ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১৫০ টনের বেশি ত্রাণ মজুদ আছে। বন্যা মোকাবিলায় তেমন কোনো সমস্যা হবে না আশা রাখছি।
জেলা প্রশানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বিপদে ধর্য ধারন করতে হবে এবং অত্যান্ত বিচক্ষণার সাথে তা মোকাবেলা করতে হবে। বন্যায় বানভাসি মানুষের পাশে থাকতে সকল বিষয় আমরা সচেতন আছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন