বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

নদীর পানি বৃদ্ধিতে বাড়ছে ভাঙন

নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০২২, ১২:০১ এএম

ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদীতে পানি বাড়ছে। মাদারীপুর, ফরিদপুর ও শরীয়াতপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফেনী ও গাইবান্ধা জেলায় পানি বেড়ে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চল ভাঙনের কবলে পড়েছে। আমাদের সংবাদদাতার তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদনÑ
মাদারীপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, টানা কয়েকদিনের অব্যাহত প্রবল বর্ষণ ও মাদারীপুরের আড়িয়াল খা ও পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রবল বর্ষণে বিশেষ করে মাদারীপুরের শিবচরের পদ্মা নদী সংলগ্ন চরজানাজাত কাঠালবাড়ী বন্দরখোলা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল এলাকা কিছুটা প্লাবিত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি ৪.৩ সে.মি. পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২.৬৭ সে.মি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়। পানি বৃদ্ধিতে নদী ভাঙনরোধে পানি উন্নয়নবোর্ডের সর্তকতামূলক নজরদারি রয়েছে বলেও তিনি জানান পাশাপাশি আড়িয়াল খা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে তীব্র স্রোতে কলাতলা-শিরুয়াইল অংশে পুনরায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহ যাবৎ আড়িয়াল খা নদীর তীব্র ভাঙণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভাঙনকবলিত সাধারণ মানুষ। ভাঙনের কবলে পড়েছে রাস্তাঘাট, বসতভিটা ও ফসলি জমি। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, বসতবাড়ি, মসজিদ ও কবরস্থানসহ হাটবাজার।
ভাঙন কবলিত সাধারণ মানুষ বলেন, ভাঙনের তীব্রতা অব্যাহত থাকায় ঝুঁকিতে রয়েছে বহেরাতলা বাজার, স্কুল-কলেজ, কলাতলা বাজার, রাস্তাঘাটসহ ১০টি গ্রাম। হুমকিতে রয়েছে আরো প্রায় অর্ধশত বিঘা ফসলি জমি। ইতোপূর্বেই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে জমিগুলোতে ধান, পাট, মেসতা, আখসহ বিভিন্ন ফসল। ভাঙনকবলিতরা দাবি করেন যাতে অতি দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে। পাশাপাশি এলাকায় দ্রুত বেরিবাঁধ নির্মাণের জোর দাবি জানান। আড়িয়াল খা নদের ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রক্রিয়া খুব তারাতারি শুরু হবে। তবে আপাতত জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙন ঠেকানো হচ্ছে। যেখানে ভাঙন দেখা দিচ্ছে সেখানেই আমরা ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে চেষ্টা করছি বলে মাদারীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়।
আনোয়ার জাহিদ, ফরিদপুর থেকে জানান, হঠাৎ বন্যার প্রভাব পড়তে শুধু করেছে ফরিদপুরের ৫টি উপজেলা সদরে। ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পদ্মার পানি অব্যাহত ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি ফরিদপুর সদর থানার ডিক্রিচর ইউনিয়নের আইজউদ্দীন মাতুব্বর ডাঙীতে নদী ভাঙনও চলছে। একদিকে চর অধ্যুষিত নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করছে অন্যদিকে নদীভাঙনের তীব্রতা ও বাড়ছে। পদ্মার গোয়ালন্দ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও চরভ্রাসন, সদরপুর, ভাঙ্গা, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা উপজেলা সদরের বহু নিম্নাঞ্চল বৃষ্টির এবং পদ্মা থেকে বানের পানিতে প্লাবিত হতে শুরু করছে।
অপরদিক, জেলার পদ্মা, মধুমতি, আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হতে শুরু করেছে। বর্তমানে বিপৎসীমার ১ মিটার নিচে দিয়ে পদ্মার পানি প্রবাহিত হলেও আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে তা অতিক্রম করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কাইমুদ্দিন মাতুব্বর ডাঙ্গী এলাকার নবিরন খাতুন ইনকিলাবকে বলেন, দু’দিন ধইরা যেমন কইরা পানি বাড়তেছে তাতে খুব ভয়ে আছি আমরা। আল্লাহই ভাল জানেন, কি জানি হয়।
ফরিদপুর জেলা সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান মুস্তাক গণমাধ্যমকে বলেন, ইউনিয়নে হু হু করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নর্থচ্যানেল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজ্বী মো. মোফাজ্জেল হোসেন গণমাধ্যমকে বললেন, গত দু’দিনে প্রায় ১ ফুট পানি বেড়েছে। এ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বাদামসহ অন্যন্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা গণমাধ্যমকে বলেন হঠাৎ বন্যার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিনই ফরিদপুরের পদ্মা, মধুমতি নদী ও আড়িয়াল খাঁ নদের পানি বাড়ছে।
পদ্মার পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বিপৎসীমার ১ মিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমার লেভেল ৮ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার)। তবে এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দুই-তিন দিনে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বিপদে ধর্য ধারণ করতে হবে এবং অত্যন্ত বিচক্ষণার সাথে তা মোকাবেলা করতে হবে। বন্যায় বানভাসি মানুষের পাশে থাকতে সকল বিষয় আমরা সচেতন আছি।
শরীয়তপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর বন্যার পানি নামার কারণে শরীয়তপুর জেলাও বন্যা আক্রান্ত হতে পারে বলে ধারণা করেছেন বিশেষজ্ঞগণ। পদ্মা, মেঘনা, কীর্তিনাশা, জয়ন্তী নদী বেষ্টিত শরীয়তপুর জেলার নদ নদীর পানি ইতিমধ্যেই বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করেছে। গতকাল সোমবার জেলার সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদ সীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের গ্রেজ রিডার শিল্পী।
অপরদিকে পদ্মা-মেঘনা বিদৌত ভেদরগঞ্জ উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২০ জন আমি আমাদের উপজেলার নদী বিদৌত চরভাগা, তারাবুনিয়া, কাচিকাটা ও চরসেন্সাস ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। এসব এলাকার নদ নদীর পানি বাড়লেও কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি। তারপরেও আমরা সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবাহিত পদ্মা, মাহনন্দা ও পূর্ণভবা নদীতে পানি বাড়ছে। অন্যদিকে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের আবাদি জমিগুলোতে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত কয়েক ধরে ভাঙন কবলিত এলাকা গুলোতে জিও ব্যাগ দিয়ে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে দায় সারছেন স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড বলে দাবি করেছেন ওইসব এলাকার বাসিন্দারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র মতে, গেল ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীতে দশমিক ৩০ মি.মি, মহানন্দায় দশমিক ২৭ মি.মি, আর পূর্ণভবায় দশমিক ১০ মি.মি পানি বেড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১০-১২ দিন থেকে পদ্মায় পানি বাড়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দূর্লভপুর ইউনিয়ের মনোহরপুর থেকে নামোজগন্নাথপুর পর্যন্ত নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে আবাদি জমি। স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত এ ভাঙন রোধ না করলে গত বছরের মতো এবারও হারাতে হবে ভিটামাটিসহ আবাদযোগ্য হাজার হাজার বিঘা জমি।
শিমুল নামের এক যুবক ভাঙনের কথা স্বিকার করে বলেন, মনোহরপুর থেকে জগন্নাথপুর পর্যন্ত ভাঙন ধরেছে। নদীর পাড়গুলো বেলেমাটি হওয়ায় নিমিষেই পানির স্রোতের ধাক্কায় নদীতে নেমে যাচ্ছে। গতবছরও অনেকজন নদীর পাড় থেকে বাড়ি ঘর টেনে নিয়ছিল। অনেকের ভিটামাটি, ধানিজমি, আম বাগান নদীতে নেমে গেছে। জনবসতির কাছাকাছি এবার নদীর পাড়, এখন ভাঙন না রুখলে তীব্রভাঙনের সময় জনবসতিও বিলিন হয়ে যাবে।
দূর্লভপুরের মনোহরপুর এলাকার গ্রাম পুলিশ শাহিন বলেন, গত বছরে মনোহপুরে ভাঙন ধরেছিল, এবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীতে পানি বাড়লে কিংবা কমলে ভাঙন ধরে। গতবার ভাঙন কবলিত এলাকায় চেয়ারম্যান ত্রাণ বিতরণ করেছিল। দূর্লভপুর ইউনিয়নের দফাদার মতিউর রহমান বলেন, প্রতিবছরই পদ্মায় ভাঙন ধরে, স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ না হলে জিওব্যাগ দিয়ে ভাঙনরোধ করা সম্ভব না।
ছাগলনাইয়া (ফেনী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, অতিবর্ষণ ও উজানের ঢলের পানিতে ফেনীর ফুলগাজীতে মুহুরী নদীর তিনটি ও পরশুরামে একটি স্থানে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে দুই উপজেলার ৮টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার তিনটি নদী মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীর পানি বেশিরভাগ পয়েন্টে বিপদ সীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে অন্যান্য স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়ে উপজেলার বিশাল এলাকা প্লাবিত হবার শংকা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে। ডুবতে বসেছে ফেনীর উত্তরাঞ্চল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত রোববার রাত ৪টার দিকে উপজেলার দরবারপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বরইয়া এলাকার রতন মেম্বারের বাড়ি সংলগ্ন স্থান ও সোমবার ভোর ৬টার দিকে সদর ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর এলাকার সেকান্তর মাস্টার বাড়ি সংলগ্ন স্থানে বাঁধে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। সকাল ১১টার দিকে একই ইউনিয়নের দেড়পাড়ায় আরেকটি বাঁধ পানিতে ভেসে যায়। ফলে দেড়পাড়া, নিলক্ষী, উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর ও বৈরাগপুর, দরবারপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বরইয়া এলাকা প্লাবিত হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের মতে, মুহুরী নদীর পানি আগের দিনের চেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, সোমবার সকাল আটটায় মুহুরী নদীর পানি ছিল ১২.৬৫ মিটার। সকাল ১০টায় ১২.৭৫ মিটার, পানি উন্নয়ন বোর্ড আরো জানান মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার দশমিক ২০ সেন্টি মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে ক্রমেই মুহুরী, সিলোনিয়া এবং কহুয়া নদীর পানি হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে একাধিক স্থানে বিপদ সীমা উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য স্হানেও ভাঙ্গনের আশংকা রয়েছে।
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টির পানির তোড়ে বাঁধ ধসে বড় বড় গর্তসহ খানা-খন্দে ভরে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে জনগণ। বিশেষ করে বেলকা বাজার থেকে সুন্দরগঞ্জ শহর পর্যন্ত দীর্ঘ ১২ কিলোমিটার বাঁধটি যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। দিন দিন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। দেখার যেন কেউ নেই। উপজেলা শহর থেকে বেলকা বাজার পর্যন্ত বাঁধটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন