শিশু শব্দটি শুনলেই আমাদের কল্পনার দৃশ্যপটে ভেসে ওঠে একঝাঁক দুরন্ত শিশুদের দুষ্টমি আর খুনসুটির নানা দৃশ্য। ভেসে ওঠে নিজেদের শৈশবের স্মৃতি। শিশু শব্দটির সাথে জড়িয়ে আছে একটি জাতির স্বপ্ন, আকাক্সক্ষা ও ভবিষ্যত। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত প্রত্যেক ব্যক্তিই শিশু। সাধারণত সব শিশুই এ বয়সে পরিবারের অটুট বন্ধনে থেকে মা-বাবার নিবিড় পরিচর্যায় বেড়ে উঠে। কিন্তু নির্মম বাস্তবতার জন্য সবাই মা-বাবার ছায়ার নিচে সুন্দর একটি জীবন নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে না। যে বয়সে তাদের কাঁধে ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, সে বয়সে তারা তাদের কাঁধে একটি ধুলোমাখা বস্তা ঝুলিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ায়। যে বয়সে তাদের পরিবার আর বন্ধুদের সাথে আনন্দে সময় কাটানোর কথা, সে বয়সে তারা পথে পথে, খোলা আকাশের নিচে প্রতিনিয়ত বাঁচার লড়াই করে। তারা বেড়ে উঠে নানা অবহেলা আর বঞ্চনার মধ্য দিয়ে। এই বয়সে ওদের পরিচয় হয় পথশিশু হিসবে। অধিকাংশ পথশিশুদের নিজস্ব কোনো পরিবার নেই। অনেক ক্ষেত্রে তারা পরিবার থেকে পালানো কিংবা মা-বাবা তাড়ানোও হয়। অনেকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সবটাই রাস্তায়। সাধারণত বিভিন্ন জনসমাগমপূর্ণ স্থান বিশেষ করে রেল স্টেশন, বাস স্টপেজ, লঞ্চ টার্মিনাল ইত্যাদি জায়গায় পথশিশুদের দেখা যায়। এসব শিশু খাবারের টাকা জোগাড়ের করার জন্য রাস্তা থেকে বিভিন্ন প্রকার পরিত্যক্ত দ্রব্য কুড়িয়ে নিয়ে ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে। অনেক সময় তারা ফুল, বেলুন, বই, পত্রিকাসহ নানান জিনিস ফেরি করে রাস্তায় রাস্তায়। আবার কখনো তারা সাহায্যের আশায় পথচারীদের নিকট হাত বাড়ায়। পথশিশুরা ঠিকমতো দু’বেলা পেট পুরে খেতে পারে না। কোনো সময় এক বেলা জুটলে আরেক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে অভ্যস্ত এসব শিশুদেরকে ক্ষুধার তাড়নায় ডাস্টবিন থেকে উচ্ছিষ্ট খাবার কুড়িয়ে খেতেও দেখা যায়। পরিবারের স্নেহবঞ্চিত এসব শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। সঠিক পরিচর্যা পেলে পথশিশুরা আর দেশের বোঝা থাকবে না। তারা পরিণত হবে দেশের জনসম্পদে। পথশিশু নামক অভিসাপ থেকে জাতিকে মুক্তি দেয়া শুধুমাত্র সরকারের একার কাজ নয়। এজন্য সকল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সকল নাগরিকদের একসাথে এগিয়ে আসতে হবে। মা-বাবার স্নেহ বঞ্চিত এসব শিশুদের দিকে বাড়িয়ে দিতে হবে মমতার হাত। নিজের সন্তানকে আমরা যেভাবে ভালোবাসি, তেমনি ওদেরকেও ভালোবেসে কাছে টেনে নিতে হবে। আমরা যদি এ সংকট নিরসনে একসাথে কাজ করতে পারি, তাহলেই আমরা আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো।
হাসনাত জাহান সিফাত
শিক্ষার্থী, ফাজিলপুর ওয়ালিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা, ফেনী
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন