শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

১১ বছরের শিশু আত্মহত্যার কী বুঝে- প্রশ্ন পরিবারের

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০২২, ৯:১৮ পিএম

১১ বছরের কোমলমতি শিশু শিহাব মিয়া। পড়াশোনা করতেন টাঙ্গাইল শহরের বিশ্বাস বেতকা এলাকার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান "সৃষ্টি স্কুলে"। গত ২০ জুন এই স্কুলের আবাসিক ভবন থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে শিহাবের। শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। কিন্তু আত্মহত্যা বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। তবে তা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তার পরিবার। তাদের প্রশ্ন - ১১ বছরের একটা শিশু আত্মহত্যার কী বুঝে?

রহস্যজনক এই মৃত্যু ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠে আসায় সঠিক তদন্ত ও বিচারের দাবিতে টাংগাইলে মানববন্ধন করেন শিহাবের পরিবার। বিচার না পেয়ে অবশেষে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

রোববার (২৬জুন) শিহাবের পরিবারের সাথে একাট্টা হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করে ঢাবিতে অধ্যয়নরত টাংগাইল জেলার সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে একাত্মতা পোষণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকও।

মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও স্যার এফ রহমান হলের প্রভোস্ট ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান, বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আতাউল্লাহ, শিহাবের পিতা মো. ইলিয়াস হোসেন ও তার বোন বক্তব্য রাখেন।

পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শিহাব হত্যার ঘটনার সঠিক তদন্ত করে আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের দাবি করেন ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, আমি শিহাবের লাশটি দেখেছি। তার শরীরের বুকে, হাতে, পায়ে, পিঠসহ অনেকদিকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। যেদিকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে সবদিকে রক্ত জমাট হয়ে ছিল। এমন একটি ঘটনাকে কর্তৃপক্ষ আত্মহত্যা বলে চালিয়ে যাচ্ছেন। এরকম অমানবিক কাজ কোনো মানুষের পক্ষে করা সম্ভব না! তিনি এ ব্যাপারে প্রশাসনকে সুষ্ঠু তদারকির আহ্বান জানান।

শিহাবের বাবা ইলিয়াস হোসেন বলেন, আমার ছেলে ছিল নিষ্পাপ, সোনার মতো শিশু। সে অবুঝ ছিল। সে আত্মহত্যা করা বোঝে না। তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলে আত্মহত্যা করেছে বলে মিথ্যা অপপ্রচার করা হচ্ছে। ওরা মানুষ গড়ার কারিগর নয়, ওরা হত্যাকারী, ওরা অমানুষ। এ সময় তিনি তার নিষ্পাপ ছেলের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেন।

শিহাবের বোন প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, আমার ভাই অনেক স্বপ্ন নিয়ে এই স্কুলে নিজ থেকে ভর্তি হতে চেয়েছিল। সামনে পরীক্ষা দেখে পড়ার জন্য সে বাড়িতে বেশিদিন থাকতে চায়নি। তাই তাকে মেরে ফেলার তিন দিন আগেই সে বাড়ি থেকে স্কুলে চলে আসে। এই তিন দিনের ভেতরে এমন কী হয়েছিল সে আত্মহত্যা করতে যাবে! ১১ বছরের শিশু আত্মহত্যার কি-ই বা বুঝে?
তিনি বলেন, পরে তার খবর নিতে স্কুলে যোগাযোগ করা হলে একেকজন একেক রকম তথ্য দেয়৷ কেউ বলে অসুস্থ, কেউ বলে খেলতে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে, তাই তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তারপর হাসপাতালে যোগাযোগ করলে জানায় এমন কোনো রোগী হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। তারপর একজন শিক্ষক আমাদেরকে ফোন দিয়ে মর্গ থেকে লাশ হাতে তুলে দেয় আর বলে আমার ভাই আত্যহত্মা করেছে। কী এমন হলো এরইমধ্যে তাকে মর্গে নিতে হলো? এখনও পর্যন্ত ওই আবাসিকের কোনো শিক্ষার্থীকে বের হতে দিচ্ছে না। তার দাবি, শিহাবকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত টাঙ্গাইল জেলার সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান। তাদের দাবি, এটা কখনও আত্মহত্যা হতে পারে না। এটা রহস্যজনক মৃত্যু, শিহাবকে হত্যা করা হয়েছে। বিক্ষোভ সমাবেশে তারা ন্যায় বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানায়।

জানা যায়, শিহাবের বাড়ি টাংগাইল জেলার সখীপুর উপজেলার বেরবাড়ি গ্রামে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন