শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভারতে নূপুর-কীর্তি প্রকাশ্যে আনা মুসলিম সাংবাদিক গ্রেফতার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০২২, ১২:০০ এএম

২০১৮ সালে করা টুইটে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে। সেই অভিযোগে চার বছর পরে দিল্লি পুলিশ গ্রেফতার করেছে অল্ট নিউজের সহ প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ জুবায়েরকে। তাকে এক দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, একই অভিযোগে দায়ের হওয়া এফআইআরের ভিত্তিতে কেন গ্রেফতার হচ্ছেন না বিজেপির মুখপাত্র (বর্তমানে সাসপেন্ড) নূপুর শর্মা? নূপুর শর্মা যে টেলিভিশন অনুষ্ঠানে মহানবী (সাঃ) কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন, তা জুবায়েরই প্রথম প্রকাশ্যে আনেন। নূপুর এখনও অধরা থাকলেও, জুবায়েরকে ২০১৮-য় করা একটি টুইটের ভিত্তিতে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ। প্রসঙ্গত, দিল্লি পুলিশ সরসরি নিয়ন্ত্রিত হয় অমিত শাহের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্বারা। দিল্লি পুলিশ এফআইআরে দাবি করেছে, ‘জুবায়েরের পোস্ট অত্যন্ত প্ররোচনামূলক এবং মানুষের মধ্যে ঘৃণা উৎপাদন করার পক্ষে যথেষ্ট।’ সূত্রের খবর, ২০১৮ সালে জুবায়ের টুইটে একটি ছবি শেয়ার করেছিলেন। সেই ছবিতে নামফলকে হিন্দিতে লেখা ‘হনুমান হোটেল’। যা দেখে বোঝা যাচ্ছে, আগে এই হোটেলের নাম ছিল ‘হানিমুন হোটেল’। হানিমুন মুছে হনুমান করা হয়েছে। সাংবাদিক জুবায়ের সেই টুইটে লিখেছিলেন, ২০১৪-এর আগে যা ছিল হানিমুন হোটেল, ২০১৪-এর পর তা-ই হয়েছে হনুমান হোটেল!

এই ঘটনা ২০১৮ সালের। ২০২২-এ এসে দিল্লি পুলিশ সেই টুইটের জেরে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগে জুবায়েরকে গ্রেফতার করেছে। আদালতে তার সাত দিনের রিমান্ড চায় দিল্লি পুলিশ। কিন্তু বিচারক এক দিন রিমান্ডের অনুমতি দেয়। ভারতে ফেক নিউজের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যে ফ্যাক্ট-চেকিং ওয়েবসাইটটিকে প্রায় পথিকৃৎ বলে ধরা হয়, সেই অল্ট নিউজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জুবায়ের। আহমেদাবাদের অ্যাক্টিভিস্ট প্রতীক সিনহার সঙ্গে মিলে তিনি এই সাইটটি চালু করেছিলেন, যা এখন খুবই জনপ্রিয়।

নিজস্ব টুইটার হ্যান্ডল থেকেও জুবায়ের নিয়মিত শাসক দল বিজেপি ও মোদী সরকারের সমালোচনামূলক বিভিন্ন টুইট করে থাকেন, যা নানা সময়ে তাদের অস্বস্তির কারণ হয়েছে। তার সহকর্মী প্রতীক সিনহা গতকাল টুইটারে জানান, ২০২০ সালের পুরনো একটি মামলায় জুবায়েরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিল্লি পুলিশ প্রথমে তাকে ডেকে পাঠায় - যে মামলায় হাইকোর্ট তাকে আগেই গেফতারি থেকে রক্ষাকবচ দিয়েছিল। কিন্তু সন্ধ্যায় সম্পূর্ণ আলাদা একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে পুলিশ তাকে জেল হাজতে পাঠায় - যে মামলার এফআইআরও তাকে দেখানো হয়নি। পরে জানা যায়, জনৈক ‘হনুমান ভক্ত’র (বালাজিকিজৈন) অভিযোগের ভিত্তিতেই ওই মামলা রুজু করা হয়েছে।

জুবায়েরের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে ভারতের সাংবাদিক সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় বিরোধী নেতারাও এই পদক্ষেপের নিন্দায় মুখর হয়েছেন। ‘এডিটর্স গিল্ড অব ইন্ডিয়া’ তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ‘ভারতে ফেক নিউজ ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বিরুদ্ধে লড়াইতে যে অল্ট নিউজ অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে, তার কর্ণধারকে এভাবে গ্রেফতার করা খুবই বিচলিত করার মতো ঘটনা।’ ভারতের শীর্ষ সম্পাদকদের এই সংগঠন আরও বলেছে, যেদিন জার্মানিতে জি-সেভেনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ‘অনলাইনে ও অফলাইনে’ বাকস্বাধীনতা রক্ষা করার অঙ্গীকার করলেন সে দিনই জুবায়েরকে দিল্লিতে গ্রেফতার করা হল - এটা একটা চূড়ান্ত প্রহসন।

দিল্লিতে ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকেও এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)-ও মন্তব্য করেছে, ভারত সরকার এই সাংবাদিকদের কাজের জন্য একটি বিদ্বেষপূর্ণ ও বিপজ্জনক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেস এমপি ও মুখপাত্র মহুয়া মৈত্র অত্যন্ত কড়া ভাষায় টুইট করেছেন, ‘বিজেপি আসলে ফ্যাক্ট বা সত্যিকেই ঘৃণা করে। জুবায়ের যার প্রতীক তার সব কিছুই তাদের আসলে না-পসন্দ, তারা প্রোপাগান্ডা আর মিথ্যার কারবারি!’ জুবায়েরের প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী লিখেছেন, ‘যারাই বিজেপির ঘৃণা, পক্ষপাত আর মিথ্যা ফাঁস করে দিচ্ছেন তারা সবাই আসলে তাদের কাছে হুমকি। কিন্তু একটি প্রতিবাদী কন্ঠস্বরকে গ্রেফতার করলে এরকম আরও হাজার কন্ঠস্বর গর্জে উঠবে।’

এর আগে শনিবার নরেন্দ্র মোদীর আর একজন তীব্র সমালোচক, মানবাধিকার কর্মী তিস্তা সেতালভাদও গ্রেফতার হয়েছেন, সরকারের নির্দেশে টুইটার আটকে দিয়েছে আরেক সাংবাদিক রানা আইয়ুবের অ্যাকাউন্ট। সূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি নিউজ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন