কয়রা (খুলনা) উপজেলা সংবাদদাতা : প্রায় ২৪০০ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ি বাঁধ সংস্কারের জন্য পাঁচটি প্যাকেজে ৭৫ লাখ টাকা প্রাক্কলন মূল্য নির্ধারণ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী দরপত্র আহŸান করা হয়েছে। দরপত্রে শতকরা ২০ ভাগ কম মূল্যে সর্বনি¤œ দরদাতা হিসেবে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংস্কার কাজটি পেয়ে যান। কার্যাদেশ পাওয়ার পর ওই কাজটি সম্পন্ন করতে ঠিকাদার ১৫ লাখ টাকায় সাব কন্ট্রাক্ট দিয়েছেন। সাবকন্ট্রাক্টর আবার ওই কাজ মাত্র ১০ লাখ টাকায় সম্পন্ন করতে শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তি করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সাতক্ষিরা-২ বিভাগের আওতাধীন খুলনার কয়রা উপজেলায় নদী ভাঙন কবলিত দশাহালিয়া, লোকা, গাববুনিয়া ও গাজীপাড়া এলাকার বেড়িবাঁধ সংস্কারে এমন অসংগতি পরিলক্ষিত হয়েছে। টেন্ডারে এ কাজটি পেয়েছেন সাতক্ষিরা শহরের মো. আব্দুল খালেক নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের মালিক আব্দুর রশিদ ওই কাজ কয়রা উপজেলার ঘাটাখালি গ্রামের রিপন শেখ নামে এক ব্যাক্তির কাছে সাব কন্ট্রাক্ট দিয়েছেন।
প্রাক্কলন ও দরপত্রে নির্ধারিত মূল্যের সাথে নির্মাণ ব্যয়ের এমন অসংগতি রীতিমত ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন এলাকাবাসীকে। তারা মনে করেন, সরকারি বরাদ্দ আত্মসাতের অসৎ উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে প্রাক্কলন তৈরি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পূর্ব থেকেই যোগসাজস থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, মোট ২৪০০ মিটারের পাঁচটি প্যাকেজের মধ্যে চারটি প্যাকেজের প্রায় ১৬০০ মিটার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। দশাহালিয়া এলাকায় প্রায় ৮০০ মিটার বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য শ্রমিকরা মাটি ফেলার কাজ করছেন। সেখানে পাউবোর নকশা অনুযায়ী মূল বাঁধের ওপরে ৩ ফুট উচ্চতার স্থলে মাটি দেয়া হয়েছে ২ ফুট, নদীর পাশে ২০ ফুট ঢাল রাখার স্থলে কোথাও ১০ ফুট কোথাও ১২ ফুট রাখা হয়েছে. বাঁধের প্রশস্ততা ১৪ ফুটের কথা বলা হলেও পাওয়া গেছে ১০ ফুট। একই অবস্থা দেখা গেছে প্যাকেজের অন্য চারটি স্থানেও।
শ্রমিক সরদার শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, কাজের মূল ঠিকাদার কে তারা জানেন না। রিপন নামের এক যুবকের সঙ্গে কাজের চুক্তি হয়েছে তাদের। প্রতি ১০০ মিটার কাজের জন্য ৪০ হাজার টাকা পাচ্ছেন তারা। হিসাব অনুযায়ী মোট ২৪০০ মিটার কাজে শ্রমিকরা পাবেন প্রায় ১০ লাখ টাকা। তিনি বলেন, ঠিকাদার মাটির কাজের যে হিসাব দিয়েছেন সে হিসেবে কাজ করলে আমাদের এ টাকায় পুষিয়ে যায়।
জানতে চাইলে ঠিকাদার আব্দুর রশিদ কাজটি সাব-কন্ট্রাক্ট দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, রিপন শেখ তার পূর্ব পরিচিত হওয়ায় তাকে অলিখিত চুক্তিতে সাবকন্ট্রাক্ট দেয়া হয়েছে। কাজে কোনো অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি করবেন বলে জানান তিনি।
প্রাক্কলন মূল্যের সঙ্গে কাজের অসংগতি প্রসংগে জানতে চাইলে পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মো: ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা যে প্রাক্কলন তৈরি করি তা একেবারেই নিখুঁত তা বলা যাবে না। তবে এতটা অসংগতি হওয়ার কথা নয়। ঠিকাদার কৌশলে কাজ কমিয়ে ফেলেছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। যদি এমন হয় তাহলে যতটুকু কাজ হয়েছে ততটুকু বিল পাবে। বাকি টাকা কেটে রাখার সুযোগ আছে বলে জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন