শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

অবৈধ বালু উত্তোলন : হুমকিতে স্থাপনা

| প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও ধুনট এবং সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় বালুদস্যুরা রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে ১০টি বালুমহাল থেকে বিপজ্জনকভাবে বালু উত্তোলন করছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ইনকিলাবে প্রকাশিত এই খবরে বলা হয়েছে, বালু উত্তোলন করে বালুদস্যুরা প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সরকার বালু মহালগুলো ইজারা দিতে না পারায় বালুদস্যুরা বিনা রাজস্বে বালু উত্তোলন করছে। এতে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে এই বেপরোয়া বালু উত্তোলনের ফলে যমুনার পশ্চিম তীর সংরক্ষণে নির্মিত শত শত কোটি টাকার স্থাপনা হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট এলাকার জনবসতিও হুমকির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। বালুমহালগুলোতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের এ ‘মহাযজ্ঞ’ চললেও স্থানীয় প্রশাসনের কোনো বিকার নেই। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, বালুদস্যুরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় উপজেলা প্রশাসন ইচ্ছা থাকলেও কোনো প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নিতে পারছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, বালুদস্যু ও বাঁধ ব্যবসায়ীদের যোগসাজশের একটি বিষয়ও খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যমুনার পূর্বতীরের বিস্তীর্ণ এলাকা নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষার জন্য আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থে গড়ে তোলা হয়েছে গ্রোয়েন, স্পার, ফিসপাস গেট ও বাঁধ। এর আগে ওই এলাকায় শক্ত মাটির বাঁধ দেয়া হলেও বাঁধ ব্যবসায়ী ঠিকাদাররা পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বালু দিয়ে বাঁধ দেয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করিয়ে নিয়েছে। ফলে বাঁধের জন্য প্রচুর বালির প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। বালুদস্যুরা ওই বাঁধের প্রয়োজন পূরণ করতেই বিপজ্জনক পয়েন্টগুলো থেকে ইচ্ছেমত বালু উত্তোলন করে বাঁধে সাপ্লাই দিচ্ছে।
খবর থেকে এটা স্পষ্টভাবেই প্রতিভাত হয়, বাঁধ ব্যবসায়ী ঠিকাদার, বালুদস্যু এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের যোগসাজশেই অবৈধ বালু উত্তোলন, বাঁধ নির্মাণ ইত্যাদি চলছে। সংশ্লিষ্ট সবাই লাভের-কড়ি বাটোয়ারা করে নিচ্ছে। ক্ষতি যা হওয়ার হচ্ছে সরকারের। স্থানীয় অধিবাসীদেরও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। সরকারীভাবে বালুমহাল ইজারা দেয়ার ব্যবস্থা আছে। এই ব্যবস্থা এখানে কার্যকর হয়নি। বালুদস্যুরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় বিনা ইজারাতেই বালু উত্তোলন করছে। বিষয়টি মোটেই আমলে নেয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে শক্ত মাটির বাঁধের স্থলে বালুর বাঁধ দেয়ার সিদ্ধান্ত কিভাবে হলো, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য এই যে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, তার ভবিষ্যৎ কি? পশ্চিম তীরের স্থাপনা ও জনপদের ওপর যে হুমকি দেখা দিয়েছে, তারই বা কি হবে? কোনো ক্ষতি হলে তার দায় কে বহন করবে? তথ্যাদি ও অবস্থাদৃষ্টে এটাই মনে হয়, সরকারী অর্থ লুটেপুটে খাওয়ার জন্য একটা ‘ব্যবস্থা’ নেয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের কোনোরূপ নজরদারী যে এখানে নেই তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গোটা বিষয়টি অনুপুঙ্খ তদন্তের দাবি রাখে। জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প এভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে না। যোগসাজশটি কোথায়, কিভাবে হয়েছে তা খুঁজে দেখা দরকার। এর সঙ্গে যারাই যুক্ত থাক তারা রেহাই পেতে পারে না। সরকারের অর্থ আসে জনগণের ট্যাক্স থেকে। এই অর্থ হিতের চেয়ে অহিতে ব্যবহৃত হবে, আর কিছু লোক ‘মজাসে বাণিজ্য’ করবে, তা হতে পারে না।
দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিকাংশ প্রকল্পের ক্ষেত্রেই এ ধরনের নানা অভিযোগ পাওয়া যায়। নদী শাসন হোক, ড্রেজিং হোক কিংবা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হোক, নদীভাঙনরোধক বাঁধ হোকÑ সব ক্ষেত্রেই অর্থ লুটপাটের বিষয়টি প্রাধান্যে থাকে। ফলে প্রকল্প ঠিকমত বাস্তবায়িত হয় না; জনস্বার্থ রক্ষিত হয় না। এ অভিযোগ পুরানো, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প প্রায় ক্ষেত্রেই ঠিক সময়ে শুরু ও শেষ হয় না। সাধারণত শুকনো মৌশুমেই নদী ও বাঁধের কাজ হওয়ার কথা। কিন্তু সচরাচর দেখা যায়, বর্ষার আগে আগে কাজ শুরু হয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা শেষ হয় না। কাজ শেষ না হলেও অর্থ শেষ হয়ে যায়। এই ‘সংস্কৃতি’র কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। গেল বর্ষায় বন্যার সময় বহু বাঁধ ভেঙেছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদীগুলো ভাঙনের তা-ব চালিয়ে বাড়িঘর, স্থাপনা, ফসলাদি ধ্বংস করে দিয়েছে। অথচ যথাসময়ে বাঁধ নির্মাণ, সংস্কার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিলে এটা হতো না। প্রতিবছরই এমন ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে। আলোচ্য খবরের প্রেক্ষিতে আমরা আশা করতে চাই, অবৈধ বালুমহাল থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলনের বিষয়ে দ্রুত নজর দেয়া হবে। বিপজ্জনক পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন রহিত করতে হবে। বালুদস্যুদের বিরুদ্ধে যথাযোগ্য আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে। এই সঙ্গে বালির বাঁধ দেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে। ভঙ্গুর বালির বাঁধ নয়, স্থায়ী ও টেকসই বাঁধই কাম্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন