পদ্মাসেতু চালু হওয়ার ফলে দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের সাথে রাজধানী ও অন্যান্য জেলার সড়ক যোগাযোগ বিস্তৃত হয়েছে। এই সেতু এবং এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে হলে টোল দিতে হবে। গতকাল রাজধানী থেকে মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে এবং পদ্মাসেতু পার হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত যানবাহন চলাচলে টোল আদায় শুরু হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায়কে বিষেজ্ঞরা যৌক্তিক বলে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে, এক্সপ্রেসওয়ে রক্ষণাবেক্ষণ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা মসৃণ রাখতে বড় ধরনের অর্থ ব্যয় হয়। এই অর্থ, টোল আদায়ের মাধ্যমেই তুলতে হবে। পাশাপাশি বিদেশী বা আন্তর্জাতিক যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে আলাদা টোল হার নির্ধারণ স্বভাবিকভাবেই দেশীয় যানবাহন থেকে বেশি আদায় করতে হবে। বিশ্বের প্রায় সবদেশেই এ ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এটাও বলেছেন, শুধু টোল আদায় করলে হবে না, সড়ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে যানবাহন যাতে মসৃনভাবে চলাচল করতে পারে এবং কোনো ধরনের বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়, এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
আমাদের দেশে মটরসাইকেল থেকে শুরু করে সবধরনের ইঞ্চিনচালিত যানবাহনের ক্ষেত্রে ট্যাক্স-টোকেন দিতে হয়। বিআরটিএ বার্ষিকভিত্তিতে এই ট্যাক্স-টোকেন আদায় করে। এটা যেকোনো সড়ক ব্যবহার করার জন্য আদায় করা হয়। তবে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ সেতু ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আলাদা টোল দিতে হয়। যমুনা সেতু, মেঘনা-গোমতী সেতুর মতো অন্যান্য সেতুতে টোল ব্যবস্থা রয়েছে। মহাসড়ক বা এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের ক্ষেত্রে টোল আদায় করা হয় না বললেই চলে। নতুন এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায়ের মাধ্যমে এ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এটা যথোপযুক্ত এবং যৌক্তিক। উন্নত বিশ্বে মহাসড়ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে টোল দিতে হয়। এটা করা হয় মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ এবং নির্বিঘ্ন রাখার জন্য। এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হয় যাতে টোল দিয়ে যানবাহন চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি না হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-সিলেটের মতো যেসব প্রধান প্রধান মহাসড়ক রয়েছে সেসবেও টোল নির্ধারণ করা উচিৎ। এতে মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণের খরচ যেমন উঠে আসবে, তেমনি যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলাও ফিরে আসবে। যানজটসহ অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি হবে না। সাধারণত মহাসড়কের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি সরল এবং একরৈখিক। এর সাথে অন্যকোনো সড়ক সংযুক্ত হবে না। আমাদের দেশের মহাসড়কে এ বৈশিষ্ট্য নেই। দেখা যায়, পাশের কোনো এলাকা হতে সরু সড়ক এসে যুক্ত হয়েছে এবং থ্রি হুইলার বা ভটভটি ধরনের যানবাহন মহাসড়কে উঠে পড়ছে। এতে মহাসড়কে চলমান দ্রুতগামী যানবাহন বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কের বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এ প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। মহাসড়ক নির্বিঘ্ন করতে এর সাথে সংযুক্ত সড়ক বিচ্ছিন্ন করতে হবে। মহাসড়কে উঠলেই টোল দিতে হবে এ ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া মহাসড়কে বাজার বসা, বাস-ট্রাক স্ট্যান্ড স্থাপন করাসহ অবৈধ সব ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। এগুলো বিদ্যমান রেখে মহাসড়ক যেমন সচল করা যাবে না, তেমনি রক্ষণাবেক্ষণেও প্রচুর অর্থ খরচ হবে।
এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় চালু করার মাধ্যমে দেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায় রচিত হয়েছে। আমরা একে স্বাগত জানাই। দেশের অন্যান্য মহাসড়কেও একই ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন বলে মনে করি। এতে মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। প্রতি বছর মহাসড়ক সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়, টোল আদায়ের মাধ্যমে তা উঠে আসবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপরও আর্থিক চাপ কমবে। এখানে বিশেষভাবে বলা দরকার যে, যানবাহন মালিকদের আরো নানাভাবে কর-শুল্ক দিতে হয়। তারপরও তাদের সড়ক-মহাসড়কে বিভিন্ন বিড়ম্বনা ও ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এটা প্রত্যাশিত নয়। সড়ক-মহাসড়ক অবশ্যই নির্বিঘ্ন করতে হবে। মহাসড়ককে মহাসড়কের বৈশিষ্ট্যে রূপ দিতে হবে। দক্ষ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। সড়কে যানবাহনের ধরণ অনুযায়ী লেন ও গতি ঠিক করে দিতে হবে। স্পিডোমিটারসহ ওজন মাপার যন্ত্র বসাতে হবে। অতিরিক্ত ওজনের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমাদের দেশের ওপর দিয়ে ভারতীয় অতিরিক্ত ওজনের যানবাহন চলাচল করে। এসব যানবাহন চলাচলের কারণে সড়ক-মহাসড়কের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। এক্ষেত্রে টোল আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী করতে হবে। এ বিষয়টির প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত নজর দিতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন