ময়মনসিংহে এক কোটিপতি অফিস সহকারিকে নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এনিয়ে গঠিত হয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। তাঁর নাম মো: জাকির হোসেন (৪৮)। তিনি ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেট (মুদ্রাক্ষরিক)।
কর্মক্ষেত্রে তিনি অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেট হলেও ব্যক্তি জীবনে তিনি অটেল সম্পদের মালিক বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁর রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ী, ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার, বিশাল জায়গাজুড়ে একাধিক মৎস খামার, শহরে ও গ্রামে নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এমন দাবি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, ১৯৯১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরঈশ্বরদিয়া গ্রামের মৃত হাছেন আলীর ছেলে মো: জাকির হোসেন স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন।
এরপর তিনি ১৯৯৭ সালের ২৪ আগষ্ট বিধি লঙ্গন করে অফিস সহকারি কাম মুদ্রাক্ষরিক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। যা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের নিয়োগ বিধির লঙ্গন বলে এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, পদোন্নতি পেয়ে জাকির হোসেন জেলার স্বাস্থ্য সেক্টরে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। এই প্রভাব খাটিয়ে তিনি জেলার ক্লিনিক, ডায়গনোস্ট্রিক সেন্টার ও বেসরকারী হাসপাতালের লাইসেন্স ও নবায়ন প্রদানে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন।
সেই সাথে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে হাসপাতালের জখমী রির্পোট বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ধরনের অভিযোগে জাকির হোসেনর বিরুদ্ধে সিআইডি পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি মামলাও আদালতে বিচারাধীন আছে বলেও জানা গেছে। এছাড়াও অফিস সহকারি জাকির হোসেনের কাছ থেকে ঘুষের টাকা ফেরত চেয়ে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে একাধিক ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ করেছেন বলেও নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র।
ফলে এ সংক্রান্ত এক লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিন করে তৎকালীন সিভিল সার্জন। ওই তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে দ্বায়িত্ব পান ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: জায়েদ মাহবুব খান।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্রের সহকারি সার্জন ডা: মেহেদী হান্নান ও ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্রের আইএমও ডা: প্রণেশ চন্দ্র পন্ডিত। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সে সময় ওই তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।
সর্বশেষ চলতি বছরের গত ২২ জুন এক চিঠিতে ফের তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বর্তমান সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান ডা: জায়েদ মাহবুব খান জানান, অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেট মো: জাকির হোসেন দুর্নীতির মাধ্যমে বিলাসবহুল বাড়ী-গাড়ী ও কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন মর্মে লিখিত অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স প্রদানেও তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে আগামী ৫ জুলাই অফিস সহকারি জাকির হোসেনকে জেলা সির্ভিল সার্জন কার্যালয়ে তদন্ত বোর্ডের সামনে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত শেষে যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন দাখিল করা হবে জানিয়ে ডা: জায়েদ মাহবুব খান আরও বলেন, অনুসন্ধানে প্রয়োজনে অভিযোগের অধিকরত তদন্তও হতে পারে। তবে এবিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মো: জাকির হোসেন। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে পত্রিকায় একটি মিথ্যা রির্পোট হয়েছিল। এ ঘটনায় আমি মামলা দায়ের করেছি। ওই মামলার তদন্তে এসব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়াও আমার কি সম্পদ আছে তাও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। এখন তদন্ত হলে, হোক।
এ সময় পদোন্নতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সারা দেশের ন্যায় ময়মনসিংহ থেকে আমিসহ দুইজন গার্ড থেকে পদোন্নতি পেয়ে অফিস সহকারি কাম মুদ্রাক্ষরিক হয়েছি। যোগ্যতা না থাকলে এটা হতো না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন