অনলাইনে ঘরে বসে নিত্যপ্রয়োজনীয়সহ এমন কোনো পণ্য নেই যা কেনা যায় না। বিভিন্ন অনলাইন প্রতিষ্ঠান ক্রয়কৃত পণ্য ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে। বাজার বা মার্কেটের ঝক্কি এড়াতে অনেকে এখন অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে অনলাইন হাট চালু হচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির উদ্যোগ নেয় রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন। আজ সরকারিভাবে ডিজিটাল পশুর হাট উদ্বোধন করা হবে। ডিজিটালহাট ডট গভ.বিডি ওয়েবসাইট থেকে কোরবানির পশু কেনা-বেচা যাবে। এছাড়া বেসরকারিভাবে বিক্রয় ডটকম, বেঙ্গল মিট, দারাজ গরুর হাট, প্রিয়শপ, দেশি গরু, মাদল, হেক্সা ট্রেডিং, ই-বাজার, অথবা ডটকম, আজকের ডিল ইত্যাদি অনলাইন হাট থেকে পশু কেনা যাবে। এবারের ডিজিটাল হাটে ই-ক্যাব ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন অনুমোদিত খামারিরা পশু বিক্রি করতে পারবে। ডিজিটাল হাটের পাশাপাশি রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের পরিচালনায় এবার ১৭টি অস্থায়ী এবং চট্টগ্রাম শহরে ৭টি পশুর হাট বসবে। এছাড়া অন্যান্য বিভাগ ও জেলা শহর থেকে শুরু করে আরও অসংখ্য হাট বসবে।
কোরবানির গরু হাটে গিয়ে কেনা আমাদের দেশের ঐতিহ্য। যারা কোরবানি দেন, তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে পশু কিনতে হাটে যান। দরদাম করে পশু কিনে বাড়ি ফেরার মধ্যে আনন্দ রয়েছে। এতে এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। করোনার কারণে দুই বছর তাতে ভাটা পড়ে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সিটি করপোরেশন অনলাইন হাট চালু করে। ক্রেতার ক্রয়কৃত গরু সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় জবাই করে গোশত বাসায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করে। পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন অনলাইন প্রতিষ্ঠানও একই ব্যবস্থা নেয়। ডিজিটাল হাটের মাধ্যমে পশু কিনতে পারার সুবিধার কারণে অনেকের হাটে যেতে হয়নি। ডিজিটালের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে বসা হাটেও কোরবানির পশু বিক্রি বরাবরের মতোই ব্যাপক ছিল। অনেক হাটে পশু সংকট দেখা দেয়। এবারও ডিজিটাল হাট চালু করা হচ্ছে এবং এর পরিসরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে হাটে যাওয়া এবং দরদাম করার মতো শারীরিক ও মানসিক চাপ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। অনলাইনগুলোতে পশুর ছবি, বর্ণনা ও দাম উল্লেখ থাকবে। ক্রেতারা পছন্দের পশু বাছাই করে কিনতে পারবেন। সরাসরি দেখে কেনারও ব্যবস্থা রয়েছে। কেউ চাইলে পশু কোরবানি দিয়ে গোশত বাসায় পৌঁছে দেবে। অস্বীকার করার উপায় নেই, ডিজিটাল হাট পশু কেনা-বেচার কাজটি সহজ করে দিয়েছে। তবে সরাসরি হাটে গিয়ে দেখেশুনে দামাদামি করে পশু কিনে বাড়ি ফেরার যে আনন্দ, তা খুব কম থাকে। আবার প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। অনলাইনের সুযোগে অনেক প্রতারক আলাদা পেজ খুলে পশুর অকর্ষণীয় ছবি এবং প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্য লিখে মানুষকে প্রলুব্ধ করে। তাদের এই প্রতারণার ফাঁদে অনেকে পড়ে প্রতারণার শিকার হয়। এমনকি অনেক গ্রামের বিক্রেতারাও পশু বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার হয়।
ডিজিটালি কোরবানির হাট একটি ভালো উদ্যোগ। সরকারি-বেসরকারি এ উদ্যোগের সম্প্রসারণের পাশাপাশি খোলা জায়গার হাটের শৃঙ্খলাও বজায় রাখা জরুরি। ডিজিটাল হাটের মাধ্যমে যাতে ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ প্রতারিত না হয়, এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদারকি ব্যবস্থা করতে হবে। ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে, যাতে ক্রেতা ও বিক্রেতা কেউই লোকসানের মধ্যে না পড়ে। ডিজিটাল হাটের সমস্যা হচ্ছে, এ হাটে প্রতারণার শিকার হওয়ার আশঙ্কা আছে। বলা বাহুল্য, কেউ প্রতারিত হলে আস্থা হারিয়ে ফেলে। এর বদনাম পুরো ডিজিটাল মাধ্যমে পড়ে। ইতোমধ্যে আমরা বড় বড় অনলাইন প্রতিষ্ঠানের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড দেখেছি। এ ধরনের প্রতারণা গ্রাহকদের মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি করেছে। ফলে ডিজিটাল পশুর হাট নিয়ে যাতে এমন কোনো ঘটনা না ঘটে, যাতে ক্রেতারা আস্থা হারিয়ে ফেলে। অন্যদিকে, খোলা জায়গার হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জাল নোটের ব্যবহার বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যারা ডিজিটাল প্রতিষ্ঠানের কাছে পশু বিক্রি করবেন, তাদের সতর্ক হতে হবে। প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদিত কিনা, এর প্রতি আস্থা রাখা যায় কিনা ইত্যাদি তথ্য ভালো করে যাচাই করে নিতে হবে। কোরবানি দিতে ইচ্ছুকদের সতর্ক থাকতে হবে। ভুয়া পেজের প্রচার-প্রচারণায় প্রলুব্ধ না হয়ে সরকারি এবং প্রতিষ্ঠিত ও বিশ্বাসযোগ্য বেসরকারি অনলাইনের হাট থেকে পশু কিনতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন