পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় কুয়াকাটায় পর্যটকের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সেইসাথে বাড়বে পর্যটন নির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য। এমনটাই মনে করছেন কুয়াকাটা পর্যটনের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা। পর্যটকরা ধীরে ধীরে দক্ষিণমুখী হচ্ছে। পদ্মা সেতু চালুর পর কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের যাতে দ্রুত এবং মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করা যায়, এ নিয়ে প্রস্ততি চলছে কুয়াকাটা পর্যটন নির্ভর ব্যবসায়ীদের মাঝে। পদ্মা সেতুর চালু হওয়ায় ইতোমধ্যে কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল ও খাবার হোটেলগুলোকে ধুয়ে মুছে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ শুরু করা হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়াকে দক্ষিণের জনপদের জন্য আশির্বাদ এবং অর্থনীতির দিক পরিবর্তনকারী হিসেবে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, কুয়াকাটায় ছোট-বড় ১৬০টির মতো আবাসিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। সকল হোটেল মালিকের ব্যাংক ঋণ রয়েছে। প্রত্যেক মাসেই ঋণের কিস্তির টাকা গুনতে হয়। করোনাকালীন এ সময়টায় পুরো ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছিল। সে সময় অনেকেই ধার-দেনা করে অথবা অন্যভাবে অর্থ জোগাড় করে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেছেন। তবে সবাই তাও পারেনি। যারা পারেনি তাদের ঋণের সুদ চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েছে। প্রত্যেকটি হোটেলের মালিকই বড় রকমের আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। টাকার অংকে হিসাব করলে করোনাকালীন ওই দ্ইু বছরে কুয়াকাটার হোটেল ব্যবসায়ীদের কমপক্ষে দুইশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া শুটকি ব্যবসা, মাছের ব্যবসা, শামুক-ঝিনুকের দোকান, খাবার হোটেল, বিনোদন, ফটোগ্রাফার, মোটরসাইকেল ও ভ্যানচালক, অটোচালক, সৈকতের ছাতা-বেঞ্চ ব্যবসায়ী, চা-পানের দোকানদার, চটপটি বিক্রেতা, ট্যুর অপারেটরসহ পর্যটন কেন্দ্রীক সকল ব্যবসা মিলিয়ে করোনাকালীন এ সময়ে অন্তত দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট এলাকার ঝিনুক ব্যবসায়ী মো. জাহিদ হোসেন জানান, পদ্মা সেতু আমাগো দক্ষিণের মানুষের লাইগ্যা আশির্বাদ। সবচেয়ে কুয়াকাটা পর্যটন এতে উপকৃত হবে। গত দুই বছর করোনা, ঘূর্ণিঝড়সহ নানা কারণে আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন আবার দোকানপাট শুরু করেছি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় মানুষজনের আনাগোনা বাড়ছে, তাতে বেচাকেনাও বাড়ছে।
অভিজাত ব্যবসায়ী হানিমুন ফ্যাশনের মালিক সাজিদ রহমান জানান, কুয়াকাটার মধ্যে বড় দোকান আমার। দোকান খরচ, কর্মচারীর বেতনসহ সব মিলাইয়া মাসে লাখ টাকার উপরে খরচ আছে। বিগত সময়গুলোতে খালি লোকসানই গুনছি। তবে বিপদ কাটার পর সুদিন আসবে, এটা মনে করছিলাম। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আমাগো সেই সুদিন ফিরছে। সামনে সব ক্ষতি কাটাইয়া উঠতে পারমু মনে হচ্ছে।
খাবার হোটেলের ব্যবসায়ী মো. ফারক মিয়া জানান, মোরা প্রতিদিন দৈনিক ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বিক্রি করতাম। বেচাকেনা না থাহনে বয়-বেয়ারা ছুটি দিয়া দিছিলাম। অ্যাহন আবার পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় হোটেল চালানোর লাইগা কর্মচারী জোগাড় করছি। কুয়াকাটায় প্রচণ্ড ভিড় বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, ঘূর্ণিঝড়, দৈব-দুর্বিপাকের কারণে গত কয়েক বছর ধরে কুয়াকাটার ব্যবসায়ীরা এমনিতেই লোকসান গুনছেন। তার ওপর করোনা পরিস্থিতির কারণে কুয়াকাটার ব্যবসা-বাণিজ্য একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় কুয়াকাটার প্রতি মানুষের ভ্রমণের আকর্ষণ বাড়ছে। এর কারণ হলো যাতায়াত সহজ হয়ে গেছে। ফেরির বিড়ম্বনা নেই। বিলাসবহুল গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে। অনেকে ব্যক্তিগত যানবাহনে সাচ্ছন্দ্যে অল্প সময়ে কুয়াকাটায় চলে আসতেছে। এতে কুয়াকাটার দ্বারও নতুনভাবে উন্মোচন হয়েছে। কুয়াকাটা আবার জেগে উঠেছে সরূপে, স্থানীয় এ জনপ্রতিনিধি আরো বলেন, কুয়াকাটায় মানুষের ভিড় বাড়ছে তাই আমরা সৈকতসহ পাশ্ববর্তী এলাকা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করেছি। কুয়াকাটা পর্যটনকে যাতে একটা সেবার জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়, সে চিন্তা আমাদের রয়েছে। আমরা সেভাবেই কুয়াকাটাকে ঢেলে সাঁজাচ্ছি।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, কুয়াকাটাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান কার্যকরে পরিকল্পনা মন্ত্রাণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছি, সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে কুয়াকাটা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন নিয়ে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন