শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বন্যায় ডুবন্ত সিলেটবাসীর নতুন আপদ লোডশেডিং : মুক্তির নেই কোন সুনির্দিষ্ট ধারনাও!

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০২২, ৪:২০ পিএম

ভয়াবহ বন্যায় এমনিতেই দূর্বিষহ জীবন পার করছে সিলেটের মানুষ। এবার মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। শহর থেকে গ্রাম, সবখানে ভয়াবহ লোডশেডিং। তবে বেশি ভোগান্তির শিকার গ্রামীণ জনপদের মানুষ। গ্রামে রাতদিন সমানতালে চলে লোডশেডিং। এছাড়া গরমের জ¦ালা। দিন ১১টায় যেমন বিদ্যুৎ চলে যায় তেমনি রাত ২টায়ও হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। দিন রাত মিলিয়ে প্রায় তিন চারবার লোডশেডিং হচ্ছে সিলেটে। এটা আবার কোনো নির্দিষ্ট এলাকার জন্য নয়। সারা সিলেট বিভাগেরই একই অবস্থা।

শহরের বিভিন্ন এলাকাগুলো পিডিবি’র অধীনে থাকায় অনেকটা রুটিন করে লোডশেডিং করা হয়। তবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধীনে থাকা গ্রামীণ জনপদের মানুষকে কঠিন দুভোর্গ পোহাতে হচ্ছে। গ্রামে ২৪ ঘন্টার বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎহীন থাকে, এমন অভিযোগ বাসিন্দাদের। গত রোববার থেকে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরো বেড়ে গেছে, বলেও জানিয়েছেন গ্রামীণ জনপদের লোকজন।

সূত্রমতে, গ্রামীণ জনপদে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সবখানে লাইন টেনে দিয়েছে। কিন্তু গ্রাহকের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ দিতে পারছে না। এ কারণে লোডশেডিং লেগেই থাকে গ্রামাঞ্চলে।

এমনিতে বন্যার কারণে পক্ষকাল সিলেটের অধিকাংশ গ্রামই নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা থেকে বঞ্চিত ছিল। শুধু বিদ্যুৎ নয় সিলেটের আকাশে সূর্যের দেখাও মিলেনি ২০ দিন। বৃষ্টি কমলে গত ২ জুলাই থেকে প্রখর রোদে পুড়েছে প্রকৃতি, তাপমাত্রাও বেড়েছে। ভ্যাপসা গরমে দুর্বিষহ জনজীবন। এরমধ্যে এসএসসি পরিক্ষারও প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এ অবস্থায় মানুষকে বিপাকে ফেলেছে ভয়াবহন লোডশেডিং।
এছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলা। এ অঞ্চলে বাতাস দিলেই বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে পুরো অঞ্চল। কোনো এলাকায় ৫/৭ দিনও অন্ধকারে থাকতে হয়। বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের মর্জির উপর চলে সরবরাহ, এমন অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। কেবল বন ও পরিবেশ মন্ত্রী এলাকায় অবস্থান করলে সরবরাহ ঠিক থাকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার) থেকে চাহিদার তুলনায় গ্রীড কন্ট্রোল রুম থেকে সরবরাহ কম দেওয়া লোড শেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে। আর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও শিল্প কারখানাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রেখে গ্রাহক পর্যায়ে সঞ্চালন কেন্দ্রগুলোতে কম সরবরাহ দেওয়াতে করতে হচ্ছে লোডশেডিং।

এ বিষয় সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর পরিচালক আব্দুল আহাদ বলেন, গত ২/৩ দিন থেকে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। তবে খুব শিগগিরই গ্রাহক পর্যায়ে এই সমস্যা হবে না বলে আশাবাদি তিনি।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বিতরণ বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, এখন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। তাই ঘাটতি থাকার কারণে বন্ধ রাখতে হচ্ছে ৩৩ হাজার কেভি লাইনও। এ কারণে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জে ৫ লাখ গ্রাহকের চাহিদা পিক আওয়ারে ৪৫০ এবং অফপিক আওয়ারে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সে তুলনায় কম রয়েছে সরবরাহ। এছাড়া তিনি বলেন, লোডশেডিংয়ের এই সমস্যা কেবল সিলেটে নয়, দেশের সবখানে। জ্বালানি সংকটের কারণে তেলের যে পাওয়ার স্টেশনগেুলো পুরোপুরি বন্ধ। সিলেটের কুমারগাও এইচ.এফ ফুয়েলে চলা ৫০ মেগাওয়াট আগে থেকে বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে সিলেটে প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে জাতীয় গ্রীডে যায়। সেখান থেকে চাহিদার বিপরীতে বন্টন করা হয়।

জানা গেছে, দেশে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ১৬ হাজার মেগাওয়াট গ্যাস ভিত্তিক। আর ২০ হাজার মেগাওয়াট হলেও জেনারেশনে থাকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট।

ফেঞ্চুগঞ্জ বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্র ৪৮ মেঘাওয়াট চাহিদার বিপরীতে গতকাল সোমবার ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে জাতীয় গ্রীড নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এদিন সকালে সরবরাহ ছিল ১৫ মেঘাওয়াট।
সঞ্চালন কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টরা জানান, চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ সরবরাহ কম থাকলেও আনব্যালেন্সড হয়ে পড়ে। তখন বিদ্যুৎ আপ-ডাউন করে।
৯০ মেগাওয়াটের দু’টি বিদ্যুৎ উৎপান কেন্দ্র রয়েছে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে। এর একটি উৎপাদনে আছে। অন্যটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া কুশিয়ারা ম্যাক্স পাওয়ার প্লান্ট ১৭০ মেগাওয়াট, বারাকাতউল্লাহ ডায়নামিক পাওয়ার প্ল্যান্ট ৫১ মেগাওয়াট, হোসাফ এনাটিক প্রিমা ২০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করে। এর বাইরে সিলেটের কুমারগাও পিডিবি’র ১৫০ ও ৫০ এবং হোসাফের ৫০ মেঘাওয়াট এবং শাহজিবাজারে ৪০০ মেগাওয়াট, বিবিয়ানায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে জাতীয় গ্রীডে যায়। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অধিকাংশ গ্যাস ও এইচ.এফ ফুয়েল ভিত্তিক। এই জ্বালানী বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ইউক্রেন যুদ্ধের পর তেল সংকট দেখা দিয়েছে। তাই তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এতে প্রায় ১৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে বিবিয়ানা গ্যাস প্ল্যান্ট সাটডাউনে আছে তাই গ্যাসের চাপ কম। এজন্য গ্যাসের যে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আছে সেগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে প্রায় সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদার চেয়ে ১৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হচ্ছে। এই ঘাটতি পূরণ করতে সারা দেশে লোড ভাগ করে দিয়েছে ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার (এনএলডিসি)।

সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সূত্রে জানা যায়, তেল ও গ্যাস সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। তাই সারা দেশেই লোডশেডিং করতে বলা হয়েছে। সিলেটে ৫০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে বলা হয়েছে এনএলডিসি থেকে। তাই পিক আওয়ারে লোডশেডিং হবে। এই লোডশেডিং সিলেট কুমারগাও গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে কন্ট্রোল করা হয়।
এ ব্যাপারে সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকেই তেল সংকট দেখা দিয়েছে। তেল ক্রয় করতে একটু সময় লাগবে। বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে তেল ক্রয় করার। এই লোডশেডিংয়ের কবল থেকে কবে মুক্তি পাওয়া যাবে সেটা সুনির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না। তবে বিবিয়ানাতে প্ল্যান্ট চালু হয়ে গেলে এই সংকট কিছুটা কাটবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন