দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আবারো আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করছেন, দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ সাপ্তাহিক হিসাব বলছে, বিশ্বে সংক্রমণ বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। এক সপ্তাহে বাংলাদেশে সংক্রমিত ব্যক্তি বেড়েছে ৩৫০ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২২ জুন এই তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২২ জুন সকাল আটটা থেকে ২৩ জুন আটটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৯ হাজার ২১৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৩১৯ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়। পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। অর্থাৎ করোনার উপসর্গ নিয়ে ১০০ জন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করালে ১৪ জনের বেশি মানুষ করোনা রোগী বলে শনাক্ত হচ্ছে। এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৮ জুন মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ২৯ হাজার ১৪৫ জনে। একই সময়ে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৮৭ জনের। এ নিয়ে শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৬৯ হাজার ৩৬১ জনে। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। শনাক্ত,৫৪,৯৯,০৯,০২৫ মৃত্যু, ৬৩,৫২,৪১৫ সুস্থ, ৫২,৫৭,৭২,৮৬৪।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অমিক্রনের নতুন এক সাব-ভ্যারিয়েন্ট দেখা দিয়েছে। এ ভ্যারিয়েন্ট অনেক বেশি সংক্রামক। রাজধানীতে রোগী বেশি। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বিশেষ করে বড় ধরনের জনসমাগম এ সংক্রমণকে দ্রুততর করে তুলতে পারে। তাছাড়া ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে বহু মানুষ বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করবেন। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে না মানলে করোনার নতুন ঢেউয়ের সংক্রমণ অনেক ভয়াবহ হতে পারে। আর হঠাৎ করে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে সবার মধ্যে এক ধরনের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন আর কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। রাস্তায় অনেকেই আর মাস্ক পড়ছে না। সংশ্লিষ্টরাও আরও বলছেন, যারা টিকা নেননি বা এক ডোজ নিয়েছেন তারা বেশিঝুঁকিতে থাকবেন। যারা ২ ডোজ এবং বুস্টার ডোজ নিয়েছেন তাদের ঝুঁকি কিছুটা কম। শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ালে ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে।
এরই মধ্যে সংঘটিত তিনটি করোনার ঢেউ মানুষকে নানাভাবে পর্যদস্ত করেছে। দেশের অর্থনীতি ও অগ্রগতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এই অবস্থায় করোনা চতুর্থ ঢেউ বড় ধরনের সমস্যার কারণ হবে তা স্পষ্ট। সংগত কারণেই আগের অভিজ্ঞতার আলোকে চতুর্থ ঢেউ কীভাবে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি সংক্রমণের ধরন বিশ্লেষণ করা। এ ধরন সম্পর্কে জানতে পারলে জানা যাবে, এটি আমাদের কতটুকু ক্ষতি করতে পারে। এ ধরনের ঝুঁকি কতটা তীব্র হতে পারে, কত দ্রুত এটি ছড়াবে। এসব জানলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। আর মানুষকে টিকা নিতে উৎসাহিত করতে হবে। আবার যদি দেখা যায়, বুস্টার নেওয়ার পরও মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, সে ক্ষেত্রে ‘আইসোলেশন’ ও মাস্ক পরার ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি জোরালো করতে হবে। সবার জন্য মাস্ক বাধ্যতামূলক করতে হবে। কোনো ধরনের শৈথল্য প্রত্যাশিত নয়। এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ২০২০ সালের চিকিৎসায় বিশেষ কোন ঔষধ বা প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয় নাই বিধায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটাকে মহামারি হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। বাংলাদেশ সরকারও করোনা ভাইরাস মহামারি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে যথাপ্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
বিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। তাই সবসময় সচেতন থাকুন ও বাড়ির বাচ্চাদের খেয়াল রাখুন এবং যত্ন নিন। প্রকৃত অর্থে ১৯৬০ সালের দিকে মুরগীর সংক্রামক রোগের ভাইরাস হিসেবে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছিল। তবে এরপর মানবদেহে হওয়া সাধারণ সর্দি কাশিতেওকরোনাভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। মানবদেহে পাওয়া সাতটি করোনাভাইরাস হচ্ছে, হিউম্যান করোনাভাইরাস ২২৯ই এবং হিউম্যান করোনাভাইরাস ওসি৪৩, এনএল ৬৩, এইচকিউ ওয়ান, সার্স, মার্স,এবং নভেল,করোনাভাইরাস, করোনাভাইরাসগুলোর মধ্যে প্রথম তিনটি মারাত্মক না হলেও পরের চারটি মানুষের জন্য গুরুতর পরিণতি বয়ে আনতে পারে। করোনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে তান্ডব। প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এই করোনা নিয়ে মানুষের জানার শেষ নেই। তবুও এমন অনেক তথ্য আছে যা এখনো অজানা। সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে বিপুল আতঙ্ক তৈরি করেছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। আর জীবনকে সফল করতে চাই নানামুখী পদক্ষেপ। মানুষের জীবনে স্বপ্নের হাত ধরেই সফলতার জাগরণ সৃষ্টি হয় আর সৎ কর্মের মাধ্যমে মানুষ সফলতার দেখা পায় বা সার্থক হয় জীবন। জীবনের এ সফলতার পিছনে ছুটতে আপনার প্রথম শক্তি হচ্ছে স্বাস্থ্য। প্রবাদে আছে ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।
করোনা ভাইরাস একটি সংক্রামক ভাইরাস। এটির সংক্রমনে জ্বর, কাশি, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেয়। অবস্থা মারাত্মক হলে নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে, এমনকি শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে রোগী মারা যেতে পারে। তবে ১৮ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে এর আক্রমন কম। বয়স্ক রোগী যারা ইতিমধ্যে ডায়াবেটিস, হাঁপানী, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারী ডিজিজ, ইমফাইসেমা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত তাদের মধ্যে মৃত্যু ঝুঁকি বেশি, যে সব লোক মারা গেছে তারা এসব রোগে আক্রান্ত ছিল।
সাধারণ লক্ষণঃ- জ্বর, কাশি,শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষণ। সাধারণত শুষ্ক কাশি ও জ্বরের মাধ্যমেই শুরু হয় উপসর্গ, পরে শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত রোগের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচ দিন সময় নেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ভাইরাসটির ইনকিউবেশন পিরিয়ড ১৪দিন পর্যন্ত হতে পারে। আমরা যখন নতুন কোনো করোনাভাইরাস দেখি, তখন আমরা জানতে চাই এর লক্ষ্মণগুলো কতটা মারাত্মক।
জটিল লক্ষণ প্রকাশঃ-
জ্বর দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়, এরপরে শুকনো কাশি দেখা দিতে পারে। প্রায় এক সপ্তাহ পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়। এখন পর্যন্ত এই রোগে মারা যাওয়ার হার কম (১% থেকে ২% এর মধ্যে) - তবে এই পরিসংখ্যান পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য নয়। ইউরোপের কোন কোন অঞ্চলে এখন অধিক মৃত্যুহারও দেখা যাচ্ছে। ৫৬ হাজার আক্রান্ত রোগীর উপর চালানো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে: এই রোগে ৬% কঠিনভাবে অসুস্থ হয় - তাদের ফুসফুস বিকল হওয়া, সেপটিক শক, অঙ্গ বৈকল্য এবং মৃত্যুর সম্ভাবনা তৈরি হয়। ১৪% এর মধ্যে তীব্রভাবে উপসর্গ দেখা যায়। তাদের মূলত শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা তৈরি হয়। ৮০% এর মধ্যে হালকা উপসর্গ দেখা যায় - জ্বর এবং কাশি ছাড়াও কারো কারো নিউমোনিয়ার উপসর্গ দেখা যেতে পারে। বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের কোনো ধরণের অসুস্থতা রয়েছে (অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ) তাদের মারাত্মক অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চীন থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই করে জানা যায় যে, এই রোগে নারীদের চেয়ে পুরুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা সামান্য বেশি। আক্রান্ত ব্যক্তি যেন শ্বাস প্রশ্বাসে সহায়তা পায় এবং তার দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যেন ভাইরাসের মোকাবেলা করতে পারে তা নিশ্চিত করাই থাকে চিকিৎসকদের উদ্দেশ্য।
পরামর্শঃ-
* মাঝে মাঝে সাবান-পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া* হাত না ধুয়ে মুখ, চোখ ও নাক স্পর্শ না করা।
* হাঁচি কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখা* ঠান্ডা বা ফ্লু আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে না মেশা* মাংস ও ডিম খুব ভালোভাবে রান্না করা* বন্য জীবজন্তু কিংবা গৃহপালিত পশুকে খালি হাতে স্পর্শ না করা* ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় যেকোনো খবরের জন্য একটি দারুণ প্রতীকী ছবি হচ্ছে মাস্ক বা মুখোশ পরা কোন মানুষের মুখচ্ছবি। বিশ্বের সব দেশেই সংক্রমণ ঠেকানোর একটি জনপ্রিয় ব্যবস্থাহচ্ছে মাস্ক ব্যবহার।
যেকোনো রকম জনসমাগম, উৎসব, অনুষ্ঠান, ভিড় এড়িয়ে চলুন। উৎসব অনুষ্ঠান করতেই হলে সীমিত পরিসরে অল্পসংখ্যক মানুষকে নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
মোবাইল: ০১৮২২৮৬৯৩৮৯
ইমেইল: drmazed689@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন