ঈদে লাখো মানুষের ঘরে ফেরার চাপ সামলাতে প্রতি বছরই গণপরিবহণে বড় ধরণের চাপ সৃষ্টি হয়। যেনতেন প্রকারে ঘরে ফেরার প্রতিযোগিতা এবং গণপরিবহণ মালিকদের মওসুমি মুনাফাবাজির খপ্পরে পড়ে প্রায়শ: ঘরে ফেরার আনন্দটুকু দুর্ভোগ ও বিষাদে পরিনত হয়। মহাসড়কে চাঁদাবাজি, গরুর হাটসহ নানাবিধ বিড়ম্বনা ও অব্যবস্থাপনার কারণে দীর্ঘ যানজট ও দুর্ঘটনার শিকার হয় ঘরমুখো মানুষ। এবার ঈদের আগে দেশের গর্বের স্থাপনা পদ্মাসেতু উদ্বোধন হওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যুগ যুগের বিড়ম্বনা-দুর্ভোগের অনেকটাই অবসান ঘটেছে। পদ্মার মাওয়া ফেরিঘাটে ফেরির জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে অপেক্ষা, দুইপাড়ে হাজার বাস, গরুবাহী ট্রাক, কভার্ডভ্যান ও প্রাইভেট কারের কয়েক কিলোমিটার লম্বা সারির অনিশ্চিত অপেক্ষার চিত্র এখন ইতিহাস। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চলাচলে পদ্মাসেতুর প্রত্যাশিত ইতিবাচক ভ’মিকা দেশের অন্যান্য মহাসড়কেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ঈদের আর মাত্র দুইদিন বাকি, রাজধানীসহ দেশের সব পশুর হাটে পর্যাপ্ত সংখ্যক পশুর সমাগম দেখা যাচ্ছে। গতবছর বা অন্য বছরের তুলনায় এবার পথে পথে চাঁদাবাজিসহ বিড়ম্বনার অভিযোগ কম শোনা যাচ্ছে। ঈদের এই সময়ে মহাসড়কে মটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞায় কিছুটা স্বস্তি এবং ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম ,ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা- টাঙ্গাইল মহাসড়কে গত বুধবার যানবাহনের অস্বাভাবিক চাপ ও দিনভর দীর্ঘ যানজটের খবর পাওয়া গেছে। ঈদের আগে এসব মহাসড়কে যানজট-বিড়ম্বনা কোনো নতুন বিষয় নয়। তবে সময়ের চেয়ে জীবনের নিরাপত্তা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মহাসড়কে ৪-৫ ঘন্টার পথ অতিক্রম করতে গিয়ে ১০-১২ ঘন্টা রাস্তায় যানবাহনে বসে থাকার ভোগান্তি যেমন প্রত্যাশিত নয়, তেমনি অদক্ষ চালকদের বেপরোয়া গাড়ী চালনার শিকার হয়ে রাস্তায় দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার বাস্তবতাও মেনে নেয়া যায়না। হাইওয়েতে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে নিয়োজিত হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা কোথাও তেমন দৃশ্যগ্রাহ্য নয়। লাইসেন্সহীন অবৈধ গাড়ি চালকদের আনফিট গাড়ি বেপরোয়াভাবে চালনার দায় নিতে হয় অসচেতন যাত্রীদের। ঈদের আগে মহাসড়কের ভাঙ্গাচোরা মেরামত, রাস্তায় অবৈধ হাটবাজার ও দখলবাজি-চাঁদাবাজি নিয়ে অনেক কথা বলা হলেও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে যথাযথ পদক্ষেপ ও ইতিবাচক পরিবর্তন খুব একটা দেখা যায়না। এবার হয়তো সে অবস্থার কিছুটা হলেও পরিবর্তন ঘটতে চলেছে। পদ্মাসেতুর কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলকারী নৌযানগুলোর উপর চাপ অনেকটা কমে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। আবহাওয়া ভাল থাকায় অনেকে আয়েশ করে লঞ্চ-ইস্টিমারে ঘরে ফিরতে চাইলে ভ্রমণ আগের চেয়ে আরামদায়ক ও নিরাপদ হবে বলে আশা করা যায়।
ঈদযাত্রার প্রথমদিনে রেলওয়ের শিডিউল বিপর্যয়ের খবর পাওয়া গেলেও ইতোমধ্যে তার উন্নতি ঘটেছে। ঈদযাত্রা আগের চেয়ে নির্ঝঞ্জাট ও নিরাপদ হলেও ঈদের আগে সারাদেশে অস্বাভাবিক বিদ্যুত বিভ্রাট ঈদের সময়ে অব্যাহত থাকলে তা ঈদের আনন্দকে দুর্ভোগে পরিনত করতে পারে। বিশেষত ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে বিদ্যুতহীন থাকলে রেফ্রিজারেটরে কুরবানির গোশত সংরক্ষণ ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। পশুর হাটে প্রতারক, নকল-নোটের কারবারি এবং মলমপার্টিসহ সংঘবদ্ধ অপরাধিদের নানাবিধ অবৈধ তৎপরতার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তীক্ষ্ম নজরদারি থাকতে হবে। শহরের বাসা-বাড়ী তালাবদ্ধ করে গ্রামে চলে যাওয়ার পর খালি বাড়ী বা ফ্ল্যাটের নিরাপত্তায় যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সামাজিকভাবে নজরদারি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা আবশ্যক। একইভাবে গ্রামেও বাড়তি নিরাপত্তার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকলকে ভাবতে হবে। এবারের ঈদে জাতি একটি ক্রান্তিকালীন সময় পার করছে। একদিকে সিলেট ও উত্তরাঞ্চলে বন্যা অন্যদিকে করোনা মহামারি উত্তর ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে আমরা বৈশ্বিক সংকটের সম্মুখীন। এহেন জটিল পরিস্থিতিতে আমাদের আরো সতর্ক, সহিষ্ণু এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব বাড়াতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণপরিবহনের মালিক, চালক-হেল্পার ও যাত্রীসাধারণের সচেতন- দায়িত্বশীল ভ’মিকায় ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হোক, এই প্রত্যাশা আমাদের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন