দফায় দফায় বন্যার ছোবলে বিপর্যস্ত হাওরবাসীর পুর্নবাসন এখন সবচেয়ে জরুরি। অথচ এ দিকে সংশ্লিষ্টদের কোন নজর নেই। সরকারের পক্ষ থেকে সিলেট সুনামগঞ্জের বানভাসিদের জন্য মাত্র ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ দুই জেলায় ১০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে এ সহায়তা দেওয়া হবে। তবে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র মতে সিলেট ও সুনামগঞ্জে লক্ষাধিক পরিবার ঘরবাড়ি সব হারিয়ে নি:স্ব হয়েছে। সে হিসাবে সরকারি বরাদ্দ খুবই সামন্য। এই অল্প বরাদ্দ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন পুর্নবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারছে না। হাওর এলাকার বানভাসিদের পুর্নবাসনে প্রয়োজন সরকারি ঋণ সহায়তা ও প্রণোদনা।
এপ্রিলের শুরুতে আগাম বন্যায় সারা-বছরের আশা ভরসা বোরো ফসল হারিয়ে হাওরবাসীর সর্বনাশের শুরু। মে মাসের মাঝামাঝি বন্যায় ঘরবাড়ি ডুবে আবারও বিপর্যয়। এরপর তৃতীয় দফায় জুনের মাঝামাঝি বন্যায় ভেসে গেছে সবই। বন্যার পানি নেমে গেলেও এর ক্ষত সর্বত্রই রয়ে গেছে। এর মধ্যে সবহারা নি:স্ব মানুষগুলো ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। কিন্তু তাদের অনেকেরই মাথাগুঁজার আশ্রয় টুকু নেই। বানের স্রোতে ঘরবাড়ি সব ভেসে গেছে। পড়ে আছে শুধু শূন্য ভিটেটা। এর মধ্যে এবার ঘর মেরামত আর জীবন-জীবিকায় ফেরার নতু করে যুদ্ধ শুরু হবে তাদের। শুধু ঘরবাড়ি নয় হাওরবাসী হারিয়েছেন মাঠের ফসল থেকে পুকুর বা খাবারের মাছ, হাঁস-মুরগি, গবাদিপশুর খামার সবই। অনেকের ব্যাংকে ঋণ আছে। সরকারি ঋণ, প্রণোদনা না পেলে এসব চাষি ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না।
সুনামগঞ্জের বানভাসিরা বলছেন, তাঁদের বিপদে সরকারের পাশাপাশি সারা দেশের মানুষ ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু ত্রাণসামগ্রী দিয়ে তো জীবন চলবে না। এখন পুনর্বাসনের জন্য দরকার আর্থিক সহায়তা।
বন্যায় সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষ, ৪৫ হাজার ২৮৮টি ঘর ও ২ হাজার ২০০ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৫ হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। আট হাজারের বেশি একর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। গোলার ধান ভেসে গেছে। প্রায় দুই হাজার একর জমির সবজি ডুবে গেছে। গবাদিপশু মারা গেছে ১ হাজার ৭০০টি। আর হাঁস-মুরগি হারিয়ে গেছে ১ লাখ ২৬ হাজার। সে হিসাবে এ জেলায় সরকারি বরাদ্দ মাত্র ৫ কোটি টাকা যা একেবারেই নগন্য।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, ভয়াবহ বন্যায় সিলেট বিভাগে কেবল কৃষি খাতে যে ক্ষতি হয়েছে তার আর্থিক মূল্য ১ হাজার ১১৩ কোটি ৮৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে রয়েছে বোরো ও আউশের বীজতলা নষ্ট হওয়া, আউশের ফলন, বোনা আমন ও সবজি চাষের ক্ষতি। বিভাগে মোট ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৪ লাখ ২৯ হাজার ৪০১।
এদিকে হাকালুকি হাওর এলাকায় কখনো রোদ, কখনো বৃষ্টি হচ্ছে। তবে গত মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টি হওয়ায় পানি বাড়তে শুরু করেছে হাকালুকি হাওর অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলাগুলোয়। বৃষ্টি হলেই বাড়ে দুর্ভোগ। অনেক বাড়িতে এখনো পানি জমে আছে। গতকাল ভোরেও বৃষ্টি হয়েছে। এতে জনদুর্ভোগ আরও বেড়েছে। দেশে বন্যায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১২ জনে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে সিলেট বিভাগে। বন্যাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৫৫৯ জনে। বন্যার শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ১৬২ জন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন