শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

কোরবানির বর্জ্য যথাযথভাবে দ্রুত অপসারণ করতে হবে

আর কে চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০২২, ১২:০১ এএম

মুসলমানদের দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের একটি পবিত্র ঈদুল আজহা। এ ঈদের অন্যতম অনুষঙ্গ পশু কোরবানি। ঈমানদারদের পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর ছেলে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পবিত্র স্মৃতি জড়িত ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহা এমন এক উৎসব ও ইবাদত, যা সংঘাতময় বিশ্বে মানব জাতিকে শান্তির পথ দেখাতে পারে।

কোরবানি নিছক পশু জবাই নয়; মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকা পশুত্ব ও অহংবোধ বিসর্জন দিয়ে সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হওয়াই কোরবানির শিক্ষা। এ বিষয়ে আল্লাহর ঘোষণা: পশুর রক্ত বা মাংস নয়, তাঁর কাছে পৌঁছে বান্দার তাকওয়া। সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের উৎস মহান আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী জীবন গড়ার মধ্যেই রয়েছে কোরবানির মাহাত্ম্য। তা উপেক্ষা করে কোরবানির নামে অহংবোধের কোনো সুযোগ নেই। সারাদেশে এখন চলছে ঈদুল আজহার প্রস্তুতি। কোরবানিতে পরিবেশ যাতে দূষিত না হয় সে ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে করোনাকালে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই কোরবানি-সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।

কোরবানি শুধু একটি আনন্দ উৎসব নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা ও দর্শন। ঈদুল আজহা আত্মত্যাগের প্রেরণায় উজ্জীবিত এক অনন্য আনন্দ উৎসব। যে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণ মূর্ত হয় মানুষের জীবনে, তার জন্য চরম ত্যাগ স্বীকারের এক প্রতীকী আচার এই কোরবানি। ঈদুল আজহার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিজের অহমিকা ও উচ্চাভিলাষ উৎসর্গ করা। পশু কোরবানির ভেতর দিয়ে মানুষের ভেতরে থাকা পশুশক্তি, কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি রিপুকে ত্যাগ করা। তাই শুধু পশু নয়, প্রয়োজন পশুত্বের কোরবানি। কোরবানিদাতা শুধু পশুর গলায় ছুরি চালান না, তিনি তাঁর সব কুপ্রবৃত্তির ওপরও ছুরি চালিয়ে তাকে নির্মূল করেন। এটাই হলো কোরবানির মূল শিক্ষা। পশু কোরবানির ক্ষেত্রে এই অনুভূতি অবশ্যই প্রয়োজন।

কোরবানির পরে অবশ্যই করণীয় বিষয়গুলো হচ্ছে; কোরবানির ক্ষেত্রে পশু জবেহ শেষে তার রক্ত ও শরীরের যাবতীয় উচ্ছিষ্ট যথাযথভাবে অপসারণ করা জরুরি। গরু জবাইয়ের গর্তটি মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। গর্তের মধ্যে কিছু চুন বা ব্লিচিং পাউডার বা জীবাণুনাশক পদার্থ দেয়া যেতে পারে। আর আশেপাশে যদি কোনো বর্জ্য থাকে তাহলে তা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এছাড়া রক্ত পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। পশুর দেহ থেকে নাড়িভুঁড়ির উচ্ছিষ্ট বের করে যত্রতত্র ফেলে দিলে তা পচে মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়াবে এবং পরিবেশ দূষিত হয়ে বিভিন্ন রোগ ছড়াবে। তাই যথাযথ স্থানে ফেলতে হবে। যে স্থানটিতে পশু জবাই করা হবে। ওই স্থানটি সম্ভব হলে গরম পানি ঢেলে পরিষ্কার করতে হবে। পানি দিয়ে স্থানটি পরিষ্কার করার পর অবশ্যই ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলে দূর্গন্ধ ছড়াবে না এবং জীবনুমুক্ত হবে।

কোরবানি দাতাদের অবহেলা ও অসচেতনতাই কোরবানির পর পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। কোরবানিদাতারা মনে করেন, কোরবানির পশুর দেহ থেকে চামড়া ছাড়ানো, গোশত সংগ্রহ এবং বন্টনেই তাদের দায়িত্ব শেষ। গোশত ভাগাভাগি কোরবানি দাতার কাজ আর বর্জ্য অপসারণ শুধু সিটি কর্পোরেশনের কাজ, এই ধারণা কিছুতেই ঠিক নয়। বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব তো প্রথমে কোরবানিদাতার। যথাসময়ে বর্জ্য অপসারণে অবহেলা করায় তা প্রতিবেশী, আশপাশের মানুষের কষ্টের কারণ হলে এর দায় কোরবানিদাতাকেই নিতে হবে। যত্রযত্র কোরবানির বর্জ্য ফেলে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়ার অধিকার ইসলাম কাউকেই দেয়নি। প্রতিবেশী, আশপাশের মানুষকে কোনোভাবে কষ্ট দেয়া জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার অন্যতম কারণ।

নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাই সচেতন না হলে শুধু রাষ্ট্রের পক্ষে এ বিশাল বর্জ্য অপসারণ খুবই কঠিন। প্রথমে এ কর্তব্য কোরবানিদাতার। কোরবানির বর্জ্য পরিস্কারের ব্যাপারে অবহেলা ঈমানের দূর্বলতারই প্রমাণ বহন করে। কারণ, ময়লা-আবর্জনা, কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে ফেলাও ঈমানের অন্যতম শাখা।

কোরবানির বর্জ্য কিংবা যে কোনো কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে পরিবেশকে বাসোপযোগী রাখতে সবারই এগিয়ে আসা উচিত। রাস্তাঘাট থেকে কষ্টদায়ক দ্রব্য সরিয়ে নেয়া ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কেউ আবর্জনা ফেলে গেলে সে নিজে গুনাহগার হবে। তবে অন্যদেরও উচিত তা সরাতে এগিয়ে আসা।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন