কুমিল্লার দেবিদ্বারে মাদরাসার সভাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে মেহেদী হাসান শান্ত (১৬) নামের এক যুবক নিহত ও ছুরিকাঘাতে আরো ৪ জন মারাত্মক আহত হয়েছে। গত শনিবার বিকেলে উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মেহেদী হাসান শান্ত একই গ্রামের জাকির হোসেন সরকারের পুত্র। ওই ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাদ্দাম ও মোখলেছ নামের দুই অভিযুক্ত আসামীকে গ্রেফতার করেছে।
এ দিকে গ্রেফতারকৃত আসামী সাদ্দাম ও কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু কাউছার অনিকের মোবাইল ফোন রেকর্ড নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়ায়, এ নিয়ে এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সাদ্দাম ও অনিকের ফোন আলাপের মুল কথা ছিল- আপনি মিটিংয়ে বসে শুধু ডিক্লার দিবেন, আপনি মুখ দিয়া যেটা বলবেন, সেটা বহাল থাকবে। আর কেউ কথা বললে পিডা হবে। ওইযে কইছেন যে কালকে কুরবানি হবে, এই কুরবানির সিষ্টেম হবে মাদরাসার ভিতরে। ফোনালাপটি ঘটনার দিন কোন এক সময়ের বলে দাবি নিহত শান্ত পরিবারের।
স্থানীয় ও মামলা সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার বিকালে উপজেলার ‘নূরপুর শাহ ফাতেমি ইবতেদায়ী হাফেজিয়া নূরানী মাদরাসা ও এতিমখানায় একটি সভা ছিল। সভার পূর্বে নূরপুর গ্রামের আমেরিকা প্রবাসী জসীম উদ্দিনের ছেলে সাজিদের সাথে স্থানীয় সাদ্দাম, আল আমিন, সগির ও বাইজিদের তর্ক হয়। পরে এ নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে তারা। ওই সংঘর্ষে আহত ৫ জনকে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে সন্ধ্যা ৬টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক শান্তকে মৃত ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে রাতেই শান্ত’র বাবা জাকির হোসেন সরকার বাদী হয়ে আল আমিন ও সাদ্দামসহ ২৬ জনকে আসামী করে দেবিদ্বার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। ওই রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার অভিযুক্ত আসামী সাদ্দাম ও মোকলেছকে গ্রেফতার পূর্বক রোববার জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
অপর দিকে ঈদের দিন রোববার বিকালে শান্ত’র নামাজে জানাযায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে হয়ে উঠে প্রতিবাদ মুখর। হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ বিচার চান উপস্থিত মুসল্লিরা। ওই সময় হত্যাকান্ডের ইন্দনদাতা দাবি করে কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু কাউছার অনিককে জানাযার আলোচনায় অংশ নিতে দেয়নি মুসল্লীরা।
মামলার বাদী শান্ত’র বাবা জাকির হোসেন সরকার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমার ছেলের হত্যকারীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় আবু কাউছার অনিক। গত শুক্রবার মসজিদে প্রকাশ্য দিবারোকে আবু কাউছার অনিক বলেন, গরু কোরবারির সাথে মানুষও কোরবানি করবে। তার একদিন পর আমার ছেলেকে অনিকের অনুসারিরা হত্যা করে। তারা আমার ছেলেকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, মামলা তুলে নিতেও হুমকি ধমকি দিচ্ছে। ঈদের দিন সকালে মামলা তুলে নিতে আমাকে জোরপূর্বক দেবিদ্বারে ধরে নিয়ে যায় আবু কাউছার অনিক।
অভিযোগের বিষয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু কাউছার অনিক দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। মামলা তুলতে নয়! মামলা থেকে একজন আসামীর নাম বাদ দিতে গ্রামে ৭-৮ জনের সিদ্ধান্তের কারনে বাদীকে নিয়ে থানায় যাই। কিন্তু তিনি থানায় গিয়ে উল্টে যায়। সুষ্ঠভাবে তদন্তের মাধ্যমে শান্ত হত্যার বিচার হউক আমিও চাই। ফোনালাপ ভাইরালের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাজিদ এসে সাদ্দামকে বলে মিটিংয়ে আসার জন্য আমাকে ফোন দিতে। তখন সাদ্দাম আমার সাথে ফোন দিয়ে কথা বলে। আমরা ফোনে কথা বলা অবস্থায় সাজিদ তা ভিডিও করে।
দেবিদ্বার থানার ওসি কমল কৃষ্ণ ধর দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নিহত শান্ত’র বাবা বাদী হয়ে নামধারী ৬ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১৫/২০ জনকে আসমী করে মামলা করেছেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজহার ভুক্ত আসামী সাদ্দাম ও মোকলেছ’কে গ্রেফতার পূর্বক রোববার আদালতে সোপর্দ করেছে। মামলার রহস্য উদঘাটনে পুিলশের একাধিক টিক কাজ করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন