শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

কামরাঙা : অপরিসীম পুষ্টিমানে সমৃদ্ধ

| প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০২২, ১২:০৪ এএম

ঠিক যেন লাজে রাঙা কনে বউয়ের মুখখানি। তেমনই লালচে হলুদ গায়ের রং তার। তাই আদ্যিকালের কোনো বদ্যি-কবরেজ তার নাম দিলেন কামরাঙা। এই ফলের ভেতরে রয়েছে রসের সম্ভার। রস নয়, বলা ভালো রসায়ন। কেন না, কামরাঙার রসের ভেতরে রয়েছে নানাবিধ ওষুধের গুন। আর শুধু ভিতরেই বা কেন, বাইরেটাই মন্দ কি! অমন রঙের বাহার, তার সঙ্গে গায়ের গড়নে খোদাই করা কারুকাজ। দুর থেকে যেন মনে হয়, আকাশের কোনো লম্বাটে তারা। সুপ্রাচীন কালে এ ফলের চেহারায় মুগ্ধ হয়েছিলেন সাহেব বিজ্ঞানীরাও। গবেষণাগারে ঢোকার আগে কাব্যি করে তারা কামরাঙার নাম দিয়েছেন ‘স্টার ফ্রুট‘, অর্থাৎ কিনা ‘তারা ফল‘।

এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি কামরাঙাকে। তাকে কেটে ছিঁড়ে সেই কবে থেকে পরীক্ষাগারে হয়ে চলেছে ওষুধ তৈরীর প্রচেষ্টা। এখনও বিশ্বের বিভিন্ন অত্যাধুনিক রসায়নাগারে ঔষধি ফল হিসাবে কামরাঙার জুড়ি মেলা ভার। এবং শুধু ওষুধই নয়, কামরাঙার আরও মস্ত বড়ো ভূমিকা রয়েছে যে কোনো রোগীর নিরাপদ পথ্য হিসেবে। যে কোনো ধরনের জ্বরজারি কিংবা পেট খারাপের নিরাময়ের পর সংশ্লিষ্ট রোগীদের মূলত দু‘টি সমস্যা দেখা যায়। প্রথমত, দুর্বলতা এবং দ্বিতীয়ত, স্বাদ বা রুচিহীনতা। এই দু‘টি ক্ষেত্রেই অব্যর্থ নিরাময়ের রাস্তা বাতলে দেয় কামরাঙা।

কামরাঙা রসে প্রচুর ভিটামিন এ থাকে। আর এই খাদ্যগুণের কারনেই ওই ফলের পুষ্টিমূল্য অপরিসীম।এর পাশাপাশি কামরাঙা রসে থাকে বিভিন্ন ধরনের এনজাইম বা উৎসেচক। মানবদেহের হজমব্যবস্থা ঠিকঠাক রাখার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে এই খাদ্যরস। এছাড়া কামরাঙারায় সুষম পরিমানে প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট থাকে। সবচেয়ে বড়ো কথা, এই ফলে, চর্বি বা ফ্যাটের কোনো অস্তিত্ব নেই। বরং কামরাঙায় থাকে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং লোহার মতো কিছু দরকারি খনিজ পদার্থ।

এর বাইরে মানুষের শরীরের পক্ষে আরও কিছু অতিরিক্ত উপাদানও অবশ্য রয়েছে কামরাঙায়। যেমন, এই ফলের ভিতরে ছাই রঙের এক ধরনের ঈষৎ স্বচ্ছ কষ থাকে। এই কষের ভেতরে থাকে এমন কিছু রাসায়নিক যা, আন্টিবায়োটিক বা জীবানুনাশক হিসেবে আজ করে। এর পাশাপাশি কামরাঙায় থাকে পরিমিত মাত্রায় শর্করা। এই কল্যানেই কামরাঙা হয়ে উঠেছে শক্তির আধার। পুষ্টিবিদদের তথ্য-পরিসংখ্যান অনুযায়ী ,প্রতি একশ গ্রাম কামরাঙা থেকে প্রায় ৬৫ ক্যালরি শক্তি উৎপন্ন হয়। একটি প্রমান আকার আয়তনের কামরাঙার ওজন প্রায় একশ গ্রামই হয়। কাজেই প্রতিদিন একটি করে কামরাঙা খেতে পারলে অনেক উপকার হয়। উদ্ভিদবিদ্যায়ও তাই কামরাঙাকে ওষধি ফল হিসেবেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তারই ভিত্তিতে চিকিৎসাশাস্ত্রে কামরাঙাকে নিয়ে হয়ে চলেছে নিত্যনতুন গবেষনা।

খাদ্য বিজ্ঞানীরা বলেন,উপকারের শেষ নেই কামরাঙায়। যে-কোনো জ্বর কমাতে এই ফলের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। তবে কামরাঙা খুবই ভাল কাজ করে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশিজনিত জ্বরের নিরাময়ে। সেইসঙ্গে এই ফলের রসে কমে যায় শ্বাসনালী এবং কন্ঠনালীর নানা ধরনের সংক্রমণের তীব্রতা। এমনকী এই সব রোগের উপসর্গ হিসাবে দেখা দেওয়া অসহ্য মাথাব্যথা কমাতেও কামরাঙার সুনির্র্দিষ্ট অবদান রয়েছে। এছাড়া নানা ধরনের পেট খারাপ কমাতে কামরাঙা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাশয়ের অব্যর্থ ঔষধ কামরাঙা। পিত্তের যাবতীয় জটিলতম সমস্যার সমাধান বা অবসানে কামরাঙার প্রয়োগ দেখা গেছে আর্য়ুবেদে।

শিশুদের ক্ষেত্রে কামরাঙা সবচেয়ে ভালো কাজ করে পেটে বাসা বাঁধা বিভিন্ন কৃমিকে মারতে। এই কারনে ডাক্তাররা বিশেষ করে ছোটদের নিয়মিত নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় কামরাঙা খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। দীর্ঘদীনের পর্যবেক্ষনে দেখা গিয়েছে, নিয়মিত কামরাঙা খেলে প্রায় দুরারোগ্য অম্লের রোগী যথেষ্ট স্বস্তি বা আরাম পান। হজমের গন্ডগোল সংক্রান্ত বমিভাব কমানোর ক্ষেত্রেও কামরাঙা মহৌষধ।

কামরাঙার রস গায়ে মাখলে দাদ ও চুলকানির মতো বিশ্রী চর্মরোগের নিরাময় হয় অত্যন্ত দ্রুত। সব শেষে বলা দরকার, কামরাঙা একটি অন্যতম প্রধান বলবর্ধক ফল।

কামরাঙার কোনো অপকার নেই বললেই চলে। বস্তুত মানবদেহে এই ফলের তেমন কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেই বলেই ভেষজ বিজ্ঞানীরা মত প্রকাশ করেছেন। তবে দেখা গেছে অন্য সব ফলের মত কামরাঙাও খাওয়া উচিত সংযত মাত্রায়। যদিও এই ফলে এসিড বা অম্ল (অ্যাসকরবিক) থাকে খুব কম মাত্রায়, তবু বেশি খেলে সামান্য হলেও আসিডিটি হতেই পারে। অবশ্য আরও একটি সমস্যা রয়েছে কামরাঙায়। আগেই বলা হয়েছে, এই ফলে এক ধরনের কষ থাকে। এই কষে থাকে এমন কিছু রাসায়নিক যা একটু বেশি মাত্রায় মুখে চলে গেলে জিভের পিছন দিকটা ভারী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এতে জিভের স্বাদকোরকের ক্ষতি হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে দাঁতের এনামেলও।

আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিষ্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
farook ahmed ১৫ জুলাই, ২০২২, ১২:১৮ পিএম says : 0
কামরাঙ্গা খেলে কিডনির ক্ষতি হয় এমন একটি পোস্টার একজন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞের চেম্বারে দেখেছিলাম।
Total Reply(0)
farook ahmed ১৫ জুলাই, ২০২২, ১২:১৮ পিএম says : 0
কামরাঙ্গা খেলে কিডনির ক্ষতি হয় এমন একটি পোস্টার একজন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞের চেম্বারে দেখেছিলাম।
Total Reply(0)
farook ahmed ১৫ জুলাই, ২০২২, ১২:১৮ পিএম says : 0
কামরাঙ্গা খেলে কিডনির ক্ষতি হয় এমন একটি পোস্টার একজন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞের চেম্বারে দেখেছিলাম।
Total Reply(0)
farook ahmed ১৫ জুলাই, ২০২২, ১২:১৮ পিএম says : 0
কামরাঙ্গা খেলে কিডনির ক্ষতি হয় এমন একটি পোস্টার একজন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞের চেম্বারে দেখেছিলাম।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন