‘কাক কাকের গোশত খায় না’ প্রবাদটি বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য জুৎসই উদাহরণ হতে পারে। সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের বিল দুই মাস বকেয়া পড়লেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। বিল আদায়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অধিদপ্তর, পরিদপ্তর এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সরকারি অফিসের বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলেও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় না। তামাদি বিল আদায়ে কঠোর ভূমিকা নিতে দেখা যায় না। বিল তামাদি করা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এমন শোনা যায়নি। ফলে সরকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের বিপুল পরিমাণ বিল বকেয়া থাকার দায় পড়ছে সাধারণ গ্রাহকদের ওপর। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ের ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমানে বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে অনীহা দেখানোয় এই বিপুল পরিমাণ বিল বকেয়া পড়ে রয়েছে। বিদ্যুতের বয়েকা বিল পরিশোধ করার নির্দেশনা দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত বুধবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, প্রতি অর্থবছরে সরকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার জন্য আলাদাভাবে বরাদ্দ দিয়েছে আসছে। তারপর বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকা সমীচীন নয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলো নিজ নিজ বিদ্যুৎ অফিসের সাথে যোগাযোগ করে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধকরণ এবং নিয়মিত বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কারণ অনুসন্ধানপূর্বক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হলো।
জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন ইনকিলাবকে বলেন, দেশের বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতির পথে একটি বড় বাধা বকেয়া বিল। স্মার্ট ও প্রিপেইড মিটার পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা গেলে বকেয়া নিয়ে অস্বস্তি চাপ দূর হয়ে যাবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে দ্রুত বিল পরিশোধের লক্ষ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে।
সারাদেশের সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখছে। আবার অনেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করার সময় বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করে বদলি হয়ে গেছেন। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা নিয়ে না জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ২ কোটি ৪৩ লাখ ৬৭ হাজার ৮২৯ টাকা তুলতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান। এছাড়া সাধারণ ও বেসরকারি খাতের গ্রাহকরা গড়ে তিন মাসের বিল বাকি রাখছেন। অথচ সরকারি, আধাসরকারি ও স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর গড়ে প্রায় ৬ মাস, পৌনে ৬ মাস এবং প্রায় ১৮ মাসের বিল বকেয়া রয়েছে। বিদ্যুৎ বিল আদায়ের সামগ্রিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না বিতরণ সংস্থাগুলো। অর্থচ সাধারণ গ্রাহকের ১ মাস থেকে ২ মাস বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিত। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের নামে মামলা দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। তারপরও ঘন ঘন লোডশোডিং। বিদ্যুতের জন্য নাকাল জনগণ। সারাদেশে ২-৩ সপ্তাহ ধরে চলছে ঘন ঘন লোডশেডিং। কোথাও কোথাও ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। তারপর নতুন করে শুরু হয়েছে গ্রাহকের কার্ডের টাকা কেটে নেয়া। সব দিক দিয়ে বিপাকে পড়েছে দেশের সাধারণ মানুষ।
সময়মতো বিল পরিশোধে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এ অনীহার কারণে গ্রাহক সেবার মান বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে গতি সৃষ্টি করতে পারছে না বিদ্যুৎ বিতরণে নিয়োজিত বোর্ড এবং কোম্পানিগুলো। দেশে বর্তমানে ছয়টি সরকারি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ বিতরণ করছে। গত নভেম্বর পর্যন্ত এ কোম্পানিগুলোর এবং বিদ্যুৎ বিভাগের হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে ৭ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। টাকার অঙ্কে বেসরকারি খাতে বকেয়া বিলের পরিমাণ বেশি হলেও সময়ের হিসাবে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বাকির খাতা বেশ দীর্ঘ। চলতি ৬ মাসে অভিযানের মাধ্যমে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের জন্য ৮৮ হাজার ২০৩টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। বিচ্ছিন্ন সংযোগের বিপরীতে বকেয়ার পরিমাণ ছিল ১৩৩ কোটি ৮৫ লাখ ২৬ হাজার ৯৩৩ টাকা। অন্যদিকে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় ১ হাজার ৪০৫টি। এই অভিযানে আরইবির আদায় করা বিলের পরিমাণ ২৬ কোটি ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৪৬৭ টাকা, ডেসকোর ৭ কোটি ৮৪ লাখ ২৯ হাজার ২৯৬ টাকা এবং ওজোপাডিকোর ২ কোটি ৮৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
সম্প্রতি একনেক সভায় নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা না হলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেক্ষেত্রে গ্রাহক সরকারি না বেসরকারি সেটা বিবেচনায় না নিতেও বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে বিদ্যুৎ বিল বাবদ কয়েক হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। বিদ্যুৎ বিল বাকি থাকলে অবশ্যই তা সবাইকে পরিশোধ করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সবাইকেই বিল দিতে হবে। নিয়ম মেনে পাওনা পরিশোধ না করলে সংযোগ কেটে দেয়া হবে।
দেশের উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে নর্দান ইলেকট্র্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) লিমিটেড। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার মানুষকে বিদ্যুৎসেবা দেয়ার দায়িত্ব তাদের। উত্তরের জেলাগুলোয় গত কয়েক দিনে বিদ্যুতের লোডশেডিং তীব্র আকার ধারণ করেছে। রাজশাহী শহরের কিছু এলাকায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। পাশাপাশি ঈদের আগে জেলা শহরগুলোর বড় বড় বিপণি বিতানগুলো দিনভর খোলা থাকলেও কাক্সিক্ষত ক্রেতার দেখা মিলছে না লোডশেডিংয়ের কারণে। এ ছাড়া একই কারণে বিপাকে পড়েছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ভ্যানচালকরা। দিনের একটি বড় সময় বিদ্যুৎ না থাকায় ঠিকঠাক যানবাহনের ব্যাটারি চার্জ করতেই গলদঘর্ম হতে হচ্ছে তাদের। বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, কয়েক দিন ধরে দিনে কয়েকবার লোডশেডিং হচ্ছে জেলাগুলোতে। কোথাও কোথাও ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটায় দেশজুড়ে বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় দিনে ও রাতে দফায় দফায় লোডশেডিং হচ্ছে। কবে দূর হবে লোডশেডিং সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদার বিপরীতে কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে, তাই বাধ্য হয়ে ঘন ঘন লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আওতায় সেবা গ্রহণকারী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি অর্থবছর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের জন্য ৪৮২১ কোডে বিদ্যুৎ বিল খাতে সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়। তারপরও দেশের অনেক উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে গত ২০১৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল বুধবার আবারো বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, প্রতি অর্থবছরে সরকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার জন্য আলাদাভাবে বরাদ্দ দিয়ে আসছে। তারপর বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকা সমীচীন নয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়গুলো নিজ নিজ বিদ্যুৎ অফিসের সাথে যোগাযোগ করে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধকরণ এবং নিয়মিত বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কারণ অনুসন্ধানপূর্বক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
মোট ৭ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা বকেয়ার মধ্যে বেসরকারি খাতের বকেয়ার পরিমাণই ৬ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। বাকি প্রায় ১ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা বকেয়া রেখেছে সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। ‘ডিসকানেক্ট ফর নন পেমেন্ট’ পদ্ধতিতে টাকা না দিলেই বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়ে বকেয়া বিল আদায়ে বিশেষ দল মাঠে নামানোর নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। পাঁচ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ে বিশেষ এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গ্রাহকের কাছ থেকে বকেয়া বিল আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়ার পরও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ছাড়া বাকি চারটি কোম্পানি ব্যর্থ হচ্ছে। এ কারণেই এবার বিল আদায়ে বিশেষ অ্যাকশনে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এর আগে ‘ডিসকানেক্ট ফর নন পেমেন্ট’ টিম গঠন করে বিল আদায় শুরু করেছিল বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। সেখানে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল, যিনিই হোন, বিল না দিলে সরাসারি লাইন কেটে দেয়া হবে। ভালো ফল মিলেছে ওই প্রক্রিয়ায়। বিদ্যুৎ নিতে হলে টাকা দিয়েই নিতে হবে এই মানসিকতা তৈরি জরুরি বলে মনে করা হয়।
বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে কেবল ডেসকো ও ডিপিডিসি। তবে এ দুই প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের টাকা বেশি বেশি কেটে নিচ্ছে। সে কারণে লক্ষ্যমাত্র অর্জন করেছে বলে জানা গেছে। বাকি চারটি কোম্পানি নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো), বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে এসব কোম্পানিকে কঠোরভাবে বিল আদায়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের কার্যক্রমও জোরদার করার কথা বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বিল আদায় না হওয়ায় আন্তঃসংস্থার দেনার পরিমাণও বাড়ছে। যার প্রভাব গিয়ে পড়ছে উৎপাদন কোম্পানির কাছে। পিডিবি বিদ্যুৎ বিক্রি করেও ঠিক সময়ে বিতরণ কোম্পানির কাছ থেকে টাকা না পাওয়ায় আর্থিক শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। কোনো কারণে বিল আদায়ে ব্যর্থ হলে তাদের শাস্তির মুখোমুখি হওয়ার কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোকে পিডিবির মতো ডিসকানেক্ট ফর নন পেমেন্ট টিম তৈরি করে কার্যকর করে সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের মাধ্যমে বকেয়া বিল আদায়ে তৎপর হতে হবে। এদিকে, বকেয়া বিল আদায়ে এরই মধ্যে গত এপ্রিল মাসে সব মিলিয়ে ৪১৪টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে বিভাগীয়ভাবে ৫২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৪৯ টাকা বিল বাবদ জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে পিডিবির আওতাধীন এলাকা থেকে ৩২ লাখ ৯৭ হাজার ৯০৯ টাকা, আরইবির এলাকা থেকে ৫ লাখ ৬০ হাজার ৪০ টাকা, ডেসকোর এলাকা থেকে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৪০ টাকা, ওজোপাডিকো ২৮ হাজার এবং নেসকো ১ লাখ ৪ হাজার ৮৬০ টাকা আদায় করেছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগে এ বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানিগুলোর কর্মরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে একটি সমন্বয় সভা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং সরবরাহ সঙ্কটের কারণে এরই মধ্যে দেশের বেশ কিছু তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন সঙ্কটে পড়েছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্তমান পরিস্থিতি জানিয়ে গত দেড় মাস আগে বিপিডিবিকে চিঠিও দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক চিঠিতে বলা হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি সরবরাহে এবং কেন্দ্র চালু রাখার বিষয়টি জানিয়ে বিপিডিবিকে চিঠি দেয় বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি ইউনাইটেড পাওয়ার। চিঠিতে বলা হয়, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় স্থাপিত ৩০০ মেগাওয়াট, পটুয়াখালীতে ১৫০ মেগাওয়াট, জামালপুরে ১১৫ ও ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি আমদানির ঋণপত্র (এলসি) ইস্যু এবং প্রসেস করতে অসমর্থ হওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সঙ্কটে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানি তেল এইচএফও সরবরাহের জন্য বিপিডিবির পক্ষ থেকে বিপিসিকে অনুরোধ করা হয়। ওই চিঠিতেই বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানির অনুরোধ অনুযায়ী ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লিমিট বাড়ানোর জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করা হয়। যদিও এ চিঠির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
রংপুর সিটি করপোরেশনে ২৩ কোটি টাকাসহ রংপুরে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহক পর্যায়ে ৫৫ কোটি টাকার বেশি বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে বলে জানিয়েছে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো)। এর মধ্যে সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া আছে ৩২ কোটি ২৯ লাখ ৭৫ হাজার ৩১১ টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, বরাদ্দ না আসায় বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না। বিল পরিশোধের জন্য বেশ কয়েক দিন মাইকে প্রচার চালিয়েছে নেসকো। চিঠিও দিয়েছে। তবে বিল পরিশোধে গ্রাহকদের তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন