বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ভারত থেকে গোশত আমদানি করা যাবে না

| প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

বাংলাদেশকে এবার গরুর গোশত আমদানির অনুরোধ জানিয়েছে ভারত। বাংলাদেশ যাতে পুনরায় ভারত থেকে গোশত আমদানি করে, এ অনুরোধ জানিয়ে ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাস সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমানে গোশত আমদানি বন্ধ থাকায় এই পণ্য আমদানির সঙ্গে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত এপ্রিলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা আমদানি নীতি ২০২১-২০২৪ প্রজ্ঞাপণ অনুসারে, হিমায়িত মহিষের গোশতসহ সকল ধরনের গোশত আমদানির জন্য প্রাণীসম্পদ অধিদফতর থেকে পূর্ব অনুমোদন নিতে হবে। এ ঘটনায় ভারতের রফতানিকারক ও বাংলাদেশী আমদানিকারক সমিতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের আমদানি নীতির পরির্বর্তনের কারণে গত কয়েক মাসে কোনো হিমায়িত গরুর গোশত আমদানি না হওয়ায় ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্মরণ করা যেতে পারে, দেশের পশু খামারিদের স্বার্থ সুরক্ষা এবং আভ্যন্তরীণ পশুসম্পদ খাতের বিকাশের জন্য ভারত থেকে হিমায়িত গোশত, বিশেষ করে মহিষের গোশত আমদানি বন্ধ করেছে সরকার।

সাত-আট বছর আগেও ভারত থেকে দেদারছে হিমায়িত গরু-মহিষের গোশত এবং গরু বৈধ-অবৈধভাবে আমদানি করা হতো। বিশেষ করে কোরবানির সময় ভারত ও মায়ানমার থেকে গরু আমদানি না হলে পশু সংকট দেখা দিত। ভারতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ২০১৪ সালে হুট করে বাংলাদেশে বৈধ-অবৈধ পথে গরু প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। এতে কোরবানির সময় পশু সংকট দেখা দেয়। এ সংকট এবং অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশ সরকার দেশীয় খামারিদের পশুপালনে ব্যাপক উৎসাহ ও সহযোগিতা প্রদান শুরু করে। এতে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে পশু সম্পদে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠে। বিগত কয়েক বছর ধরে দেশী গর তে কোরবানি সম্পন্ন হচ্ছে এবং উদ্বৃত্তও থেকে যাচ্ছে। এ বছর এক কোটির বেশি পশু কোরবানি হয়েছে। লাখ লাখ পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। শুধু পশুসম্পদে নয়, দুধ উৎপাদনেও দেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে যে, গ্রামের দরিদ্র পরিবারও এখন একটি-দুটি গরু পালন ও দুধ বিক্রি করে আয়রোজগার বাড়িয়েছে। খামারিরাও দিন দিন পশু পালন ও উৎপাদনের পরিসর বৃদ্ধি করে চলেছে। এতে লাখ লাখ মানুষের যেমন কর্মসংস্থান হয়েছে, তেমনি এ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে, যা অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। ভারত একসময় বাংলাদেশকে শিক্ষা দেয়ার জন্য গরু প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল। এখন তার সমস্যা হওয়ায় গোশত আমদানির আবদার করছে। তার এ অবদার যদি রক্ষা করা হয়, তাহলে আমাদের সমৃদ্ধ এ খাত ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে। এ প্রেক্ষিতে, ভারত থেকে গোশত আমদানির প্রশ্নই ওঠে না। ভারত বরারবরই বাংলাদেশের ওপর চাপ দিয়ে তার প্রয়োজনীয় সব স্বার্থ হাসিল করে নিয়েছে। আমাদের কোনো সমস্যারই কার্যকর সমাধান করেনি। তার আচরণ এমন যে, সে যা চাইবে বাংলাদেশ তা দিতে বাধ্য থাকবে। বাংলাদেশ যে এখন অর্থনীতির দিক থেকে অনেক এগিয়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, আমদানির প্রয়োজন নেই, এটা হয়তো ভারত মানতে পারছে না। এখন নিজের সুবিধা এবং সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ পশু সম্পদ খাতের ওপর নজর দিয়েছে। ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার নিজ দেশেই মুসলমানদের গরু জবাই কিংবা কোরবানির ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আরোপ করে এক ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক আচরণ করছে। কোনো কোনো রাজ্যে কোরবানি নিষিদ্ধ করেছে। গরুর গোশত ফ্রিজে রাখার দায়ে মুসলমান হত্যা এবং প্রতিনিয়ত নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। সেই বিজেপি সরকারই গরু জবাই করছে এবং তার গোশত রফতানি করছে। এটা তার দ্বিমুখী আচরণ এবং মুসলমান দমনে চরম সাম্প্রদায়িক মনোভাবের প্রকাশ। গত শুক্রবার ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং পাকিস্তানকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘যে দেশ ধর্মান্ধতা আর কট্টরপন্থীদের কারণে অশান্তিতে আছে তাদের বাংলাদেশের কাছ থেকে শেখা উচিৎ।’ তার এ কথার সূত্র ধরে বলা যায়, ভারত যে হিন্দু উগ্রবাদিতার কারণে বিশ্বব্যাপী একটি চরম সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, এ বিষয়টি তিনি উপেক্ষা করে গেছেন। তিনি যদি বলতেন, বাংলাদেশের কাছ থেকে ভারতের সাম্প্রদায়িক আচরণ শেখার প্রয়োজন রয়েছে, তাহলে বিষয়টি বরং যৌক্তিক হতো।

ভারত গোশত আমদানির যে অনুরোধ করেছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এখন সে বেকায়দায় পড়ায় গোশত আমদানির আবদার করছে। তার এই আবদারে সরকারের সাড়া দেয়া উচিৎ হবে না। সাড়া দিলে আমাদের খামারিরা নিরুৎসাহী ও হতাশ হবে। দেশে আজ পশুসম্পদ এবং দুধ উৎপাদনে যে বিপ্লব ঘটেছে, তা স্তিমিত হয়ে পড়বে। ভারতের স্বার্থ রক্ষার চেয়ে আমাদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারের উচিৎ হবে, এ খাতের সুরক্ষা দিয়ে একে আরও কিভাবে সম্প্রসারিত করে গোশত ও দুধ রফতানির উপযোগী করা যায়, এ পরিকল্পনা করা। এটা না করে গোশত আমদানির অনুমতি দিলে দেশ যে ক্ষতির মুখে পড়বে, তার দায় সরকারের ওপরই পড়বে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Mir Mohammad Kaiser Hossain ১৭ জুলাই, ২০২২, ২:৩১ এএম says : 0
ভারতের হারাম গোস্ত দেশে আনার দরকার কি
Total Reply(0)
Shahed Parvez ১৭ জুলাই, ২০২২, ২:৩০ এএম says : 0
কোন অবস্থাতেই না । কেননা বাংলাদেশের খামারী ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং আমদানি ব্যয় বাড়বে বাজারে ডলার সংকট আরো প্রকট হবে ।
Total Reply(0)
Harunur Rashid ১৭ জুলাই, ২০২২, ১২:০৬ এএম says : 0
Anyone loves Bangladesh can not, must not import meat from hindustan period. Only a traitor can allow to import cow and cow meat from hindustan.
Total Reply(0)
Munir Ahmed Kotwal ১৮ জুলাই, ২০২২, ১০:৫৫ এএম says : 0
কোন অবস্থাতেই না । কেননা বাংলাদেশের খামারী ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং আমদানি ব্যয় বাড়বে বাজারে ডলার সংকট আরো প্রকট হবে ।
Total Reply(0)
Kutubuddin Ahamad Chowdhury ১৭ জুলাই, ২০২২, ৯:৪৭ এএম says : 0
Self help is the best help. We need self sufficient & more capability. In other hand a country develop / improve by the own activities as properly. We should depend self creativity. Its will be effect by finical/economic & other side also. So need/should increase all kind of opportunity in own projects & ensue all types training & etc. We should ahead in next. We want independent by self & so need cooperation by related concerns. Thanks so much!
Total Reply(0)
Belal Hossin ১৭ জুলাই, ২০২২, ২:৩২ এএম says : 0
মহিষ আমদানি করেন মাংস নয়। ভারতের কাছ থেকে কিছুই আমদানি করা উচিত নয়।হারাম মিশায়।
Total Reply(0)
Riaj Uddin ১৭ জুলাই, ২০২২, ২:৩২ এএম says : 0
আমরা এমন এক জাতি, যারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য সব কিছুই করতে পারি! আমাদের কাছে মান-সম্মান, দেশপ্রেম, সততা ইত্যাদি সব কিছুর চেয়ে টাকাটাই অধিক মূখ্য এবং মূল্যবান সম্পদ!! আমরা আসলেই বড় আজব এক জাতি!!!(সব ক্ষেত্রেই কিছু ব্যতিক্রম থাকে যা বলার অপেক্ষা রাখে না।)
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন