বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

খুলনায় রাতের নয়া আতঙ্ক বেপরোয়া বাইকার

খুলনা ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০২২, ১২:০০ এএম

সন্ধ্যা পার হলেই খুলনার সড়ক-মহাসড়কগুলোতে নতুন আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে বেপরোয়া গতির বাইকারেরা। এদের মধ্যে উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের সংখ্যাই বেশি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিত্তশালী পরিবারের বিপথে যাওয়া সন্তানেরা মাদক সেবনের পাশাপাশি উম্মত্ত এক নেশার বশবর্তী হয়ে উচ্চগতির বাইক নিয়ে রাস্তায় নামছে। গত এক মাসে এ ধরণের ঘটনায় ৩ জন প্রাণ হারিয়েছে, মৃত্যুশয্যায় রয়েছেন আরো ৫ জন। গত শুক্রবার রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে এক তরুণ ও তরুণী। মদপানের পর ধূমপানরত অবস্থায় বেপরোয়াভাবে বাইক চালানোর জন্য তাদের র‌্যাব হাতেনাতে গ্রেফতার করে।
সূত্র জানায়, খুলনার বাইপাস রোড, রূপসা সেতু এলাকা এবং শহরের খানজাহান আলী রোড, খান এ সবুর রোডসহ প্রশস্ত কয়েকটি সড়কে এসব বাইকারদের আনাগোনা বেশি। বাইকগুলো বিকট শব্দ উৎপাদনকারী সাইরেন যুক্ত করা। সামনে প্রখর এলইডি হেড লাইট। ১৫০ থেকে ১৬০ সিসির বাইকগুলোতে ১০ সেকেন্ডে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি গতি তোলে তারা। দ্রুত ওভারটেক করা, হঠাৎ ব্রেক করা, ঝুঁকিপূর্ণভাবে জিগজ্যাগ রাইডিং এর কারণে রাস্তায় চলাচলকারী অন্যান্য যানবাহন ও পথচারীদের বিপদে পড়তে হয়। ঈদের পরদিন সন্ধ্যায় এভাবে বাইক চালাতে গিয়ে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন বাইপাস রোডের কাছে আরাফাত হাওলাদার নামে (১৯) এক তরুণের মৃত্যু হয়। এসময় তার দুই বন্ধু আহত হয়। আহতদের ভাষ্যমতে বাইকের গতি ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার ছিল। আরাফাত নগর ও ময়ূর ব্রিজের মাঝামাঝি স্থানে একটি বাসের সাথে তাদের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। আরাফাত হাওলাদার ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
ঈদের আগের দিন নগরীর শিরোমনি এলাকার ডাক্তার বাড়ির সামনে বেপরোয়া বাইকের ধাক্কায় খাদিজা বেগম নামে এক মধ্যবয়সী নারী ঘটনাস্থলেই মারা যান। এ সময় মোটরসাইকেলের চালক রহিম সরদার ও আরোহী গালিব নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের ওপর ছিটকে পড়ে আহত হন। গত ৫ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে এমনই এক বেপরোয়া মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ইউসুফ হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হন। নগরীর জিরো পয়েন্টস্থ হরিণটানা থানার সামনে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। এ সময় মোটরসাইকেল চালকও গুরুতর আহত হয়।
গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মদ্যপ অবস্থায় বেপরোয়াভাবে লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেল চালানো ও অসামাজিক কার্যকলাপের দায়ে দুই তরুণ-তরুণীকে আটক করে র‌্যাব-৬। র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ জানান, আটককৃতরা হল- মহানগরীর মুজগন্নী উত্তর পাড়ার শাওন কাজী ও মেহেরিন জান্নাত মারিয়া।
গত শুক্রবার রাতে র‌্যাব-৬ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন মহানগরীর লবনচরা থানা এলাকায় কতিপয় তরুণ-তরুণী অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছেন। এমন তথ্যের ভিত্তিতে রাত ১১টা ২০ মিনিটে র‌্যাব সদস্যরা ওই এলাকার দারোগার ভিটা এলাকায় পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পায় একজন তরুণ এক তরুণীকে নিয়ে রাস্তার ওপর বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে। পরে র‌্যাব সদস্যরা মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা মদ্যপান করেছে বলে স্বীকার করেন। এরপর তাদের আটক করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যারা এ ধরণের বেপরোয়া বাইক চালাচ্ছে, তারা সবাই ধনাঢ্য পরিবারের বখাটে সন্তান। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসন তাদের আটক করলেও বেশি সময় ধরে রাখতে পারে না। আর ধরলে ছেড়ে দিতে হবে, এমনটি ভেবে পুলিশ তাদের ধরতে চায় না। ফলে তাদের দৌরাত্ম্য দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। খুলনার খালিশপুর ও দৌলতপুর এলাকায় বখে যাওয়া কিছু তরুণ বাইকার্স ক্লাব নামে গোপন একটি সংগঠন খুলেছে। নগরীর লবনচরা এলাকায় ইয়ং রাইডার্স ও ব্ল্যাক রাইডার্স নামে দুটি বাইকার সংগঠন রয়েছে। যেগুলো গোপনে পরিচালনা করা হয়। এরা দলবদ্ধভাবে বের হয়। রাস্তায় কেউ বাঁধা দিলে দল নিয়ে তারা হাজির হয়। কিশোর গ্যাংগুলোর অনেকেই এসব সংগঠনের সদস্য।
এ বিষয়ে র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোস্তাক আহমেদ বলেন, প্রায়ই আমরা বেপরোয়া বাইকারদের বিষয়ে জনসাধারণের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে থাকি। এদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
খুলনা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন (বিপিএম) বলেন, সড়কে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলমান রয়েছে। বিভিন্নস্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র চেকিংসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যহত আছে। তবে বেপরোয়া বাইকারদের রুখতে সবার আগে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা। পরিবার থেকে তাদের আগে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন