নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলা মামলায় মঙ্গলবার রোমান মোল্যা নামে আরো একজন গ্রেফতার হয়েছে। সে কুমড়ি গ্রামের তালেব মোল্যার ছেলে। এনিয়ে গ্রেফতার দাঁড়ালো ৬ জন। দিঘলিয়া বাজার ও সাহাপাড়ার বাড়ি, দোকান, মন্দির ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ এর আগে ৫ জনসহ গ্রেফতারকৃত ৬ জনকেই আদালত ৩ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন। গ্রেফতারকৃতরা হলোÑ দিঘলিয়া গ্রামের মৃত ইসাহাক মৃধার ছেলে রাসেল মৃধা, চরমাউলী গ্রামের মৃত আজিজুল গাজীর ছেলে কবির গাজী, তালবাড়িয়া গ্রামের মৃত আমিন উদ্দিনের ছেলে সাঈদ শেখ, বাটিকাবাড়ি গ্রামের কবির শেখের ছেলে রেজাউল শেখ ও বয়রা গ্রামের সাজেদুর রহমানের ছেলে মাসুম বিল্লাহ ।
মঙ্গলবার লোহাগড়া থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, সাম্প্রদায়িক হামলায় উপজেলার দিঘলিয়া বাজার ও সাহাপাড়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দোকান, বাড়ি, মন্দির ভাংচুর ও একটি বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় গত রোববার বিকালে লোহাগড়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়। সৃষ্ট ঘটনার ভিডিও ফুটেজ যাচাই-বাছাই এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদেরকে আটক করে সোমবার ও মঙ্গলবার আদালতে সোপর্দ করা হয় এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করে। নড়াইলের লোহাগড়া আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোরশেদুল আলম শুনানী শেষে তাদের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে দিঘলিয়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ি ও মন্দির পরিদর্শন করেন খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি,স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্রাচার্য্য এমপি, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এমপিসহ একটি সরকারি প্রতিনিধি দল। এ সময় তাঁদের সাথে ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস এমপি, মনোরঞ্জন শীল গোপাল এমপি, বীরেন শিকদার এমপি, অসীম কুমার উকিল এমপি, পংকজ দেবনাথ এমপি ও স্থানীয় এমপি মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা। মঙ্গলবার দুপুরে তাঁরা ঢাকা থেকে সড়ক পথে ঘটনাস্থলে পৌছান। এ সময় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় লোকদের সাথে কথা বলেন। এ সময় খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার হিন্দুদের উদ্দেশে বলেন,আপনারা ভয় পাবেন না,প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাদের পাশে আছে। তিনিই আমাদের এখানে পাঠিয়েছেন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন,বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর ও সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে মৌলবাদী গোষ্ঠী উঠে পড়ে লেগেছে। আর এই মৌলবাদী গোষ্ঠীকে মদদ দিচ্ছে একটি কুচক্রী মহল। যাদের বিরুদ্ধে সরকার এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আগামী দিন গুলোতে শেখ হাসিনা সরকারও প্রশ্নবিদ্ধ এবং হুমকির মুখে পড়বে। স্বপন ভট্রাচার্য্য বলেন, নির্বাচন আসলেই বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে।আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের উপর হামলা, বাড়িঘর-দোকান ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আমরা মর্মাহতএবং এর তীব্র নিন্দা জানাই। পরে দিঘরিয়া সাহাপাড়া রাধা গোবিন্দ মন্দির প্রাঙ্গনে মতবিনিময় কালে নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা বলেন,শান্তি প্রিয় নড়াইলে যারা এ ঘৃণিত ঘটনার সাথে জড়িত তাদের শাস্তির দাবি জানাই।এসব ঘটনা দুর্বৃত্তদের উৎসাহ সৃষ্টি করে।আপনারা ভয়ভীতির উর্দ্ধে থেকে সহাবস্থানে মিলেমিশে বাস করবেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিজামউদ্দিন খান নিলু,হিন্দু ধর্মীয় কল্যান ট্রাষ্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত পাল,নড়াইল পৌরসভার মেয়র আঞ্জুমানয়ারা,লোহাগড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শিকদার আব্দুল হান্নান রুনু, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুন্সি আলাউদ্দিন, সাধারন সম্পাদক ও পৌর মেয়র সৈয়দ মসিয়ূর রহমান প্রমুখ।
পরে বিকালে মন্ত্রী ও এমপিসহ নেতৃবৃন্দ লোহাগড়া উপজেলা পরিষদের হল রুমে প্রশাসনের উদ্যোগে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষার্থে সকল অংশীজনের সাথে একমতবিনিময় সভায় মিলিত হন। এ সময় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও উপজেলা পূজা উৎযাপন পরিষদ ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের লোকজন উপস্তি ছিলেন।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন বাম গনতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও ইউনাইটেড কমিউনিষ্ট লীগের সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার,সিপিবির সাধারন সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স,বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটির্ (মার্কসবাদী) সাধারন সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, বাসদ (মার্কসবাদী) সীমা দত্ত,জাসদ জাতীয় শ্রমিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা,সাতক্ষীরা-১ আসনের এমপি এ্যাড.মুস্তফা লুৎফুল্লাহ,জেলা ওয়ার্কার্স পাটির সম্পাদক এ্যাড. নজরুল ইসলাম,জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম তুহিন প্রমুখ। পরে এ্যাডভোকেট বিভাস চন্দ্র বিশ্বাসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির আরো একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সাথে কথা বলেন। লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজগর আলী জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের ঘর ও মন্দির সংস্কার বাবদ ঢেউটিন, নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আবু হেনা মিলন জানান, বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। সাম্প্রদায়িক হামলা মামলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট ৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য,গত ১৫ জুলাই দিঘলিয়া সাহাপাড়ার আকাশ সাহার ফেসবুক থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)কে নিয়ে কটুক্তি করে পোষ্ট দেওয়ার অভিযোগে বিক্ষুদ্ধ লোকজন সাহাপাড়ার ৫-৬টি বাড়িঘর ও ৬টি দোকান ঘরসহ চারটি পূজামন্ডপ ভাংচুর করে ও একটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে বিক্ষুদ্ধ লোকজনকে লাঠিপেটা করে এবং টিয়ারশেল ও শর্ট গানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন