শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

টাংগাইলের নাগরপুরে চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস হত্যার রহস্য উদঘাটন

খুনের ২৪ ঘন্টায় আসামীদের গ্রেপ্তার, আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান

মির্জাপুর(টাঙ্গাইল) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০২২, ৩:০৭ পিএম

টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ক্লু-লেস হত্যাকান্ড সংগঠিত হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে খুনের রহস্য উদঘাটন করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করেছে নাগরপুর থানা পুলিশ। তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ও ম্যানুয়াল ইনটেলিজেন্স কাজে লাগিয়ে এই খুনের রহস্য উদঘাটনা করা হয়।
নাগরপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ক্লু-লেস খুনের ঘটনার পর উপপরিদর্শক (এসআই) মনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে নাগরপুর থানা পুলিশের একটি দল ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করেন। তারা তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ও ম্যানুয়াল ইনটেলিজেন্স কাজে লাগিয়ে ১৯ জুলাই রাত রাত ১১ টার দিকে মির্জাপুর উপজেলার উয়ার্শী গ্রাম থেকে মোরশেদা আক্তার, ২০ জুলাই রাত চারটার দিকে মির্জাপুর বহুরিয়া হতে আসামী বারেক ও ২১ জুলাই মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থেকে আসামী কালাচানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হলে মূল আসামী মোরশেদা আক্তার ও তার সহযোগী বারেক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাগরপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন।
নাগরপুর থানা পুলিশ সূত্র জানায়, গত ১৯ জুলাই সকাল সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলার মানড়া নয়াপাড়া কালভার্টের নিচে অজ্ঞাতনামা যুবকের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা থানায় খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে লাশটির উপজেলার মানড়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের (৪৫) বলে পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতদের স্ত্রী রাহেলা বেগম বাদী হয়ে ওই দিনই নাগরপুর থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন তিনি।

এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন তার স্বামী শফিকুল ইসলাম টুকটাক কৃষি কাজ ও জমি দেখাশোনার কাজ করতেন। গত ১৮ জুলাই সকাল ৯ টার পর সে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এরপর তার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। ১৯ জুলাই সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে মানড়া নয়াপাড়া কালভার্টের নিচে তার লাশ পাওয়া যায়। তার স্বামীকে হত্যা করে লাশ লুকানোর উদ্দেশ্যে খুনীরা কালভার্টের নিচে ফেলে গেছে বলে বাদী তার এজাহারে উল্লেখ করেন।

মির্জাপুর-নাগরপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এস. এম. মনসুর মূসা খুনের রহস্য উদঘাটনের বিষয়ে জানান, নিহত শফিকুল ইসলাম একই এলাকার এক প্রবাসীর স্ত্রী মোরশেদা আক্তারের সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। গত ১৮ জুলাই বিকেল ৫ টার দিকে শফিকুল পুনরায় মোরশেদার বাড়িতে আসে। ওই সময়ে বাড়িতে কেউ ছিলনা। এ সময় শফিকুল মোরশেদার সঙ্গে অনৈতিক কাজ করার চেষ্টা করে। মোরশেদা বাধা দিলে তাদের মধ্যে ধস্তাধন্থি হয়। এক পর্যায়ে মোরশেদা শফিকুলের মুখ কাপড় দিয়ে চেপে ধরে রাখে ও টিউবওয়েলের মেঝেতে আঘাত করলে শফিকুলের মৃত্যু হয়। পরে বাড়ির টয়লেটে লাশ লুকিয়ে রাখে। মোরশেদা বিষয়টি তার দেবর বারেক ও ভাসুর কালাচানকে জানায়। তারা লাশ লুকানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ওই দিন রাত আনুমানিক ১২ টার দিকে তারা মরদেহ চটের বস্তায় ভরে বারেকের অটোরিক্সাতে তুলে মানড়া কালভার্টের নীচে ফেলে রেখে যায়।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান যে, গ্রেফতারকৃতদের বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হলে মূল আসামী মোরশেদা আক্তার ও তার সহযোগী বারেক ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে নিজেদেরকে জড়িয়ে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

নাগরপুর থানা (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আলামত হিসেবে অটোগাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যান্য আলামত জব্দের চেষ্টা চলছে। তদন্ত অব্যহত আছে। তদন্ত শেষে শীঘ্রই পুলিশ রিপোর্ট প্রদান করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন