তুরস্কের মধ্যস্ততায় শস্য রপ্তানিতে ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার চুক্তি হওয়ার পরেও ডনবাস এলাকায় যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। ক্রামতোর্স্ক শহরের পরে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে নতুন করে হামলা চালিয়েছে রুশ সেনা, যাতে কমপক্ষে তিনজন নিহত এবং ২৩ জন আহত হয়।
যুদ্ধরত পক্ষগুলিকে সম্পৃক্ত করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে, রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা মিলিয়ন মিলিয়ন টন ইউক্রেনীয় শস্য এবং কিছু রাশিয়ান শস্য রপ্তানির পথ পরিষ্কার করে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট এড়াতে জাতিসংঘ এবং তুরস্কের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তবুও প্রায় পাঁচ মাস ধরে এ শস্যের চালান বন্ধ করে দেয়া যুদ্ধ থামেনি। রাশিয়া এই সপ্তাহে পূর্ব ইউক্রেনের বাইরের অঞ্চলগুলি দখল করার পরিকল্পনার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে, যেখানে রাশিয়ান সামরিক বাহিনী ডোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক প্রদেশের ডনবাস অঞ্চল জয় করার চেষ্টা করছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বলেছে যে, ক্রামতোর্স্কের একটি শহরে রাশিয়ান গোলাবর্ষণে একটি স্কুল ধ্বংস হয়েছে এবং ৮৫টি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় জরুরী সংস্থা বলেছে যে, উদ্ধারকারীরা বৃহস্পতিবার আঘাতপ্রাপ্ত স্কুলের ধ্বংসাবশেষে তিনটি মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছে। তবে রাশিয়া হামলার ভিন্ন বর্ণনা দিয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ বলেছেন যে, বৃহস্পতিবারের হামলায় ক্রামতোর্স্কের ২৩ নম্বর স্কুলকে তাদের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করে থাকা ৩০০জনেরও বেশি ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছে। তিনি বলেন, আরেকটি হামলায় দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মাইকোলাইভের একটি অস্ত্রের ডিপো ধ্বংস হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ান বাহিনী ডিনিপ্রোর উপনদী ইনগুলেটস নদীর ধারে আর্টিলারি যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করছে। মন্ত্রণালয়ের একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, নদীর পশ্চিমে রাশিয়ান বাহিনীর সরবরাহ লাইন ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অতিরিক্ত ইউক্রেনীয় হামলা মূল আন্তোনিভস্কি সেতুর আরও ক্ষতি করেছে, যদিও রাশিয়া অস্থায়ী মেরামত পরিচালনা করেছে।
এর আগে মস্কোর আদেশ না মানায় ইউক্রেনের খেরসন অঞ্চলের মেয়র ইহোর কোলিখায়েভকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার রাশিয়া-প্রতিষ্ঠিত কর্মকর্তারা। তারা জানান, খেরসনের মেয়রকে মঙ্গলবার (২৮ জুন) আটক করে নিরাপত্তা বাহিনী। তবে খেরসনের স্থানীয় কর্মকর্তাদের দাবি, মেয়র কোলিখায়েভকে অপহরণ করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, কৃষ্ণ সাগরের একটি বন্দর শহর খেরসন। রাশিয়া-অধিভুক্ত ক্রিমিয়ান উপদ্বীপের ঠিক উত্তর-পশ্চিমে এর অবস্থান। গেল ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর প্রথম সপ্তাহেই শহরটি দখল করে নেয় রুশ সেনারা। চলতি বছরের শেষের দিকে অধিকৃত খেরসন রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত করা হতে পারে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর বলছে, রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে অনুরোধ করার পরিকল্পনা রয়েছে শহরটির কর্তৃপক্ষের।
বর্তমানে শহরটি পরিচালনা করছে একটি সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন। গেল ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী ইউক্রেনকে নিরস্ত্রিকরণ ও নতুন-নাৎসিমুক্ত করতে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এরপর মস্কোর সঙ্গে একীভূত হতে যাওয়া প্রথম কোনো অঞ্চল হতে যাচ্ছে খেরসন। গেল এপ্রিলে খেরসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের দাবি করে রাশিয়া। অঞ্চলটিতে এখনো বিচ্ছিন্ন রুশ-বিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হতে দেখা যাচ্ছে। খেরসনে একই নামে একটি সমুদ্রবন্দর রয়েছে। ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে এটি সংযোগ রয়েছে।
২০১৪ সালে ক্রিমিয়া ও পূর্ব ইউক্রেনের রুশ-সমর্থিত বিদ্রোহীদের বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয় রাশিয়া। আট বছর আগে ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর অঞ্চলটিকে একীভূত করতে একটি গণভোটের আয়োজন করেছিল রাশিয়া। যাতে সেখানকার অধিবাসীরা রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দিতেই ভোট দিয়েছিলেন। সূত্র: এপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন