শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে

মো. কাউছার হামিদ | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০২২, ১২:০৪ এএম

যখনই কারো আত্মহত্যার খবর শুনি, আমি বিচলিত হয়ে উঠি। রাগে ও ক্ষোভে ভ্রু যুগল কুঁচকে যায়, চেহারায় অসন্তুষ্টির ছাপ প্রকাশ পায়। অস্ফুট বলে উঠি, ‘মরছে ভালো হইছে। পৃথিবীতে থাকার যোগ্যতা তার নাই। এজন্যই বিদায় নিছে।’

কিন্তু এগুলো যে মনের কথা নয়, তার প্রমাণ- ক্ষণেক বাদেই অন্তরে দহনজ¦ালা শুরু হয়। বিষণ্নতায় মনটা ছেয়ে যায়। ভাবি, এই যে দিন দিন আত্মহত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এর নেপথ্যের কারণ কী? যারা এসব করছে তারা তো আর অবুঝ নয়। তারা মেধাবী, উচ্চ শিক্ষিত। কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী! তবু কেন তারা নিজেকে শেষ করে দিচ্ছে? এর সমাধান কী?

বিষয়টা নিয়ে দীর্ঘ দিন ভেবেছি। এর কারণ উদ্ঘাটন ও সমাধান বের করার চেষ্টা করেছি। অবশেষে প্রধান যে কারণ ও সমাধান খুঁজে পেয়েছি, তাই পাঠকদের সামনে পেশ করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে দিন দিন কেন আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে? এর বহুবিদ কারণ সমাজ ও মনোবিজ্ঞানীরা উদ্ঘাটন করলেও সব কারণের মূল একটা কারণ রয়েছে, যা অনেকেই উপলব্ধি করতে পারেন না। সেটি হলো, শিক্ষার্থীদের মাঝে ইসলামি শিক্ষা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চরম অভাব এবং বস্তুবাদি পাশ্চাত্য সভ্যতার অন্ধ অনুসরণ।

বস্তুত, আমরা আজ এমন একটি সমাজ ও সভ্যতার কোলে বেড়ে উঠছি, যেখানে জীবনের মানেই হলো আয় উপার্জন আর বিলাসী জীবন-যাপন। ভোগই যেন জীবনের চরম উদ্দেশ্য। অর্থই যেন সব কিছুর মূল। এখানে ইসলামি শিক্ষা ও মূল্যবোধের চার পয়সারও দাম নেই। অথচ, একটি সুখী ও সার্থক জীবন গঠনের জন্য ইসলামি শিক্ষা ও মূল্যবোধ অতীব জরুরি! পরিতাপের বিষয় এই যে, আমাদের সেক্যুলার (ধর্মহীন) শিক্ষা ব্যবস্থায় তা অতিমাত্রায় অনুপস্থিত।

এ জন্যই আমরা যদি আমাদের শিক্ষার্থী ভাই-বোনদের আত্মহত্যার নেপথ্যে কারণগুলোর দিকে অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে তাকাই, তবে বিস্ময়ের সাথে দেখতে পাই, কতো তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণে তারা নিজেদের জীবন শেষ করে দিচ্ছে। বাস্তব জীবনে সেই সব কারণের কোনো মূল্যই নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ক্যারিয়ার বা ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কে হতাশ হয়ে কিংবা প্রেমে বিচ্ছেদের ফলে তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। বলা বাহুল্য, শিক্ষার্থীরা যদি পূর্ণ ইসলামি অনুশাসন মেনে চলতো, আল্লাহর প্রতি যদি তাদের পূর্ণ আস্থা ও বিশ^াস থাকতো, তবে কখনো জীবন বা ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশ হতো না। সকল বিপদে-আপদে, দুঃখ-কষ্টে কেবল আল্লাহর উপরই ভরসা করতো। কেননা, তাদের হৃদয়ে বাজতো পবিত্র কুরআনের এই আশার বাণী: ‘যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার নিষ্কৃতির ব্যবস্থা করে দিবেন। আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক দান করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ তার ইচ্ছে পূরণ করবেনই, আল্লাহ সবকিছুর জন্য স্থির করে রেখেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা।’ (সুরা: আত তালাক)।

শুধু তাই নয় ‘জীবনে যে দুঃখ-কষ্ট আসেই, বিপদ-মুসিবত থাকেই; এগুলো যে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা এবং এই সময় ধৈর্য ধারণ করাই যে ইসলামের শিক্ষা আর এই কষ্টের পরই যে রয়েছে মিষ্ট’, তা তারা হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করতো। কেননা কুরআনে পাকের এই মহান বাণীও তাদের জানা থাকতো যেখানে আল্লাহ বলেছেন: ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, ধন, প্রাণ, এবং ফল-ফসলের দ্বারা পরীক্ষা করবো; এবং সুসংবাদ দাও ঐসব ধৈর্যশীলদের, যাদের উপর কোনো বিপদ নিপতিত হলে বলে, ‘নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্যই এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী’।’ (সুরা: বাকারাহ, ১৫৫-১৫৬)।]

‘হে বিশ^াসীগণ, তোমরা ধৈর্য ও সলাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন।’ (সুরা: বাকারাহ, ১৫৩)।

‘নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই রয়েছে স্বস্তি।’ (সুরা: ইনশিরাহ, ৬)।

তাছাড়াও আত্মহত্যা যে ইসলামে হারাম, এর শাস্তি যে জাহান্নাম সেই জ্ঞানের প্রতি তাদের দৃঢ় বিশ্বাস থাকতো। তখন কোনো কারণে আত্মহত্যার ভূত মাথায় চাপলেও তৎক্ষণাৎ তা ঝেড়ে ফেলতো। কিন্তু ইসলামি শিক্ষা ও দ্বীনের চর্চা না থাকায় তারা আত্মহত্যাকে তুচ্ছ জ্ঞান করছে। আর এতেই আত্মহত্যা অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অপরদিকে ইসলামের পরিপূর্ণ শিক্ষা ও অনুশাসন না থাকায়, আল্লাহকে যথাযথ ভয় না করায়, দিন দিন তারা অশ্লীলতা ও বেহায়াপনায় লিপ্ত হচ্ছে। অবৈধ প্রেম কিংবা ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ছে, যা স্পষ্ট হারাম। বলা বাহুল্য, তাদের মাঝে যদি পূর্ণ ইসলামি অনুশাসনের অনুসরণ থাকতো, তবে তাদের হৃদয়কোণে আল-কুরআনের এই আয়াতও ধ্বনিত হতো: ‘আর তোমরা জিনার কাছেও যেও না, নিশ্চয়ই তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ (সুরা: বনী ইসরাইল, ৩২)

ফলে তারা পাপ পঙ্কিলতার অন্ধকার এই পথ ছেড়ে দিয়ে বৈধ ও উত্তম পন্থায় বিবাহের দিকে ধাবিত হতো এবং আত্মহত্যার মতো হৃদয়বিদারক ঘটনা বহুলাংশে হ্রাস পেতো।

মানবজীবনকে সুন্দর ও সার্থকভাবে পরিচালনার জন্য বাস্তবসম্মত সকল বিধি-বিধান ইসলামে রয়েছে। ইসলাম হলো পরিপূর্ণ দ্বীন-জীবনব্যবস্থা। এটি নিছক কোনো আচার-অনুষ্ঠান পালন করার ধর্ম নয়। তবু মানুষ বুঝে বা না বুঝে ইসলামের ঐশী নৈতিকতা ও মূল্যবোধকে উপেক্ষা করে পাশ্চাত্য সভ্যতার গর্ভ থেকে বের হয়ে আসা, নৈতিকতা ও মূল্যবোধকেই আদর্শ হিসেবে মেনে নিচ্ছে। পরিণতিতে একদিকে যেমন নৈতিক অধঃপতন বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি আত্মিক সুখ-শান্তিও বিনষ্ট হচ্ছে। তাই এই ভয়াবহ সমস্যার স্থায়ী ও কার্যকর সমাধান যদি আমরা সত্যই পেতে চাই, তবে তরুণদের পরিপূর্ণ ইসলামি ভাব ধারায় গড়ে তুলতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন