ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে বিএডিসির সার কেলেঙ্কারির ঘটনায় দূর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় বিএডিসির কর্মকর্তাসহ ৫জনকে কারাদন্ড দিয়েছে বিজ্ঞ আদালত। এ সময় বিএডিসির দুই কর্মকর্তাকে অর্থদন্ড করা হয় ৪৪ কোটি ৪৬ লাখ ৪ হাজার ৩২৮ টাকা।
এর মধ্যে দুই জনকে যাবজ্জীবন ও তিন জনকে অর্থদন্ডসহ সাত বছরের কারাদন্ড দিয়েছে ময়মনসিংহের বিশেষ জজ আদালত।
রবিবার (২৪ জুলাই) বিকেলে ময়মনসিংহের বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো: শাহাদত হোসেন এই রায় ঘোষনা করেন।
যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তরা হল- কিশোরগঞ্জ বিএডিসি’র (সার) সাবেক যুগ্ম পরিচালক আহাদ আলী ও ভৈরবের বিএডিসি’র (সার) ভারপ্রাপ্ত সহকারি পরিচালক রেজাউল করিম।
এছাড়াও সাত বছরের দন্ডপ্রাপ্তরা হল- নরসিংদীর হাজিপুর নয়াপাড়ার মৃত ফজলু মিয়ার ছেলে মো: হারিছুল হক, কিশোরগঞ্জ অষ্টগ্রাম বাঙ্গালপাড়ার মৃত চুনীলাল রায়ের ছেলে লিটন রায় ও নরসিংদীর বেলাবোর মো: মজিবুর রহমান খানের ছেলে সারোয়ারুল আলম সবুজ।
খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারি আব্দুল হক। তিনি জানান, দন্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামির মধ্যে আহাদ আলীকে দন্ডবিধির ৪০৯ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হয়। আনাদায়ে আরও তিন বছরের কারাদান্ড।
একই সাথে দন্ডবিধির ৫(২) ধারায় আসামি আহাদ আলীকে আরও ৭ বছর কারাদন্ড এবং ২২ কোটি ২৩ লাখ ২ হাজার ১৬৪ টাকা অর্থদন্ড করা হয়।
আসামি রেজাউল করিমকে দন্ডবিধির ৪০৯ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও দশ হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হয়। আনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদান্ড। একই সাথে দন্ডবিধির ৫(২) ধারায় আসামি রেজাউল করিমকে আরও ৭ বছর কারাদন্ড এবং ২২ কোটি ২৩ লাখ ২ হাজার ১৬৪ টাকা অর্থদন্ড করা হয়।
দন্ডিত অর্থ আগামী ৬০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসেবে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মামলার রাষ্টপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সঞ্জীব সরকার।
এছাড়াও আসামি হারিসুল হক, লিটন রায় ও সারোয়ার আলম সবুজকে দন্ডবিধির ৪২০ ধারায় ৭ বছরের কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হয়। এই অর্থদন্ড অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ডের রায় ঘোষনা করা হয়। একই সাথে আসামি হারিসুল হক, লিটন রায় ও সারোয়ার আলম সবুজকে দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় ৩ বছর কারাদন্ড দেওয়া হয় বলে জানান আদালত সংশ্লিষ্টরা।
আদালত সূত্র জানায়, এর আগে ২০১৪ সালের ১৬ নভেম্বর কিশোরগঞ্জের ভৈরবে মজুদ সার না থাকায় ও সারের ঘাটতি হওয়ায় কিশোরগঞ্জ বিএডিসি’র (সার) যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ শেখ বাদী হয়ে সাতজনকে আসামী করে এই মামলাটি দায়ের করেন।
এরপর ২০১৫ সালের ১০ জুলাই দুদক মামলাটি তদন্ত করে আদালতে আসামিদের অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। এরপর মামলার র্দীঘ শুনানিতে বিজ্ঞ আদালত ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এই রায় গোষনা করেন।
তবে মামলা চলা অবস্থায় দুই আসামি খোরশেদ আলম ও রতন মিয়া মৃত্যুবরণ করা বিজ্ঞ আদালত তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়।
এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্টপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সঞ্জীব সরকার ও কাজী শফিকুল ইসলাম। তারা বলেন, এটি যুগান্তকারি একটি রায়। এতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে আইনভীতি সৃষ্টি হবে বলে মনে করছি।
তবে এই রায়ে সংক্ষুব্ধ আসামিদের স্বজন ও সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। মামলায় আসামি আহাদ আলীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো: ফজলুল হক বলেন, আমরা এই রায়ে ন্যায় বিচার বঞ্চিত হয়েছি। ন্যায় বিচারের জন্য আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।
একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন আসামি রেজাউল করিমের শশুড় মো: ইউসুফ আলী। তিনি বলেন, এই রায়ে আমরা সন্তোষ্ট না। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন