সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

নতুন জাতীয় নির্বাচনই শ্রীলঙ্কার রক্ষাকবচ

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০২২, ১২:০৩ এএম

দক্ষিণ এশিয়ার সর্বাধিক ধনী ও শিক্ষিতের দেশ হয়েও শ্রীলঙ্কা আজ দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে দেশটির বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মোট জিডিপির ১১৯%। তন্মধ্যে ৩৬.৪% সরকারি বন্ডের, ১৪.৬% এডিবির, ১০.৯% জাপানের ও ১০.৮% চীনের। এছাড়া, দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণও আছে। বৈদেশিক মুদ্রাভাণ্ডারও প্রায় শূন্য। তাই প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে পারছে না। ফলে পণ্যমূল্য আকাশচুম্বী হয়েছে। গত জুনে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮০.১%। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বলেছে, এই মুহূর্তে দেশের প্রতি ছয়টি পরিবারের পাঁচটি হয় খাদ্যগ্রহণ এড়িয়ে যাচ্ছে, নয়তো কম খাচ্ছে অথবা বাজে খাবার কিনছে। জ্বালানি সংকটও তীব্র। এ কারণে যানবাহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিস বন্ধ রাখা হয়েছিল। দেশটির এই করুণ পরিণতির প্রধান কারণ: সরকারের ভুল নীতি তথা কৃষিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক নিষিদ্ধ এবং ভ্যাট ১৫% থেকে কমিয়ে ৮% করায় কৃষি ও রাজস্ব খাতে ধস। সর্বোপরি সরকারের স্বজনপ্রীতি (দেশটিকে পারিবারিক সম্পত্তিতে তথা রাজাপাকসে হোল্ডিং কোম্পানিতে পরিণত করা হয়েছিল), দুর্নীতি, বিদেশি বিপুল ঋণে অলাভজনক অনেক মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন। আরো উল্লেখ্য, ১৯৮৩-২০০৯ সাল পর্যন্ত ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে অর্থনীতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়। এছাড়া, করোনা মহামারির কারণে সারা বিশ্বের ন্যায় শ্রীলঙ্কার পর্যটন খাতে ধস নামে। সর্বশেষে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে পণ্যমূল্য আকাশচুম্বী হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ না পাওয়ায় আইটি পড়ুয়া ৬ সহপাঠী ১ মার্চ মোমবাতি হাতে প্রথম প্রতিবাদ শুরু করে কলম্বোর উপশহর কোহুওয়ালায় এবং তা পোস্ট করে ফেসবুকে। সেই জ্বলন্ত মোমবাতির শিখা ক্রমশ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে রাজাপাকসে পরিবারের মসনদ পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। কোনো কেন্দ্রীয় ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়াই সামাজিকভাবে সংগঠিত এ আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শামিল হয় দেশটির সর্বস্তরের মানুষ। দীর্ঘ প্রায় ৪ মাসের সেই বিক্ষোভে রাজাপাকসে পরিবার ও সরকারের দৃষ্টান্তমূলক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পতন হয়েছে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালিয়ে প্রথম মালদ্বীপে পরে সিঙ্গাপুর গেছেন এবং পদত্যাগ করেছেন। সেখানে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। উপরন্তু তিনি শ্রীলঙ্কায় গৃহযুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছিলেন বলে ইন্টারন্যাশনাল ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস প্রোজেক্ট অভিযোগ এনে সিঙ্গাপুরের অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেছে ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। তার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে পালিয়ে গিয়ে প্রাণে রক্ষা পান ও পদত্যাগ করেন। আর এক ভাই বাসিল ও অধিকাংশ মন্ত্রী মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। এখন তাদের অনেকেই বিচারের মুখামুখি হয়েছেন বিক্ষোভকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে। তবে এত বড় একটি গণআন্দোলনে দেশটিতে কোনো লুটপাট ও ভাঙচুর হয়নি, যা শিক্ষণীয় ব্যাপার।

রাজাপাকসে পরিবারের পতনের পর প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমাসিংহে (৭৩) ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন। অতঃপর গত ২০ জুলাই দেশটির এমপিদের ভোটে অষ্টম প্রেসিডেন্ট হিসাবে তিনি নির্বাচিত হন। ২২৫ আসনের পার্লামেন্টে রণিল ভোট পান ১৩৪টি। জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১১২ ভোট। ২০২০ সালে পার্লামেন্ট নির্বাচনে তার দল- ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির তিনিই একমাত্র প্রতিনিধি। তবুও তিনিই প্রেসিডেন্ট হয়েছেন রাজাপাকসে পরিবারের ও দলের সমর্থনে, যা এক নজিরবিহীন ঘটনা। নিয়ম মোতাবেক তিনি ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন। সাবেক আইনজীবী রণিল বিক্রমাসিংহে ইতোপূর্বে ৬ বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রশাসন পরিচালনায় ও বিদেশিদের সাথে আলোচনায় খুবই দক্ষ বলে খ্যাত। বিজয়োত্তর তিনি সবাইকে বিভেদ ভুলে দেশকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে বের করে আনতে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান এবং বলেন, বিক্ষোভের নামে কেউ অগণতান্ত্রিক পন্থার আশ্রয় নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সহিংসতার কাছে মাথা নত করা হবে না। এর পর তিনি গত ২১ জুলাই শপথ গ্রহণ করেন। গত জুনে আল-জাজিরার সঙ্গে এক আলাপচারিতায় রনিল বলেন, দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা কাটাতে পারবেন বলে তিনি আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু নয়া প্রেসিডেন্ট রণিল রাজাপাকসের পরিবারের ঘনিষ্ঠজন বলে বিক্ষোভকারীরা তারও পদত্যাগ দাবি করেছিলেন সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে। উপরন্তু তার বাড়িও আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা। তারা রণিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তা মানবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছিল। রণিলের বিজয়ের পর শ্রীলঙ্কার আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট ইউনিয়নের আহ্বায়ক ওয়াসান্থা মুদালিগে বলেন, ‘রণিল রাজাপাকসেদের কর্মচারী। এই সরকার যদি মনে করে যে, বুলেট বা কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে আমাদের চুপ করানো যাবে, তাহলে তারা ভুল করবে। রণিলকে বাড়ি পাঠানোর আগ পর্যন্ত আমরা কোনো চেষ্টা বাদ রাখব না। বামপন্থী দল-জনতা বিমুক্তি পেরামুনার নেতা হরিনি অমরাসুরিয়া বলেন, আরও একবার পার্লামেন্ট দেশের জনগণের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হলো। এখন পার্লামেন্ট বিলুপ্তি ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। দেশটির জনপ্রিয় অভিনেত্রী দামিথা আবেরত্নে বলেন, ‘শেষরক্ষা হয়েও হলো না, আমরা হেরে গেছি। প্রকারান্তরে পুরো দেশ হেরেছে। ক্যাথলিক ধর্মযাজক ফাদার জীবনথা পিরিস বলেন, আমরা রাজাপাকসে শাসনের মানবসৃষ্ট একটি সংকটে ভুগছি, যার জন্য রণিল বিক্রমাসিংহেও দায়ী। তাই আমরা রণিলের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখব। বিক্ষোভকারীরা অধিকাংশ সরকারি ভবনের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দিলেও ‘গল ফেস’ নামে পরিচিত প্রেসিডেন্টের সচিবালয় নিয়ন্ত্রণে রাখেন এবং রণিল বিরোধী নানা শ্লোগান দেন। এ অবস্থায় সেখানে শত শত সৈন্য ও পুলিশ গত ২১ জুলাই মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে তাঁবু ও অন্যান্য সরঞ্জাম খুলে ফেলে এবং অনেক আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে। সে সময় সেনাদের আঘাতে বিবিসির এক সাংবাদিক আহত হন এবং তার ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ধারণকৃত ছবি মুছে ফেলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এই সেনা অভিযানে উদ্বেগ জানিয়েছে। তবুও বিক্ষোভকারীদের উপর সেনারা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভও চলছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি রণিলের পদত্যাগ।

প্রেসিডেন্ট রণিল তার শপথের পরের দিনই তথা গত ২২ জুলাই স্কুলের সহপাঠী, দীর্ঘদিনের এমপি ও পদুজানা পেরামুনা পার্টির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও রাজাপাকসে পরিবারের ঘনিষ্ঠ প্রবীণ রাজনীতিবিদ দীনেশ গুণবর্ধনে (৭৩)কে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দেন। নিয়োগ পেয়ে তাৎক্ষণিকই শপথ নেন দীনেশ। একই দিনে কয়েকটি দলের ১৭ জনকে মন্ত্রী নিয়োগ করেন প্রেসিডেন্ট। তন্মধ্যে ১২ জনই রাজাপাকসের দল শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনার সংসদ সদস্য। এছাড়া প্রধান বিরোধী দল সমজি জনা বালাওয়েগার দুজন, ইলম পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন, শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির একজন এবং শ্রীলঙ্কা মুসলিম কংগ্রেসের একজন। তারা ঐদিনই শপথ নেন। এর পর গত ২৩ জুলাই প্রথম মন্ত্রিসভার সাথে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট। তাতে এক সপ্তাহের মধ্যে দেশে স্থিতিশীলতা আনার সিদ্ধান্ত নেন। প্রেসিডেন্ট রণিল বিদেশি কূটনীতিকদের ঢেকে নিয়ে বলেন, বিবৃতি দেওয়ার আগে সরকারের সাথে আলোচনা করে নেওয়া শ্রেয়। এদিকে, গল ফেস রোড আবার খুলে দেওয়া হয়েছে ২৫ জুলাই থেকে। ঐদিন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও চালু করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া পর্যন্ত সোমবার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার স্কুলগুলোতে সশরীরে ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে এবং বুধবার ও শুক্রবার অনলাইনে ক্লাস হবে।

শ্রীলঙ্কার নজিরবিহীন গণআন্দোলন পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়েছে, দেশটির সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের এবং বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে রাজাপাকসে পরিবারের ঘনিষ্ঠতা ও ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তাই তারা চরম বিপদকালে যেমন প্রশাসনের সহায়তা পেয়েছেন, তেমনি তাদের বিদায়োত্তর প্রেসিডেন্ট ও সরকার গঠন তাদের পছন্দ মাফিকই হয়েছে এবং তাদের ইচ্ছামাফিকই চলতে হবে। নতুবা পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে বিদায় নিতে হবে অন্তত বর্তমান পার্লামেন্ট বহাল থাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ রাজাপাকসেরা ক্ষমতায় না থাকলেও ক্ষমতায় তাদের ব্যাপক প্রভাব রয়েই গেছে।

শ্রীলঙ্কা প্রেসিডেন্ট শাসিত দেশ। তাই দেশটিতে শান্তি, শৃঙ্খলা ও উন্নতি ঘটানোর প্রধান দায়িত্ব নতুন প্রেসিডেন্ট রণিল ও তার নতুন সরকারের। তারা কি তা করতে তথা দেশটিকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে পূর্বাবস্থায় তথা উচ্চমধ্য আয়ের দেশ ও গড় মাথাপিছু আয় ৩,৮১৯ মার্কিন ডলারে ফিরিয়ে নিতে পারবেন? এ প্রশ্ন ঘরে-বাইরে সর্বত্রই। অবশ্য, এ কাজটি খুবই কঠিন ও সময় সাপেক্ষ। বিরোধী দলীয় নেতা সাজিথ প্রেমাদাসাও বলেছেন, অর্থনৈতিক দুর্দশার দ্রুত পরিবর্তন আসবে না। সর্বোপরি রণিল বিক্ষোভকারীদের খুবই অপছন্দণীয় লোক। তাই তারা তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া, রণিল প্রেসিডেন্ট হয়েছেন নিয়ম মোতাবেক ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত নাকি ৮ মাসের জন্য? কারণ, আগামী মার্চের আগেই প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্টের নতুন নির্বাচন, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি, ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ ও পার্লামেন্টকে অধিকতর শক্তিশালী করতে সর্বদলীয় সমঝোতা হয়েছে। সে নির্বাচন হলে তা হবে সরাসরি জনগণের ভোটে। তাতে কে জয়ী হবেন তা বলা কঠিন। দ্বিতীয়ত: সে জাতীয় নির্বাচন করার মতো দেশটির আর্থিক সঙ্গতি এখন আছে কি-না? উপরন্তু বিক্ষোভকারীদের দাবি মোতাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য, ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণ ও পার্লামেন্টকে অধিকতর শক্তিশালী করতে সংবিধানে পরিবর্তন দরকার। দেশটির রাজনীতি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গোষ্ঠীতন্ত্রের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। এসব সমাধান করা খুবই জটিল ও দূরহ কাজ। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও সরকারকে বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে দিতে হবে। আবার বিরোধীদের আস্থাভাজন হয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে হবে। অপরদিকে, দেশটিকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ধনী দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ঋণ, সহায়তা ও বিনিয়োগ দরকার। সেসব করতেও তারা রাজী। কিন্তু সে জন্য তারা গণতন্ত্র অব্যাহত ও দেশটির স্থিতিশীলতা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে। এসব হবে কি-না তা এখনই বলা কঠিন।

দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার বর্তমান লোকসংখ্যা ২.২০ কোটি। শিক্ষার হার ৯৮%। যাদের অধিকাংশই দক্ষ। পর্যটন, কৃষি, গার্মেন্ট, প্রবাসী আয় ইত্যাদির ঐতিহ্য রয়েছে তার। তাই দেশটিকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে পূর্বাবস্থায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব। সে জন্য সর্বপ্রথম দরকার সরকারের প্রতি গণআস্থা ও স্থিতিশীলতা এবং বন্ধুপ্রতীম দেশ ও সংস্থার সহযোগিতা। এছাড়া, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, অপচয়, দলীয়করণ ইত্যাদি বন্ধ করা। এসবের জন্য প্রকৃত গণতন্ত্র ও সর্বত্রই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সর্বোপরি জাতীয় ঐক্য ও নতুন জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। অবশ্য, ইতোমধ্যেই চীনা প্রেসিডেন্ট গত ২২ জুলাই বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে, শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক ও সামাজিক দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারবে। ‘আমি প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহে এবং শ্রীলঙ্কার জনগণের তাদের প্রয়াসে সহায়তা করার জন্য আমার সক্ষমতার সর্বোচ্চ সহায়তা ও সমর্থন দিতে প্রস্তুত। আইএমএফও বেলআউট প্যাকেজ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। জাতিসংঘ জীবন রক্ষাকারী সহায়তার জন্য ৪৭ মিলিয়ন ডলার চেয়েছে। সরকার জাপানের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি খুবই স্পর্শকাতর ও জটিল। এই সংকটের সময় কলম্বোকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তার উপায় নিয়ে গুরুত্বসহকারে ভাবছে নয়াদিল্লি। এরপর আরো কিছু দেশ ও সংস্থা আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য এগিয়ে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জ্বালানি তেলও আসা শুরু হয়েছে। কৃষিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার পুনঃ চালু এবং ভ্যাটের হার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিলেই খাদ্য ও রাজস্ব আয়ের সংকট হ্রাস পাবে। তবে গণদাবি অনুযায়ী যথাশিগগির শ্রীলঙ্কার সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, পার্লামেন্টকে অধিকতর শক্তিশালী ও নতুন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে মানুষের আকাক্সক্ষানুযায়ী নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে। সরকারের উপর মানুষ আস্থাশীল হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। বিপুল বিদেশি বিনিয়োগ, ঋণ ও সহায়তা আসবে। ফলে বিদ্যমান আর্থিক সংকট নিরসন হবে স্বল্প দিনেই।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
sardarsiraj1955@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন