ঠাকুরগাঁওয়ে রাণীশংকৈলে বুধবার তিনটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় পুলিশের গুলিতে কন্যা শিশু’র মাথা উড়ে গেছে। ঘটনাটি উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যর ফলাফল নিয়ে ঘটেছে। নিহত শিশুটি উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের ভাংবাড়ী গ্রামের বাদশাহ আলীর কন্যা শুমাইয়া তার বয়স হয়েছিল দেড় বছর। এ ঘটনায় পৌরশহরের শিবদিঘী যাত্রী ছাউনি মোড় অবরোধ করে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা।
ওই ওয়ার্ডের ভি এফ নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভোট গ্রহণের পর ফলাফল নিয়ে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। শিশু নিহতের ঘটনায় সড়ক অবরোধ থানা ঘেরাওসহ পুলিশের উপর আক্রমণ করেছে বিক্ষুধ্ব জনতা। নিজেদের রক্ষার্থে রাণীশংকৈল থানার ওসি,সহ কয়েকজন পুলিশ সাধারণ মানুষের বাড়ীতে আশ্রয় নেয়।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, ভোট গ্রহণ শেষে ইউপি সদস্য প্রার্থী বাবুল তালা প্রতীকের প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা খতিবর রহমান। ফলাফল ঘোষণা দেওয়ার পর ইউপি সদস্য প্রার্থী খালেদুর রহমান মোরগ ও আজাদের ফুটবল প্রতীকের দুজন প্রার্থী ফলাফল পুনরায় হিসাবের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেন।
এক সময় তারা অনুরোধ রাখার আশ্বাস দিলেও হঠাৎ করেই তারা তাদের নির্বাচনী সামগ্রী কেন্দ্র থেকে নিয়ে চলে আসতে চাইলে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকরা তাদের পরিবহন গাড়ী আটক করেন।
এসময় পুলিশ প্রথমে টিয়ারশেল পরে এলোপাথারী গুলি ছুড়লে এক নারীর কোলে থাকা শিশুর মাথার খোপলার একাংশ সহ(খুলি) মাথার মগজসহ উড়ে চলে যায়। । ওই শিশু বাচ্চাটি নিহতের ঘটনা নিয়ে তাৎক্ষনিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা পুলিশের উপর আক্রমণ করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা গিয়ে নির্বাচনী সংশ্লিষ্টদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। সেখান থেকে আসার পথে পুলিশের একটি মাইক্রোসহ দুজন পুলিশকে বেধড়ক মারপিট করে উত্তেজিত জনতা। অপরদিকে ওই দিন রাতেই শিবদিঘী উপজেলা গেটে র্যাবের একটি প্রাইভেটকার ভেঙে দেন উত্তেজিত জনতা।
পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি ইন্দ্রজিত সাহার নেতৃত্বে দুই গাড়ী বিজিবি,ও পুলিশসহ উপজেলার মীরডাঙ্গী নামক এলাকায় আশ্রয় নেওয়া রাণীশংকৈল থানার ওসি, এস এম জাহিদ ইকবালসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে ফেরার পথে। উত্তেজিত জনতা নিহত শিশুটিকে কোলে করে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে থানা ঘেরাও করেন। পরে থানার পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি ইন্দ্রজিত সাহার নেতৃত্বে বিজিবির একটি দল নিয়ে থানার সামনে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নেন।
উপজেলা স্বাস্থা কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা চিকিৎসক ফিরোজ আলম জানান, দুজন পুলিশ সদস্যসহ মোট ১৩ জন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়াও প্রায় অর্ধশতাধিক সাধারণ মানুষ জরুরী বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, ওই ভোট কেন্দ্র থেকে ভোটের ফলাফল নিয়ে আসার সময় পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকরা ভোট কর্মকর্তাদের বাধা দেওয়ার কারণেই প্রশাসন সেখানে এ্যাকশনে যায়। তবে নিহত শিশুটির বিষয়টি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিশুটির মরদেহের সুরতহাল তৈরী পরেই ঘটনার বিস্তারিত বলা যাবে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন