আমাদের বেশীরভাগ মানুষের মধ্যে ভীতি আছে কোমরে ব্যথা হচ্ছে ভাবছেন কিডনীর কারণে হচ্ছে না তো ? হাঁ কিডনীতে পাথর বা কিডনীর সমস্যা হলেও কোমর ব্যথা হতে পারে। কিন্তু এর সংখ্যা খুবই কম তবে কোমর ব্যথার অনেকগুলি কারণের মধ্যে এটিও একটি। তাছাড়াও বিভিন্ন কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে। যেমন-
১. ম্যাকানিক্যাল ব্যাকপেইন বা পশ্চার জনিত কোমর ব্যথা ঃ এই পশ্চার জনিত কোমর ব্যথা বা মেকানিক্যাল ব্যাকপেইনে ৮০ শতাংশ মানুষ ভুগে থাকে যারা একাধারে দীর্ঘক্ষণ বসে কিংবা দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করে তাদের এই ধরনের সমস্যা বেশী দেখা দেয়। যেমন- মাসল-ম্পাজম বা মাংসপেশীর সংকোচন, মাংসপেশীর দুর্বলতা ইত্যাদি।
২. লাম্বার স্পনডাইলোসিস ঃ এটি মেরুদন্ডের কশেরুকাগুলির ক্ষয়জনীত রোগ এখানে মেরুদন্ডের কশেরুকাগুলি ক্ষয় হয়ে দুইটি কশেরুকার মধ্যেবর্তী স্থানের ফাঁকা স্পেস কমে যায়। পাশাপাশি কশেরুকাগুলির সাথে ছোট ছোট নতুন হাঁড়ের সৃষ্টি হয়, যাকে অষ্টিওফাইট বলে, তখন স্পাইনাল নার্ভগুলির উপর চাপ দেয়। ফলে কোমরে ব্যথা অনুভূত হয়।
৩. লাম্বার স্পনডাইলোলিসথেসিস ঃ আমাদের মেরুদন্ডের কশেরুকাগুলি একটি নির্দিষ্ট এলাইনমেন্ট বা অবস্থানে থাকে যখন কোন কারণে এই কশেরুকাগুলির এক বা একাধিক কশেরুকা তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে যায় তখন এই সমস্যাটিকে লাম্বার স্পনডাইলোলিসথেসিস বলা হয়, এর ফলে কোমরে ব্যথা অনুভুত হয় ।
৪. এনকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিস ঃ এটি একটি মেরুদন্ডের বাত রোগ। এতে মেরুদন্ডটির স্বাভাবিক বক্রতা নষ্ট হয়ে সোজা হয়ে যায়। পাশাপাশি একটি কশেরুকা অন্যটির সাথে ফিউজড বা জমাট বেঁধে যায়। ফলে রোগীর মেরুদন্ডের মুভমেন্ট বা নড়াচড়া কমে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তির ঘাড় ও কোমরের রেনজ অব মোশন বা মুভমেন্ট কমে যায়।
৫. পি এল আই ডি বা ডিস্ক-প্রলেপস ঃ আমাদের মেরুদন্ডের গঠন অনুযায়ী প্রত্যেকটি কশেরুকার মধ্যবর্তী স্থানে সেমি সলিড এক ধরনের পদার্থ থাকে। সেটিকে মেডিকেল পরিভাষায় ডিস্ক বলে। এটির মাঝখান থেকে স্পাইনাল নার্ভগুলি বের হয়ে রুট অনুযায়ী হাত ও পায়ের দিকে যায়। যখন এই ডিস্ক তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে যায় তখন এটিকে ডিস্ক প্রলেপস বলে। এই ডিস্ক সরে গিয়ে মেরুদন্ডের উপর চাপ পড়ে তখন ব্যথা অনুভূত হয়।
৬. অষ্ঠিও পোরোসিস বা হাঁড়ের ভঙ্গুরতা জনিত কোমর ব্যাথা ঃ এটি হাড়ের ক্ষয়জনিত রোগ বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে যেমন আমাদের চুল পেঁকে যায়, তেমনী হাঁড়ের ভিতরের উপাদানগুলি কমে যায় যার ফলে বোন মিনারেল ডেনসিটি কমে যায় তখন হাড়গুলি ভঙ্গুর হতে থাকে। কোমরের মেরুদন্ডের হাড়গুলি যখন অষ্ঠিওপোরোসিসে আক্রান্ত হয় তখন কোমর ব্যাথা অনুভূত হয়।
৭. স্পাইনাল টিউমার বা ক্যানসার ঃ আমাদের মেরুদন্ডের লাম্বার স্পাইনে বা কোমরের অংশে যদি টিউমার, টিউবারকোলোসিস বা টিবি অথবা ক্যানসার হয় সে ক্ষেত্রেও কোমর ব্যাথা হতে পারে।
কিন্তু মজার ব্যাপার হল বেশীল ভাগ কোমর ব্যথার কারণগুলির উপসর্গ প্রায় একই। যার কারণে কোমর ব্যথা হলে অবহেলা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কোমর ব্যথার সঠিক কারণটি নির্ণয় করে চিকিৎসা নিন। কোমর ব্যথা মুক্ত জীবন-যাপন করুন।
এম. ইয়াছিন আলী
বাত, ব্যাথা, প্যারালাইসিস রোগে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
চেয়ারম্যান ও চীফ-কনসালটেন্ট
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি,ঢাকা।
মোবাঃ ০১৭৮৭-১০৬৭০২
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন