লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার রামগতি বাজার থেকে তোরাবগন্জ বাজার পর্যন্ত ওয়াপদা বেঁড়ির দু’পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রায় একশ’কোটি টাকার জায়গা অবৈধ দখল করে দোকান ঘর নির্মাণ করছে প্রায় ৫ শতাধিক দখলবাজ চক্র। সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে দখলস্বত্ব হস্তান্তর করছে চড়ামূল্যে। প্রতি শতক জায়গা বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকায়। এতে প্রায় একশো কোটি টাকার জমি ৩০ বছর ধরে দখলে নিয়েছে প্রভাবশালী সংঘবদ্ধ ৫ শতাধিক দখলবাজরা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা যেন এখন সবার!যে যার মতো করে দখলে নিয়ে আবার ঐ জায়গা চড়া মুল্যে বিক্রি করছে অন্যজনের কাছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তা ব্যক্তিরা দেখেও না দেখার ভান ধরে বসে আছেন। কর্মকর্তাদের জানালে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান। " সরকার কা মাল দরিয়া মে ডাল দে " অবস্থা চলছে লক্ষ্মীপুরে।
সরকারী জায়গা দখলমুক্ত করতে কোন ধরনের পরিকল্পনা নেই কর্তৃপক্ষের। তাদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে,এবিষয়ে তারা চরম উদাসীনতায় রয়েছে। জনমনে প্রশ্ন সরকার কি জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থাপন করলেন? তাদের কাজটা কি? পাউবোর চোখের সামনে কোটি কোটি টাকার মুল্যবান সম্পত্তি দখল করলেও এ ব্যাপারে তারা নিরব দর্শক।
ভূমি দখল করে এরই মধ্যে গড়ে উঠেছে শত-শত দোকান ও নানা স্থাপনা। যে হারে দখল হচ্ছে, আগামী দু-এক বছরের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নামে কোন জায়গার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না এ অঞ্চলে। প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা দিনেদুপুরে জায়গা ভরাট করে দখল করে নেন। আবার কেউ কেউ রাতারাতি বিশাল পাকা স্থাপনাও গড়ে তুলছে। পাকা স্থাপনা করে চড়ামূল্যে অন্যের কাছে বিক্রিও করছে।
ওয়ান ইলেভেনের সময় লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ থেকে রামগতি বাজার পর্যন্ত ওয়াপদা বেঁড়ির দু’পাশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবৈধ দখলকৃত সম্পত্তি উদ্ধার করতে এ ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে বিস্তীর্ণ জায়গা উদ্ধার করা হয়। এরপর সরকার পরিবর্তনের পর নতুন উদ্যোগে সংঘবদ্ধ ভূমিদস্যু রাজনৈতিক প্রভাবে বেপরোয়াভাবে কোটি কোটি টাকার সরকারি ওয়াপদা বেঁড়ির দু.পাশের জমি দখল প্রক্রিয়া শুরু করে। এবং অবৈধভাবে নির্মাণ করছে বাড়িঘর,দোকানপাট ও বিভিন্ন সংগঠনের কার্যালয়সহ নানা অবৈধ স্থাপনা। বাণ্যিজিক ভাবে ২০-২৫ টি পুকুর দখল করে তাতে নানা প্রজাতির মাছ চাষ করছে বছরের পর বছর এসব অবৈধ দখলদাররা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়,এসব জায়গা উদ্ধার করতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হলেও রহস্যময় কারণে প্রভাবশালী শক্তির প্রভাবে এ উচ্ছেদের ফাইলও চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। আবার একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট পুরো জায়গাটি সরকার থেকে লিজ নিয়ে ভোগ করার নামে পজিশন বিক্রি করে জিরু থেকে হিরো বনে যান। এইসব দখলবাজদের নিকট যেন কর্মকর্তারাও অসহায় হয়ে পড়েছে। লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখলের বিষয়ে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশিত হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা-উপজেলা প্রশাসনের কোন টনক নড়েনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,তোরাবগঞ্জ, মৌলভীরহাট,চৌধুরীরহাট,রববাজার,ইসলামগঞ্জ,রহিমগঞ্জ,ফজুমিয়ারহাট,চরলরেন্স,করইতলা,
হাজিরহাট,করুনানগর,জমিদারহাট,আশ্রম বাজার,আলেকজান্ডার,রামদয়াল,কেরামতিয়া,হাজিগঞ্জ,বাঁধেরহাট,চৌধুরী বাজার,কারির গোজা হয়ে রামগতি বাজার পর্যন্ত ১৫ থেকে ১৮টি ছোট বড় হাটবাজার রয়েছে। এই সব বাজারগুলোতে বেঁড়ির দু’পাশে প্রায় ৫ শতাধিক দোকান ঘর গড়ে তুলেছে কতিপয় ভুমিদস্যুরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় দখল করে দোকান ঘর নির্মাণ প্রসঙ্গে ফজুমিয়ারহাট এলাকার নুর মোহাম্মাদ,কেরামতিয়ার এলাকার জাকের হোসেন, নুরুল আলম,বান্দেরহাটের ইসমাইল ও কারিগো গোজার শামছুল হক বলেন,এই সব দোকানগুলো করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মচারী এসে মাসোয়ারা নিয়ে চলে যান। টাকা দিলে পানি উন্নয়ন বোর্ডে সব কিছুই সম্ভাব। এই ভাবে প্রতিদিন বিস্তৃত ভাবে সরকারি জায়গা দখল হচ্ছে।সংশ্নিষ্ট বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চোখের সামনে ভুমিদস্যুরা প্রভাব খাটিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের সদস্যরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসব জায়গায় বিশাল বিশাল স্থাপনা তৈরী করে রাখেন। বর্তমানে কিছু জায়গা দখলমুক্ত থাকলেও প্রতিদিনই দখল প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় আর কতদিন অবশিষ্ট জায়গা দখলমুক্ত থাকবে এটাও অনিশ্চিত।প্রায় তিন যুগ ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একশো কোটি টাকা মূল্যের পুরো সরকারি জায়গাগুলো অবৈধ দখলে নিয়ে চড়ামূল্যে একে অন্যের কাছে দখলস্বত্ব বিক্রি করছে অহরহ।
চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার সফিক উল্লাহ বলেন,এই জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড নেই বললেই চলে! যদি থাকতো তাহলে এই ভাবে সরকারি জায়গা দখলের মহাউৎসব চলতো না। আগামী এক দুই বছরে রামগতি-কমলনগরে পাউবোর কোন জায়গা আর খোঁজে পাওয়া যাবেনা।
চরবাদাম ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন জসিম বলেন,বেপরোয়া দখল বন্ধ না করলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অস্তিস্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। কর্মকর্তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ!
রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম শান্তনু চৌধুরী ও কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজজামান বলেন,পানি উন্নয়ন বোর্ডের দখলকৃত এসব জায়গা উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা পাউবো কর্তৃপক্ষের।
তারা মনে প্রাণে উদ্যোগ নিলে শিগগির উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করা হবে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন,আমরা এই জায়গাগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন আকারে জেলা প্রশাসন বরাবর প্রেরণ করবো। এর পর জায়গাগুলো দখলমুক্ত করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন