সরকারের দেওয়া বাড়ীটিকে বেঁচে থাকতেই কাঙ্গালিনী সুফিয়া একাডেমি হিসেবে দেখতে চান কাঙ্গালিনী সুফিয়া। আমার জন্য ওই এলাকায় বিদ্যুৎ গেলেও আমার বাড়ীটির বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়েছে। বাড়ীতে এসে একদিন থাকবো এখন সে অবস্থা নেই। সকালে সুস্থ থাকলে বিকালে অসুস্থ হয়ে পড়ি। শরীর ভালো নেই। বাড়ীটিকে বাউন্ডারী করে দেওয়ার আশ্বাস জেলা প্রশাসক দিলেও তিনি বদলী হয়ে যান। আমার বাড়ী হওয়ার কারণে এখন নামটি হয়েছে কাঙ্গালীনি পাড়া। জীবনের শেষ ইচ্ছাটি পুরণ করতে চাই। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া সোমবার (১ আগষ্ট ) একান্ত স্বাক্ষাতে এসব কথা বলেন। তার সরকারের দেওয়া বাড়ীটি রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের কল্যাণপুরে অবস্থিত কাঙ্গালিনী সুফিয়া একাডেমি দেখতে চান।
তিনি বলেন, জীবনে শেষ সময়ে এসে এখানেই থাকতে চাই। এলাকায় একটি একাডেমী হলে কিছু শিখতে পারবে। এ কারণেই উদ্যোগ গ্রহণ করছি। সরকারী ভাবে সহযোগিতা পেলে করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, রবিবার রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খানের সাথে দেখা করেছি। তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন সার্বিক সহযোগিতার। তবে কয়েকবার অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে চিকিৎসার ব্যায় ভার মেটাতে তিনি ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, আগের মতো এখন আর স্টেজ প্রগ্রাম করতে পারি না। রোগে অসুস্থ হলেও গান খাইতে কোন অসুবিধা হয় না। আমি প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবী জানাই বেঁচে থাকতেই আমার শেষ ইচ্ছাটি যেন পূরণ হয়।
আরশী নগর লালন স্মৃতি সংঘের প্রতিষ্ঠাতা আশরাফুল আলম আক্কাস বলেন, রাজবাড়ীতে একটি একাডেমি হলে এলাকার সংগীত অনুরাগীরা উপকৃত হবে। কাঙ্গালিনী সুফিয়া একজন জাতীয় শিল্পী। তার স্মৃতি ধরে রাখতে একাডেমি করার জন্য সরকারের নিকট দাবী জানাই।
রাজবাড়ী জেলা কালচারাল অফিসার পার্থ প্রতিম দাস বলেন, জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে ইতিপূর্বে কাঙ্গালিনী সুফিয়াকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। তাকে সাহায্যে করা হয়েছে। তবে তিনি সরকারী ভাবে ভাতা পান সাভার এলাকায়। তিনি ওইখানেই থাকার কারণে ওখান থেকে দেওয়া হয়।
কাঙ্গালিনী সুফিয়ার জন্ম নাম, টুনি হালদার। জন্ম ১৯৬১ সালে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের রামদিয়া। বাবার নাম খোকন হালদার ও মা টুলু হালদার। তিনি লালন গীতি, লোকসঙ্গীত, বাউল গান করেন। একতারা হাতে ১৯৭৫ সাল থেকে গান খেয়ে আসছেন। তিনি কোনবা পথে নিতাইগঞ্জে যাই, পরাণের বান্ধব রে, বুড়ি হইলাম তোর কারণে, নারীর কাছে কেউ যায় না, আমার ভাঁটি গাঙের নাইয়া প্রভৃতি গানের জন্য তিনি বিখ্যাত।
গ্রাম্য একটি গানের অনুষ্ঠানে ১৪ বছর বয়সে তিনি তার সঙ্গীত জীবন শুরু করেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে সুধির হালদার নামের একজন বাউলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়, যদিও সে বিয়ে বেশি দিন টেকেনি। ওস্তাদ হালিম বয়াতির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন ১৯৭৮ সালে। সে সময় তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সুফিয়া খাতুন নাম ধারণ করেন। তার গুরু দেবেন থাপা, গৌর মোহন্ত। তার প্রিয় শিল্পী লালন ফকির, আব্দুল আলীম। সুফিয়ার মোট রচিত গানের সংখ্যা প্রায় ৫০০। তিনি রাজ সিংহাসন চলচ্চিত্রে প্রথম কণ্ঠ দেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, ভারতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাবেক ডিজি মুস্তাফা মনোয়ার তাকে কাঙ্গালিনী উপাধি প্রদান করেন। তারপর থেকে তিনি সুফিয়া খাতুন থেকে দেশব্যাপী কাঙ্গালিনী সুফিয়া নামে পরিচিত হন।
কাঙ্গালিনী সুফিয়া দেয়াল, নোনাজলের গল্প প্রভৃতি নাটকে অভিনয় করেন। উল্লেখ্য নোনাজলের গল্প বুড়ি হইলাম তোর কারণে গানটি অবলম্বনে নির্মিত হয় যেখানে সুফিয়া প্রধান চরিত্রে একজন বাউলের ভূমিকায় অভিনয় করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৯৭ সালে বুকের ভেতর আগুন নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সংগীতে তিনি প্রায় ৩০টি জাতীয় ও ১০টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন