শ্রেণিকক্ষে বিদ্যুৎ না থাকায় গাছের নিচে ক্লাস নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর তাহমিনা আহমেদ। তবে কোনো প্রতিবাদের অংশ হিসেবে এই ক্লাস নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার থিয়েটারের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়ার কথা ছিল প্রফেসর তাহমিনার। তবে ক্লাসে এসে তিনি দেখেন, বিদ্যুৎ নেই। শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত আলোও ছিল না। গরমে ক্লাসরুমে অবস্থান করাও কঠিন। তাই শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ক্লাস নেন এই প্রফেসর।
ক্যাম্পাসে উন্মুক্ত স্থানে ক্লাস করে ভিন্ন অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস প্রতিনিধি আতিক আহমেদ ডালিম বলেন, আজ আমাদের দুটি শাখার দুটি ক্লাস ১০টা ও ১১টায় হওয়ার কথা ছিল। তবে ম্যামের কাজ থাকায় তিনি ১১টার সময় দুই শাখার যৌথ ক্লাস করাবেন বলে জানান।লেকচার থিয়েটারে ক্লাস করার জন্য সবাই যখন উপস্থিত হচ্ছিল তখন বিদ্যুৎ চলে যায়। আর রুমে আলোও একটু কম ছিল। গরমও ছিল। পরে ম্যাম এসে বলেন- যেহেতু বিদ্যুৎ নেই তাই চলো আমরা বটতলায় ক্লাস করি।
এই শিক্ষার্থী বলেন, আমরা মূলত শেক্সপিয়রের কিং লেয়ার নাটকটা পড়ছিলাম। নাটকটা বুঝতে গেলে এনভায়রনমেন্টটা আসলে ওরকম প্রয়োজন ছিল। তাই আমাদের জন্য এখানে উন্মুক্ত স্থানে ক্লাস করাটা ভালোই হয়েছে। আমাদের একটা নতুন অভিজ্ঞতাও হলো।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ঢাবির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। কেউ কেউ বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন কেউ বা নেতিবাচক। হাসান আল আরিফ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী তার ফেসবুকে লিখেছেন, ভয়াবহ লোডশেডিং ও তীব্র গরমে ক্লাসরুমে টেকা দায় হয়ে পরায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তাহমিনা ম্যাম অপরাজেয় বাংলার সামনের বটগাছ তলায় ক্লাস নিচ্ছেন।
উন্নয়নের মায়রে বাপ! #সেম অন হাসিনা রিজিম।
এ বিষয়ে প্রফেসর তাহমিনা বলেন, এটা এমন কোনো বড় বিষয় নয়। রবি ঠাকুরের সাহিত্য পড়াতে যদি আমাকে আমার শিক্ষার্থীদের বুড়িগঙ্গায়ও নেয়া লাগে আমি তো সেটা করতেই পারি। আমি সাহিত্যের শিক্ষক; এরকম ভিন্নধর্মী কিছু অনেক করেছি। এখানে আমি শিক্ষার্থীদের কিং লেয়ার নাটকটা পড়াচ্ছিলাম যা এই পরিবেশের সাথে প্রাসঙ্গিক।
তিনি বলেন, ক্লাসে বিদ্যুৎ ছিল না। তাই আমি শিক্ষার্থীদের বললাম যে, চলো আমরা ক্লাসটা বটতলায় নেই। আমি সারাজীবনই ব্যতিক্রম ক্লাস নিয়েছি। সুতরাং এটা এমন কিছুই না। বাংলাদেশে তো লোডশেডিং সবসময়ই ছিল। আমরা এতে অভ্যস্ত।
উল্লেখ্য, এর আগেও একই স্থানে ক্লাস নিয়ে আলোচনায় আসেন দর্শন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর রেবেকা সুলতানা। ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে সেদিন ক্লাস নিয়েছেন প্রফেসর রেবেকা। তবে লোডশেডিংয়ের কারণে নয় বরং প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ ঘটানো ও প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গিয়ে পঠনপাঠনের অনুভূতি কী রকম হয় সেটা অনুভব করাতেই ছিল ব্যতিক্রমধর্মী এই ক্লাসের আয়োজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন