পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়া চিকিৎসা করাতে গিয়ে ১ বছরের শিশুর ৩টি আঙুল কেটে ফেলতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিশুটির পিতা জাহিদ। তার বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার গাছপাড়া মহল্লায়। শিশুটির নাম তাসিম মোল্লা। এ ঘটনায় সিভিল সার্জনসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগপত্র দিয়েছেন তিনি।
শিশুটির বাবা জানান, তাসিম ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে গত ১০ জুন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া (উদরাময়) ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। গত ১২ জুন সকালে প্রেসক্রিপসন অনুযায়ী কর্তব্যরত নার্স তাকে ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশনটি রগে (রক্ত নালীতে) প্রয়োগ না করে সংশ্লিষ্ট পুরুষ নার্স মাংসপেশিতে প্রয়োগ করেন। ইনজেকশন পুশ করার পর থেকেই বাচ্চার ডান হাত ফুলতে থাকে এবং বাচ্চা যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে। ডিউটিরত নার্সদেরকে বারবার দেখালে তারা বলেন, ঠিক হয়ে যাবে। ইনজেকশন পুশ করার স্থানে (ডান হাত) ক্রমান্বয়ে লালাভ-বেগুনী বর্ণ ধারণ করে এবং বাচ্চা অনবরত যন্ত্রণায় কাঁদতে থাকে। সে সময় কর্তব্যরত চিকিৎসককে দেখালে তিনি ক্ষত স্থানে বরফ এবং নাপা সিরাপ খাওয়াতে বলেন।
গত ১৩ জুন কর্তব্যরত চিকিৎসককে দেখালে তিনি প্রেসক্রিপসনে একটি মলম লিখে দেন এবং লাগাতে বলেন। ১৪ জুন তারিখে কর্তব্যরত চিকিৎসককে দেখালে তিনি তার বাচ্চাকে শিশু ওয়ার্ডে রেফার্ড করেন। বাচ্চার অনবরত কান্নায় তারা গুরুত্ব দেননি। ১৮ জুন কর্তব্যরত চিকিৎসককে দেখালে তিনি শিশুকে রক্ত দিতে বলেন। তারা শিশুকে ১ ব্যাগ রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। ওই দিনই রাত ১২টার দিকে তারা শিশুসহ হাসপাতাল ত্যাগ করেন। ২১ জুন হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখালে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক শিশুকে আবারও রক্ত দিতে বলেন। তিনি গত ৪ জুলাই হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. ওমর ফারুক মীরের কার্যালয়ে জাহিদুল ইসলাম অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় তিনি তাকে পাননি। এ সময় তার কক্ষে থাকা কয়েকজন তাকে হাসপাতাল প্রদত্ত রোগী ভর্তির ফরমের মূল কপি রেখে ফটোকপি হাতে ধরিয়ে দেন।
এরপর তিনি তার বাচ্চাকে পাবনার একজন চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে নিয়ে যান। সেই চিকিৎসক তাকে ঢাকার শিশু হাসপাতালে (নিটর, ঢাকা) দেখানোর পরামর্শ দেন। সে মোতাবেক তারা সেখানে যান। সেখানকার চিকিৎসকরা শিশুটিকে পঙ্গু হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ৬ জুলাই শিশুটিকে ঢাকার শেরে বাংলার পঙ্গু হাসপাতালে দেখানো হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা শিশুটির ডান হাতের ৩টি আঙুল কেটে ফেলতে বলেন।
শিশুটির বাবা জানান, ঢাকার ক্লিনিক ব্যয়বহুল হওয়ায় তিনি পাবনায় চলে আসেন। এরপর গত ২৯ জুলাই পাবনার একটি বেসরকারি হাসাপাতালে অপরেশনের মাধ্যমে তার সন্তানের ৩টি আঙুল কেটে ফেলা হয়।
জাহিদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, তার শিশুটির অনাগত ভবিষ্যত নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, তার সন্তানের ক্ষেত্রে যে অবহেলা করা হয়েছে তিনি তার বিচার চান। এ ব্যাপারে গত ২ আগস্ট তিনি পাবনা জেলা স্বাস্থ্যবিভাগসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী জানান, তদন্ত রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন