মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

এনআইডি সংশোধন প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

এন আইডি (ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ড) বা জাতীয় পরিচয়পত্র নানা ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। পাসপোর্ট করা, সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন করা, স্কুলে ভর্তি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মোবাইল ফোনের সিমকার্ড ক্রয়, গ্যাস-বিদ্যুতের মত ইউটিলিটি সার্ভিসের সংযোগসহ ভ্যাক্সিনেশনসহ সরকারি সুযোগ সুবিধার জন্য এনআইডি কার্ড অত্যাবশ্যক। এনআইডি কার্ড প্রকল্প বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রকল্প। মূলত ভোটার নিবন্ধন হিসেবে এনআইডি প্রকল্প গৃহিত হলেও এটি এখন নাগরিক সনদের মতই কাজ করছে। এহেন দরকারি ও অপরিহার্য জাতীয় পরিচয়পত্রে যদি ভুলভ্রান্তি থাকে তাহলে নানা ক্ষেত্রে সমস্যা ও জটিলতা দেখার দেয়। বিশেষত: এসএসসি সার্টিফিকেটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নামের বানান সংশোধনের হার অনেক বেশি দেখা যায়। জরুরি প্রয়োজনে মানুষকে এনআইডি সংশোধনের জন্য দৌড়াতে হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশে একটি এনআইডি সংশোধন করতে এনালগ দৌড়ঝাঁপ, অহেতুক সময়ক্ষেপণ, ঘুষ-দুর্নীতি ও ভোগান্তির চিত্র দীর্ঘদিনের। যেহেতু দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের জন্য নানা কাজে এনআইডি কার্ড বাধ্যতামূলক। এ কারণে রাজধানী শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত অসংখ্য মানুষকে প্রতিনিয়ত ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হতে হয়। এই সুযোগে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিস এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে কর্মকর্তা ও দালালদের একটি চক্র গড়ে উঠেছে, তারা এনআইডি সংশোধন বা নতুন এনআইডি কার্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে অহেতুক জটিলতা সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এনআইডি সংশোধনের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা জনভোগান্তি দূর করে সেবা ত্বরান্বিত করতে ইতিপূর্বে নির্বাচন কমিশন ১২ দফা একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। বিপুল সংখ্যক মানুষের চাপ সামলাতে এনআইডি কার্ড ইস্যু ও সংশোধন প্রক্রিয়ার কাজকে উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস এবং অধিদফতরের অণুবিভাগে বিকেন্দ্রিকরণ করার পরও মানুষকে অযথা হয়রানি ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রায় সর্বত্র সংশ্লিষ্ট দফতর ও কর্মকর্তাদের ঘিরে গড়ে উঠা একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সরকারের অনুসৃত স্বচ্ছতার নীতিকে অগ্রাহ্য করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা আদায় করছে। অন্যথায় সামান্য কাজের জন্য নানা অজুহাতে মাসের পর ঘুরতে হচ্ছে। সাধারণ নাগরিকদের দোরগাড়ায় সেবা পৌছে দিতে অংিভজ্ঞতার আলোকে কার্যক্রমের বিকেন্দ্রিকরণ করা হলেও দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের কারণে এখনো ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এনআইডি সংশোধনের মূল দায়িত্ব স্থানীয় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা সঠিকভাবে স¦চ্ছ প্রক্রিয়ায় পালন করলে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের কোনো সুযোগ থাকত না।

নাগরিকদের এনআইডি, জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্টের মত কার্যক্রম রাষ্ট্র ও সরকারের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। এটি একদিকে নাগরিকদের প্রয়োজন, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় সুযোগসুবিধা নিশ্চিতকরণ ও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অপরিহার্য্য। প্রায় দেড়কোটি প্রবাসি কর্মী রেমিটেন্স পাঠিয়ে আমাদের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছে। বিদেশ গমনে পাসপোর্ট প্রাপ্তির জন্য এনআইডি ও জন্ম নিবন্ধন অপরিহার্য হওয়ায় এ ক্ষেত্রে যে কোনো জটিলতা, হয়রানি, সময়ক্ষেপণ বিদেশ গমন ও রেমিটেন্স আয়ে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। ডিজিটাল ডেটাবেইজ অনুসারে এনআইডি সংশোধনের একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া থাকা স্বাভাবিক। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং দফতর ঠিকভাবে কাজ করলে এর সংশোধনীতে অস্বচ্ছতা ও এনালগ ভোগান্তির সুযোগ থাকার কথা নয়। আমাদের সরকারি কর্মকর্তারা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা প্রাপ্ত শ্রেণি। যেখানে দেশের লাখ লাখ শিক্ষিত তরুণ চাকরির অভাবে দারিদ্র্য ও হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে, তখন একশ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা বেকার তরুণ ও সাধারণ মানুষের সাথে ঔপনিবেশিক প্রভুর মত আচরণ করছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট সংশোধনীর মত কর্মকান্ডে জড়িত প্রায় প্রতিটি দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জনবান্ধব, দক্ষ ও সৎ হওয়া আবশ্যক। মূলত প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা -কর্মচারি মানেই জনগনের ট্যাক্সের টাকায় বেতনভুক রাষ্ট্রীয় কর্মচারি। ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার থেকে শুরু করে মন্ত্রনালয়ের সচিব-মন্ত্রী পর্যন্ত সকলেই জনগণের সেবক। জনগণের টাকায় উচ্চ বেতন, রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তা প্রাপ্ত ব্যক্তিরা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অনৈতিক পন্থায় অর্থ আদায় করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার চলমান বাস্তবতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ডিজিটালাইজেশনের সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দিতে হলে সর্ব ক্ষেত্রে গড়ে ওঠা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Shamsur Rahman Mujib ৫ আগস্ট, ২০২২, ১২:১১ পিএম says : 0
কে শুনে কার কথা আমি নিজে এই সম্যসায় জর্জরিত
Total Reply(0)
Md Nazmul Hossain ৫ আগস্ট, ২০২২, ১২:১১ পিএম says : 0
Right ! Thank's inqilab k !
Total Reply(0)
Anowr Hossain ৫ আগস্ট, ২০২২, ১২:১২ পিএম says : 0
কে শুনবে কার কথা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন ভ্যালিড পাসপোর্ট কপি দেওয়ার পরেও সংশোধন হয় না আমরা প্রবাসীরা আর কি করবো আমাদের তো সম্বল শুধু পাসপোর্ট এখন দেখা যায় পাসপোর্ট এর চেয়েও আইডি কার্ডের গুরুত্ব অনেক বেশি
Total Reply(0)
shirajumazum ৫ আগস্ট, ২০২২, ১১:৪৫ এএম says : 0
Requesting to the NID card related Authority of Bangladesh for modifying the card because of some time we are missing our value able vote due to far distance voting center from us if it would be touch system then we could to cast our vote from my location any where of our country
Total Reply(0)
shirajumazum ৫ আগস্ট, ২০২২, ১১:৪৫ এএম says : 0
Requesting to the NID card related Authority of Bangladesh for modifying the card because of some time we are missing our value able vote due to far distance voting center from us if it would be touch system then we could to cast our vote from my location any where of our country
Total Reply(0)
শাহাবুদ্দীন ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ৮:৫৬ পিএম says : 0
গ্রামের নাম ভুল
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন