লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে হাজার হাজার অনিবন্ধিত যানবাহনের কারণে বহুমূখী ক্ষতির শিকার হচ্ছেন সরকার ও জনগণ। নিবন্ধন বিহীন এ সব যানবাহন হতে এক দিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপূল পরিমাণ রেজিষ্ট্রেশন ফি থেকে, অন্যদিকে অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের হাতে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত এসব যানবাহনের কারণে নৈমত্তিকভাবে ঘটছে দূর্ঘটনা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাস্তাঘাট, বিঘিœত হচ্ছে জননিরাপত্তা। শহর ও গ্রামগঞ্জের রাস্তাঘাটে এ সব যানবাহনের বেপরোয়া চলাচলে তৈরী হচ্ছে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। অভিযোগ রয়েছে এ সব অবৈধ যানবাহন হতে নামে বেনামে চলে রমরমা চাঁদাবাজি।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, রায়পুরের প্রধান প্রধান সড়কসহ উপজেলার সর্বত্র ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা, পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, সি এন জি ও মটর সাইকেলসহ নানা ধরণের প্রায় দশ সহ¯্রাধিক অবৈধ যানবাহন রাস্তাঘাট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। জানা গেছে প্রধান সড়কে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও রায়পুর পৌর শহরসহ উপজেলার দশটি ইউনিয়নের সড়কগুলোতে দিন রাত চলাচল করছে নিবন্ধনহীন প্রায় ৭-৮ হাজার ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সা ও ইজি বাইক। অনুমোদনহীন এসব বাহনের সংখ্যা দিন দিন আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সকল অটোরিক্সা ও ইজি বাইকের প্রশিক্ষণহীন চালকদের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণা না থাকায় জনাকীর্ণ স্থানগুলোতে যানজট তৈরীর পাশাপাশি যখন তখন ঘটাচ্ছে দূর্ঘটনা, জীবনহানির পাশাপাশি অঙ্গহানি ঘটাচ্ছে নিরীহ যাত্রীদের। অথচ রায়পুর পৌর শহরে তিন চাকার ব্যাটারী চালিত যানবাহন চলাচল করতে পারবে না মর্মে গত ৬ মাস পূর্বে উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হলেও অদ্যবধি তার কোন বাস্তবায়ন পরিলক্ষিত হয়নি।
অন্য দিকে যানজট তৈরী, জান মালের ক্ষয়-ক্ষতি ও সরকারী রেজিস্ট্রেশন ফি ফাঁকির পাশাপাশি ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সাগুলো গিলে খাচ্ছে মহা মূল্যবান বিদ্যুৎ। রায়পুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘রায়পুরে দিনের বেলায় ১৬ এবং রাতের বেলায় ২১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে রাতের অতিরিক্ত ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অটো রিক্সার ব্যাটারী চার্জ দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। আবার অনেকেই অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করে ব্যাটারী চার্জ দিয়ে থাকেন যা বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব তৈরী করে।
রায়পুরে অবৈধ যানবাহনের মধ্যে আরেক প্রকার হলো ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার। মূলত চাষাবাদের জন্য ট্রাক্টর তৈরী করা হলেও কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার আশায় ট্রাক্টরের সঙ্গে বডি জুড়ে দিয়ে মালামাল পরিবহণ করেন। এসব ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলারে অতিরিক্ত ওজনের মালামাল পরিবহনের কারণে এক দিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় গ্রামের কাঁচাপাকা রাস্তা অন্য দিকে যখন তখন ঘটে দূর্ঘটনা। সর্বোপরি গোদের উপর বিশ ফোঁড়া হয়ে আছে নিবন্ধনহীন মটর সাইকেল। অদক্ষ ও প্রশিক্ষণহীন টিনএজারদের হাতে পড়া একেকটি মটর সাইকেল যেন একেকটি রেসের ঘোড়া। জীবনকে থোড়াই কেয়ার করা এসব মটর সাইকেল চালকরা যখন তখন হারাচ্ছে জীবন, বরণ করে নিচ্ছে পঙ্গুত্ব।
রায়পুরের দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট শেখ রাসেল বলেন, ‘ধারনা করা হচ্ছে রায়পুরে প্রায় দশ হাজার অনিবন্ধিত যানবাহন রয়েছে।’ রায়পুর পৌর সভার লাইজেন্স পরির্শক পীরজাদা আরমান হোসেন বলেন, ‘পৌর এলাকায় কি পরিমাণ অনিবন্ধিত যানবাহন রয়েছে তা নির্ণয় করার চেষ্টা চলছে।’ নিবন্ধন বিহীন যানবাহনের বিষয়ে পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে রায়পুর থানার অফিসার ইনচার্জ শিপন বড়–য়া বলেন, ‘নিবন্ধন বিহীন যানবাহন চিহ্নিত করার লক্ষ্যে আমরা প্রায় প্রতিদিনই চেকপোষ্ট বসিয়ে তল্লাশী করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করি। অবৈধ যান চলাচল রোধে এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন