রাজধানীর রায়ের বাজার, আগারগাঁও, কালাচাঁদপুর পশ্চিম এলাকা, মিরপুর, বারিধারার নুরের চালা, ভাটারা, কুড়িল বিশ্বরোডসহ বিভিন্ন এলাকায় পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় নিয়মিত পানি সরবরাহ না করার অভিযোগ উঠেছে। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তারা পানির সঙ্কটে ভুগছেন। ঈদুল আজহার পর সমস্যার শুরু হয়। তবে পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসার আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতে অভিযোগ করেও কোনও প্রতিকার মেলেনি বলে জানিয়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
অপরদিকে ওয়াসা কর্মকর্তারা বলছেন, বৃষ্টিপাত কম, জনসংখ্যা ও চাহিদা বাড়ার কারণে ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নামছে। এজন্য প্রায় ১০০-এর বেশি পানির পাম্প বিকল হয়ে পড়েছে। এছাড়া লোডশোডিংয়ের কারণেও পানির উৎপাদন ও সরবরাহ কমেছে। পাশাপাশি নতুন পাম্প বসানোর জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে রেশনিং করেই চলতে হচ্ছে। এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের দৈনিক চাহিদা ২৬০ থেকে ২৬৫ কোটি লিটার। এর ৬৪ ভাগ আসে ভূগর্ভের পানি থেকে। আর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। আপাতত এটা কোনও উদ্বেগজনক বিষয় নয়। আমাদের গন্ধবপুর পানি শোধনাগার চালু করতে পারলে ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভরতা ৩০ ভাগে কমে আসবে। বর্তমানে ঢাকায় ৮০০ এর বেশি পাম্প রয়েছে। এবার তারা ১০০-এর বেশি পাম্পে বোরিং করাচ্ছেন।
গত ১ আগস্ট ঢাকা ওয়াসার কার্যালয়ে বারিধারায় অবস্থিত ৮ নম্বর আঞ্চলিক কার্যালয়ে অভিযোগ জানাতে আসেন স্থানীয়রা। তারা জানান, এ অঞ্চলের অধীনে নুরের চালা, পশ্চিম ভাটারা, হাজী মার্কেট, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা এবং উত্তর বাড্ডার কিছু অংশে নিয়মিত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযোগকারীদের মধ্যে একজন ভাটারার খন্দকার বাড়ির মোড় এলাকার বাসিন্দা মো. আলী জানান, খন্দকার বাড়ি মোড়ে রাতে আধা ঘণ্টার মতো পানি পাই। এরপর আর সারাদিন খবর থাকে না। মাঝে তিন দিন এক নাগাড়ে পানি আসেনি। কোরবানির ঈদের পর থেকে এ সমস্যা শুরু, এখনও সমাধান পাইনি। তাই অভিযোগ জানাতে এসেছি।
আরেক বাসিন্দা জানান, নুরেরচালা প্রাইমারি স্কুল এলাকায় পানির সঙ্কট সবচেয়ে বেশি। এ বিষয়ে ওই কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় খিলবাড়ির টেক পানির পাম্পটি সম্পূর্ণ বন্ধ। এছাড়া, নয়ানগর এলাকার ফাসেরটেকসহ বেশ কয়েকটি পাম্পের উৎপাদন ক্ষমতা কমে গেছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে দিনে অন্তত তিন ঘণ্টা পানির উৎপাদন করা যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক একই কার্যালয়ের এক প্রকৌশলী বলেন, একদিকে জনসংখ্যা বাড়ছে। নতুন নতুন ভবন হচ্ছে। আর পানির চাহিদা বাড়ছে। অপরদিকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশই নিচে নামছে। পানির উৎপাদনও কমছে। পাশাপাশি বৃষ্টিপাত কম। ভূমির ওপর কংক্রিটের আচ্ছাদন বেড়ে যাওয়ায় পানির রিচার্জ কম। আমরা পাম্প বসানোর নতুন জায়গা পাচ্ছি না। আর সরকারের নীতি হচ্ছে তারা পাম্পের জন্য জায়গা কিনবে না। তিনি বলেন, আমরা স্থানীয় কাউন্সিলরদের কাছে নতুন পাম্প বসানোর জায়গা চেয়েছি। কিন্তু তারা দিচ্ছেন না। তাই বাধ্য হয়ে আমাদের কার্যালয়ের সামনে একটি পাম্প বসাচ্ছি। তিনি বলেন, বর্তমানে পানির স্থির স্তর ২৬০ থেকে ২৮০ ফুট নেমেছে। আর পানি উঠানো হচ্ছে ৯৫০ থেকে ১০০০ ফুট নিচ থেকে।
আগারগাঁও ৬০ ফুট রোডের বাসিন্দা মেহেদী হাসানের অভিযোগ, আমাদের এলাকায় পানির সরবরাহ কম। কয়েকদিন ধরে একদমই সরবরাহ নেই। ভয়ঙ্কর নোংরা ও জীবাণুযুক্ত পানি ব্যবহারে আমার ডায়রিয়া হয়েছিল।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ওয়ার্ডের ৭০ ভাগ এলাকার মানুষ নিয়মিত পানি পান না। আমরা অনেকদিন ধরে সমস্যায় আছি। আমি এ সমস্যা সমাধানে তাদের সঙ্গে বসবো। পাশাপাশি আমরা বারিধারা জে ব্লকের মসজিদের পাশে নতুন পাম্প বসানোর একটি জায়গা দেবো। ঢাকা ওয়াসার ৮ নম্বর আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারি প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা খান বলেন, পানির উৎপাদন কমে যাওয়ায় আমরা নয়ানগর ও আমাদের কার্যালয়ে বোরিং করে নতুন পাম্প বসাচ্ছি। আশা করি নতুন পাম্প বসানো হলে পানির সমস্যা অনেকটাই কেটে যাবে। এখন আমরা পানির রেশনিং করে চালাচ্ছি।
এদিকে কুড়িল বিশ্বরোডের বড়বাড়ি এলাকার মো. মীর কামরুল হাসান বলেন, আমাদের এলাকার পানির সমস্যা প্রকট। গত ১০ দিনের মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে একবার পানি এসেছিল। বিশ্বরোডের ফ্লাইওভারের কাছে একটি পাম্প আছে। সেখানে সমস্যা হয়েছে বলে আমি শুনেছি। এখনও সমস্যার সমাধান হয়নি।
ঢাকা ওয়াসার ৪ নম্বর আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মাজহারুল ইসলাম বলেন, এ বছর বৃষ্টিপাত ৬০ ভাগ কম। পানির উৎপাদনও কম। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে লোডশেডিং। আমাদের এ এলাকায় ১৩২টি পানি উত্তোলনের পাম্প আছে। এর মধ্যে ৩০টির মতো বোরিং করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন