বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সিরাজগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত

সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০২২, ১২:০৪ এএম

সিরাজগঞ্জ জেলা পাসপোর্ট অফিস অনিয়মের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, কর্তব্যরত ডজন খানেক দালালের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী, কর্মকর্তাদের সখ্যতা, নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নিয়ে চুক্তির মাধ্যমে পাসপোর্ট করে দেওয়া, ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা ই-পাসপোর্টের দোকান, জরুরি পাসপোর্টের টাকা জমা দিয়ে নরমাল জমা রশিদ প্রদান, পাসপোর্ট জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা, লাইন ওভারটেক করে ছবি তোলাসহ অন্য ক্ষেত্রে দালালদের দৌরাত্ব্য বেড়ে যাওয়া, উৎকোচ গ্রহণ, টাকা নিয়ে পাসপোর্ট না দেওয়া, এমন অনিয়ম জেলা পাসপোর্ট অফিসে যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি ই-পাসপোর্ট ফরম পূরণ করা দোকানে ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাবেক ডিএসবির কর্মকর্তা আ.হাইয়ের ছেলে বাবুসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করে মামলা করা হয়েছে। তারপরও বন্ধ হয়নি পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতি অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতা।
জানা গেছে, ইতঃপূর্বে সিরাজগঞ্জ স্থানীয় পত্রিকাসহ জাতীয় দৈনিকে এসব খবর প্রকাশ হওয়ার পরেও থেমে নেই অনিয়ম। তাদের নেটওয়ার্ক এতটাই গভীরে প্রত্থিত কোনোভাবেই থামছে না তাদের দুর্নীতি।
এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে এডি মো. জাহিদ ইকবালের কাছে যেতে চাইলে বলা হয়, তিনি করোনায় আক্রান্ত। তার সঙ্গে দেখা করা যাবে না। উনি উপরের তলায় বিশ্রামে আছে। পরে তার কাছে কিছু প্রশ্ন পাঠানো হয়। তিনি বিকালে কিংবা পরের দিন জানাবেন বলে কথা দেন। সারাদিন অপেক্ষার পর বিকালে তার অফিসে গিয়ে দেখা যায়, তিনি বেড়িয়ে যাচ্ছেন। এসময় এডি তাকে মোবাইল নম্বর দেন । ঐ নম্বরে আর তাকে পাওয়া যায়নি। ৩ আগস্ট সন্ধ্যা ও রাতে এডি তার লোকের মাধ্যমে মোবাইলে কোন প্রকার সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান। জানা যায়, ইতিপূর্বে তিনি কাজিপুর মোড়ের অফিস থাকাকালীন সেলুন মালিক সমিতির তৎকালীন সম্পাদক মো. নজরুলের কাছে চুল কাটাতে গিয়ে তার সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে এবং তার মাধ্যমে উৎকোচ গ্রহণ করতেন। বর্তমানে তিনি সিরাজগঞ্জ পাসপোর্ট নতুন অফিসে যোগদান করেন এবং সেই নজরুলকেই ব্যবহার করেন। প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০টি পূরণ করা ই-পাসপোর্ট ফর্ম বিভিন্ন দোকান থেকে চুক্তি করে প্রচুর অর্থ উর্পাজন করছে। পাসপোর্ট অফিসের আশেপাশের ই-পাসপোর্ট ফর্ম পূরণের দোকান থেকে সপ্তাহে ৬দিন সে এগুলো নিয়ে থাকে।
তথ্য মতে জানা গেছে, জরুরি ১০ বছর মেয়াদি সরকারি ফি বা ব্যাংক চালান দিতে হয় ৮,০৫০ টাকা, ৫ বছর মেয়াদের জন্য জমা দিতে হয় ৬,৩২৫ টাকা, ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ পাসপোর্টে ৫,৭৫০ টাকা, ৫ বছর মেয়াদি সাধারণ পাসপোর্টে জমা দিতে হয় ৪,০২৫ টাকা। এতে পাতা থাকে যথাক্রমে ৬৪, ৬৩, ৪৮। সরকার নির্দ্ধারিত মূল্যে কোনো পাসপোর্টই গ্রাহকেরা পান না বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি পাসপোর্টে সরকারি চালান বাদে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা উৎকোচ দিতে হয়। নিমগাছী অধিবাসী প্রফুল্ল দাস জানান, তার ৪,০২৫ টাকা সরকারি জমাসহ মোট ৬,০০০ টাকা তাকে দিতে হয়েছে। অপরদিকে পৌরসভা সদরের রোকন পিতা মরু সেখ জানায়, সে বিনা উৎকোচে অনেক চেষ্টা করেও পাসপোর্ট করতে পারেননি। অপর দিকে ভাসানী কলেজের বিপরীতে আল-হেরা কম্পিউটারের মালিক মুঠো ফোনে জানান, ৬৫০০ টাকায় তিনি চুক্তিভিত্তিক পাসপোর্ট করে থাকেন (নরমাল)। গত ৩ আগস্ট সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার অফিস সূত্রে জানা যায়, মাঝে মধ্যেই ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে পাসপোর্ট অফিসের দোষক্রটি ধরে। মামলাও হয়। পরে আবারও শুরু হয় তাদের অভিযাত্রা। গত ৩ আগস্ট সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
এডি অফিসের কর্মচারী ওবায়দুর, দালাল চক্রের নেতা নজরুল, পলাশ, অকুল, এডি মো. জাহিদ ইকবালসহ অন্যান্যদের ব্যাংক একাউন্ট তদন্ত করা হলে তাদের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন অভিজ্ঞমহল। তাই এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা উচ্চ পর্যায়ের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন