৯ আগস্ট বিশ্ব 'আদিবাসী' দিবসকে কেন্দ্র করে আবার নতুন করে আলোচিত হচ্ছে বাংলাদেশে 'আদিবাসী' বিতর্কটি। বাংলাদেশে 'আদিবাসী' কারা- এই বিতর্কটি খুব প্রাচীন নয়, বড়ো জোর এক দশকের। প্রতিবছরের মতো এবারও দিবসটিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আসলে ‘আদিবাসী’ কারা?- তা নিয়ে তথ্যবহুল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।
‘আদিবাসী’ ইস্যুটি পুরাতন না হলেও তা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাস, অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে নাড়া দিয়েছে। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখতে এনিয়ে অনেকেই এনিয়ে সচেতনতামূলক পোস্ট দিয়েছেন।
জানা যায়, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর যে অংশটি নিজেদের হঠাৎ 'আদিবাসী' বলে ‘দাবী’ করতে শুরু করছে তারা কিন্তু বছর দশেক আগেও নিজেদের এ পরিচয়ে পরিচিত করাতে চায়নি। উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা বা নিজ জাতির পরিচয়েই তারা পরিচিত হতে চেয়ে ‘দাবী’ করে আসছিল দীর্ঘ দিন ধরে। এরকম হঠাৎ করে 'আদিবাসী' হয়ে যাওয়ার নজির বিশ্বে আর নেই।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৪৯/১২৪ এর রেজুলেশনে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিবছর ৯ আগস্ট বিশ্ব আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্ব 'আদিবাসী' দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশ সরকার বিশ্বের 'আদিবাসী' জনগোষ্ঠীর অধিকার, স্বীকৃতি ও ‘দাবী’র প্রতি শ্রদ্ধাশীল।তবে নৃতাত্ত্বিক ও সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশে কোনো সুনির্দিষ্ট কোনো 'আদিবাসী' জনগোষ্ঠী নেই। বাংলাদেশের ভূমিজ সন্তান বা আদি বাসিন্দা হলো এখানকার মূল জনগোষ্ঠী যারা নানা পরিচয়ের পরিক্রমায় বাঙালি বলে পরিচিতি লাভ করেছে।
বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর যে অংশটি নিজেদের হঠাৎ 'আদিবাসী' বলে ‘দাবী’ করতে শুরু করছে তা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশপ্রেমী সচেতন নাগরিক মহল। তাদের যুক্তি, আদিবাসী শুধুমাত্র বাঙালীদের বলা যায়। উপজাতি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তাদের নিজেদের আদিবাসী দাবি করে কিভাবে? তারা তো এদেশে আশ্রিত হয়ে এসেছে। বাঙালী তাদের ঠাই দিয়েছে। তারা আদিবাসী না উপজাতি।
ফেসবুকে এনিয়ে আতিকুর রহমান লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ সংবিধান বলছে বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নাই। বাংলাদেশে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠী যারা বসবাস করছেন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই বাংলাদেশী। কিন্তু হঠাৎ করে দেশের ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীরা যারা নিজেদেরকে উপজাতি পরিচয় দিয়ে রাষ্ট্রীয় সামগ্রিক সুবিধা ভোগ করে আসছে, আজ কেন সেই উপজাতিরা নিজেকে আদিবাসী হিসেবে দাবি করছে? কেন তারা বিশ্ব আদিবাসী দিবস পালন করছে? আরও প্রশ্ন থাকে যে সত্যিই কি তারা আদিবাসী?
ইতিহাস সাক্ষ দেয় পার্বত্য উপজাতিরা কোন ক্রমেই আদিবাসী নয়। এই বিষয়ে পার্বত্য ইতিহাসবিদরা অসংখ্য লেখনী প্রকাশ করেছেন। সরকারও প্রজ্ঞাপন জারি করে দেশের সর্বস্তরের মানুষদেরকে উপজাতি শব্দের পরিবর্তে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করতে বারণ করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় সরকারের নিদারুন অবহেলা আর কতিপয় বাম লেখক, শিক্ষক ও বামপন্থী পত্রিকার একনিষ্ঠ প্রচারণায় দেশের জনগণও উপজাতিদের আদিবাসী ভাবতে শুরু করেছেন। সবশেষে বলবো আদিবাসী দিবস বাংলাদেশের মানুষদের জন্য প্রযোজ্য নয়। যারা পালন করছে তারা দেশদ্রোহী এবং সরকারকেই তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।’’
শান্ত মিয়ার মন্তব্য, ‘‘উপজাতিরা আদিবাসী নয়, তারা আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ বার্মা, চীন, ভারতের মিজোরাম, ত্রিপুরা থেকে সেই দেশের সরকার কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে ঠাই নিয়েছে। উড়ে এসে জুড়ে বসে তারা দাবি করছে আমরা এই অঞ্চলের আদিবাসী আর বাকীরা সবাই বহিরাগত, অথচ ইতিহাস সাক্ষী দেয় পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসী বাঙ্গালীরা। আদিবাসী হতে হলে অভিবাসী হলে হবে না, বরং সত্যিকারভাবে একটি দেশে প্রাচীনকাল থেকে উৎপত্তি হতে হবে। তিন পার্বত্য জেলার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তিন জেলার ১৩টি উপজাতি চাকমা, মারমা, তংচঙ্গা, চাক, পাংখোয়া, ম্রো, মুরং, বোম, লুসাই, খিয়াং, খুমি, দোনাং ও ত্রিপুরা মূলত তারা বিভিন্ন দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস শুরু করে। পার্বত্য অঞ্চলে একমাত্র বাঙালিরাই আদিবাসী, যারা ব্রিটিশ কলোনী স্থাপনের আগে তো বটেই, সেই প্রাচীনকাল থেকে বংশ পরম্পরায় ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা, স্বতন্ত্র, সামাজিকতা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ভাষাগত স্বতন্ত্রবোধ বজায় রেখেছে। সে হিসেবে বাঙালিরাই এখানকার একমাত্র আদিবাসী। সর্বশেষ বলতে চাই, সমতলে কিংবা পাহাড়ে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জাতিগুলো বহিরাগত...অভিবাসী জনগোষ্ঠী, কোনো কোনো গোষ্ঠীকে উপজাতি বলা যায়। তবে কোন ভাবেই তারা আদিবাসী হতে পারে না।’’
শুপ্ত রানী দাস লিখেছেন, ‘‘আমি একটা কথা আজ বুঝে উঠতে পারছি না উপজাতিরা কিভাবে এই দেশের আদিবাসী দাবি করে। এরা তো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। বাঙ্গালী তাদের ঠাই দিয়েছে আর আজ তারা নিজেদের আদিবাসী বলে এদেশের ভূখণ্ডে স্থায়িত্ব লাভ করতে চায়!’’
শশী চাকমা লিখেছেন, ‘‘আমরা যে আদিবাসী নয় আমরা যে উপজাতি সেটা কথায় কথায় স্মরণ করিয়ে দেয়। আমাদের পূর্বপুরুষরা তো সত্যিই বার্মা, চীন, ভারত, ত্রিপুরা থেকে আসছে। আমরা সবাই বহিরাগত। আমরা সংখ্যাতেও খুবি কম। আমাদের আদিবাসী দাবি করার কোন যুক্তিই নেই।’’
জিসান শাহ মনে করেন, ‘‘পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিরাই বহিরাগত। বাইরের দেশ থেকে এসে এদেশের পার্বত্য অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছে। তারা কখনোই আদিবাসী হতে পারেনা। চাকমারা কোথা থেকে এখানে এসেছে এবং এদের উৎপত্তিই-বা কোথায়, এ প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই মনে আসে। উপজাতিদের উদ্ভব ও বসতি বিস্তার সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের মন সব সময়েই কৌতূহলী ও উৎসুক হয়ে থাকে। উপজাতিরা যে এককালে ব্রাহ্মদেশে ছিল সে সম্বন্ধে কর্নেল ফেইরী আলোকপাত করেছেন।’’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন