শ্রাবনের ভরা বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের ব্যপক ঘাটতির মধ্যে আসন্ন পূর্ণিমায় ভর করে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের প্রভাবে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ারে দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপক’লীয় বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সহ চরাঞ্চল পূর্ণ জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে দেড় থেকে ২ফুট পর্যন্ত প্লাবিত হচ্ছে। ফলে এতদিন বৃষ্টির অভাবে যেখানে আমন বীজতলা সহ রোপা আমনের আবাদে অনিশ্চয়তা ছিল, এখন সেসব জমিই আবার ফুসে ওঠা সাগরের প্লাবনে নিমজ্জিত হয়ে নতুন বিড়ম্বনার সৃষ্টি হচ্ছে। উপক’লের বেশীরভাগ নি¤œাঞ্চল প্লবনের কবলে। ফলে এসব এলাকার জনজীবনে নতুন সংকট তৈরী হয়েছে। পায়রা বন্দরকে ৩নম্বর সতর্ক সংকতের সাথে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো নদী বন্দরকে ২ নম্বর সতর্কতার অওতায় রাখা হয়েছে। অনধিক ৬৫ ফুট দৈর্ঘের সব যাত্রীবাহী নৌযানের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাগর ও উপক’লভাগ মাঝারী মাত্রায় উত্তাল রয়েছে।
বরিশাল ও পটুয়াখালীতে গত ২৪ ঘন্টায় ২৬ মিলিমিটার করে, সাগর পাড়ের কলাপাড়াতে ৩৫ মিলিমিটার এবং ভোলাতে ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও এমাসের প্রথম ১০ দিনেও দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে বৃষ্টিপাতের পরিমান এখনো স্বাভাবিকের চেয়ে কম রয়েছে। বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বরিশাল মহানগরীতে আরো প্রায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। চলমান বর্ষা মৌসুমের আষাঢ় ও শ্রাবন যুড়েই দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান ৪৪Ñ৬৫% পর্যন্ত কম বলে আবহাওয়া বিভাগ থেকে আগেই বলা হয়েছে।
এদিকে গত তিন দিনে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো পয়েন্টেই সাগরের পানি উজানে উঠে আসছে স্বভাবিকের চেয়ে বেশী মাত্রায়। ফলে পূর্ণিমায় ভর করে ফুসে ওঠা বঙ্গোপসাগর উজানের পানি স্বাভাবিকভাবে গ্রহন না করায় কোন কোন এলাকায় সাময়িক বণ্যা পরিস্থিতি সৃষ্টিরও আশংকা করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আবহাওয়াবীদ গন। সারাদেশের পানির ৭০ ভাগেরও বেশী সাগরে প্রবাহিত হয় মেঘনা, তেতুলিয়া, আড়িয়াল খাঁ, বিষখালী, বলেশ^র, বুড়া গৌরঙ্গ, কঁচা, সন্ধা ও সুগন্ধা সহ সংলগ্ন নদ-নদী হয়ে।
কিন্তু সাগর ফুসে ওঠায় উজানের পানি গ্রহন না করার পাশাপাশি জোয়ারের পানি ক্রমশ উঠে আসায় এসব নদ-নদীর পানিই গত তিন দিনে বিপদ সীমা অতিক্রম করেছে। বরিশালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজী বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিনে বরিশাল বন্দরে কির্তনখোলায় পানি বেড়েছে প্রায় দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার। ভোলার তেতুলিয়ায় এসময়ে পানি বেড়েছে দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। জেলাটির দৌলতখান ও তজুমদ্দিনের মেঘনা ও সুরমা নদীতেও দশমিক ৭০ থেকে ৮৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি বেড়েছে।
একইভাবে এসময়ে ঝালকাঠীর বিষখালী নদীতেও দশমিক ১৮ সেন্টিমিটার, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে পায়রা নদীল পানি দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার, বরগুনার বিষখালীতে দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার এবং একই জেলার পাথরঘাটাতেও দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার ছাড়াও পিরোজপুরের কঁচা নদীর পানিও প্রায় দশমিক ২৩ সেন্টিমিটার ও উমেদপুরে প্রায় দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে সবগুলো নদীই বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে।
আবহাওয়া বিভাগের মতে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপটি পশ্চিমে অগ্রসর ও ঘনিভুত হয়ে প্রথমে নি¤œচাপ এবং পরবর্তীতে দূর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘু চাপ আকারে অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ু সারা দেশে মোটামুটি সক্রীয় থাকলেও উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা প্রবল আকারে সক্রীয় রয়েছে। বঙ্গোপসাগর থেকে গভীর সঞ্চালণশীল মেঘমালা দক্ষিণাঞ্চলে ধেয়ে এসে বৃষ্টি ঝড়াচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চল সহ সংলগ্ন এলাকায় মাঝারী ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণের সম্ভবনার কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবারের পরবর্তি ৪৮ ঘন্টায়ও বৃষ্টিপাতের প্রবনতা অব্যাহত থাকার কথা বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। ১০-৮-২০২২.
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন