দক্ষিণাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পূর্ণিমার আগমন ও বাতাসের গতি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উপকূলীয় বিচ্ছিন্ন দ্বীপসহ চরাঞ্চল পূর্ণ জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে দেড় থেকে ২ ফুট পর্যন্ত প্লাবিত হচ্ছে। ফলে এতদিন বৃষ্টির অভাবে যেখানে আমন বীজতলাসহ রোপা আমনের আবাদে অনিশ্চয়তা ছিল, এখন সেসব জমিই আবার ফুসে ওঠা সাগরের প্লাবনে নিমজ্জিত হয়ে নতুন বিড়ম্বনার সৃষ্টি হচ্ছে। উপকূলের বেশিরভাগ নিম্নাঞ্চল প্লাবনের কবলে। ফলে এসব এলাকার জনজীবনে নতুন সঙ্কট তৈরি হয়েছে। পায়রা বন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সঙ্কতের সাথে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো নদী বন্দরকে ২ নম্বর সতর্কতার অওতায় রাখা হয়েছে। অনধিক ৬৫ ফুট দৈর্ঘের সব যাত্রীবাহী নৌযানের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাগর ও উপকূলভাগ মাঝারি মাত্রায় উত্তাল রয়েছে।
গত তিন দিনে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো পয়েন্টেই সাগরের পানি উজানে উঠে আসছে স্বভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায়। ফলে পূর্ণিমায় ভর করে ফুসে ওঠা বঙ্গোপসাগর উজানের পানি স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ না করায় কোনো কোনো এলাকায় সাময়িক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টিরও আশঙ্কা করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আবহাওয়াবীদগণ। সারাদেশের পানির ৭০ ভাগেরও বেশি সাগরে প্রবাহিত হয় মেঘনা, তেতুলিয়া, আড়িয়াল খাঁ, বিষখালী, বলেশ^র, বুড়া গৌরঙ্গ, কঁচা, সন্ধা ও সুগন্ধা সহ সংলগ্ন নদ-নদী হয়ে। কিন্তু সাগর ফুসে ওঠায় উজানের পানি গ্রহণ না করার পাশাপাশি জোয়ারের পানি ক্রমশ উঠে আসায় এসব নদ-নদীর পানিই গত তিন দিনে বিপদ সীমা অতিক্রম করেছে।
বরিশালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজী বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিনে বরিশাল বন্দরে কির্তনখোলায় পানি বেড়েছে প্রায় দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার। ভোলার তেতুলিয়ায় এসময়ে পানি বেড়েছে দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। জেলাটির দৌলতখান ও তজুমদ্দিনের মেঘনা ও সুরমা নদীতেও দশমিক ৭০ থেকে ৮৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি বেড়েছে।
একইভাবে এসময়ে ঝালকাঠীর বিষখালী নদীতেও দশমিক ১৮ সেন্টিমিটার, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে পায়রা নদীল পানি দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার, বরগুনার বিষখালীতে দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার এবং একই জেলার পাথরঘাটাতেও দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার ছাড়াও পিরোজপুরের কঁচা নদীর পানিও প্রায় দশমিক ২৩ সেন্টিমিটার ও উমেদপুরে প্রায় দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে সবগুলো নদীই বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে।
আবহাওয়া বিভাগের মতে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপটি পশ্চিমে অগ্রসর ও ঘনিভূত হয়ে প্রথমে নিম্নচাপ এবং পরবর্তীতে দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘু চাপ আকারে অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ু সারা দেশে মোটামুটি সক্রিয় থাকলেও উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা প্রবল আকারে সক্রিয় রয়েছে।
বঙ্গোপসাগর থেকে গভীর সঞ্চালণশীল মেঘমালা দক্ষিণাঞ্চলে ধেয়ে এসে বৃষ্টি ঝড়াচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলসহ সংলগ্ন এলাকায় মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণের সম্ভবনার কথা জানিয়ে আজ পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায়ও বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকার কথা বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন