বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

জমে উঠেছে ভিমরুলির ভাসমান পেয়ারা হাট

ফলন ভালো হওয়ায় আটঘর কুড়িয়ানার চাষিরা খুশি

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

করোনা মহামারী সঙ্কটের পর এবার আটঘর-কুড়িয়ানার পেয়ারা চাষিদের মুখে হাসি ফুটতে শুরু করেছে। গত দুটি মৌসুুমে দাম না পেয়ে কষ্ট আর ক্ষতি এবার অনেকটাই কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি পেয়ারা বাগানকে ঘিরে ভিমরুলির ভাসমান হাটও জমে উঠেছে। আটঘর-কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগান আর ভিমরুলীর ভাসমান হাটকে ঘিরে এলাকার আর্থÑসামাজিক ব্যবস্থার কিছুটা হাওয়া লেগেছে।
‘প্রাচ্যের ভেনিস’ খ্যাত ঝালকাঠি-পিরোজপুর সীমান্তের ভিমরুলির ভাসমান হাটে এবার ভালো দাম পেয়ে পেয়ারা উৎপাদকদের মুখ অনেকটাই উজ্জল। গত বছর দাম কিছুটা বাড়লেও ক্রেতার অভাবে অনেক পেয়ারা বাগানেই নষ্ট হয়েছে। তবে এবার ক্রেতার সমাগমের সাথে দাম ভালো মেলায় কৃষকরা কিছুটা আশায় বুক বেধেছেন।
আর এ পেয়ারা বাগানসহ ভিমরুলির ভাসমান বাজার দেখতে রাজধানীসহ সারা দেশে থেকে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। নৌপথে ও সড়কপথে সকাল ১১টার মধ্যে বরিশালে পৌঁছে পর্যটগণ ছুটে আসছেন ভিমরুলির ভাসমান হাটে। সারাদিন কাটিয়ে বিকেলে বরিশালে ফিরে কেউ আবার সড়কপথেই ঢাকা ফিরে যান। আবার অনেকেই বরিশাল মহানগরী ও আশেপাশের এলাকা ঘুরে রাতের লঞ্চে ঢাকায় ফেরেন। অনেকে বরিশালে রাত কাটিয়ে পরদিন দুর্গসাগর দিঘি ও গুঠিয়ার বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও শের এ বাংলা জাদুঘর দেখে রাতে ঢাকায় ফেরেন।
আটঘর-কুড়িআনা এলাকার ‘মুকুন্দপুরী’, ‘লতা’ ও ‘পুর্নমণ্ডল’ জাতের পেয়ারা মিষ্টি ও অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। শ্রাবণÑভাদ্র থেকে আশ্বিনের মধ্যভাগ পর্যন্ত বরিশাল-ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের ব্রান্ডিং পণ্য পেয়ারার ভরা মৌসুম। ঝালকাঠী ও পিরোজপুরের আটঘর, শতদশকাঠি, কাফুরকাঠি, ভীমরুলি, জিন্দাকাঠি, ডুমরিয়া, খাজুরিয়া, বাউকাঠি, বেতরা, হিমানন্দকাঠি, পোষন্ডা, রমজানকাঠি, সাওরাকাঠি ও কাঁচাবালিয়াসহ বানরীপাড়ার বেশকিছু গ্রামে প্রতিবছরই প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টন পেয়ারা উৎপাদন হচ্ছে। তবে বিগত দুটি মৌসুমে এসব এলাকার চাষিরা বাগানে ১৫ টাকা কেজি দরেও পেয়ারা বিক্রি করতে না পেরে চরম সঙ্কটে পড়েন। এবার পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হওয়ায় দাম বেড়েছে কেজিতে প্রায় ১০ টাকা।
প্রতিদিন এসব এলাকার বাগান থেকে ছোট ও মাঝারি নৌকায় করে বিপুল পরিমাণ পেয়ারা ভিমরুলির ভাসমান হাটে নিয়ে আসছে চাষিসহ বাগান পর্যায়ের ক্রেতারা। সেখান থেকে পাইকারসহ খুচরা ব্যবসায়ীরা পেয়ারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন বাজারে। ট্রলার ছাড়াও লঞ্চ, বাস ও ট্রাকে করে ভিমরুলি থেকে পেয়ারা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন বাজার ও মোকামে। আটঘর-কুড়িআনার এ পেয়ারা দেশের গন্ডি পেরিয়ে ইতোমধ্যে প্রতিবেশি পশ্চিমবঙ্গের বাজারেও বিক্রি হচ্ছে। এমনকি এ অঞ্চলের পেয়ারার সাথে আমড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ত্রিপুরার আগরতালাতেও ভালো বাজার তৈরি করে নিয়েছে ইতোমধ্যে।
নিচু জমিতে মাটি কেটে লম্বা ঢিবি তৈরি করে ‘সার্জন’ পদ্ধতিতে পেয়ারার সাথে লেবু ও আমড়ার আবাদ হয়ে আসছে। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারী উদ্ভাবিত এ পদ্ধতিতে বরিশাল, ঝালকাঠী ও পিরোজপুরের অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকার জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজির আবাদের সম্প্রসারণ ঘটছে। ফলে এসব এলাকার কৃষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটছে দ্রুত।
ভিমরুলির ভাসমান হাট থেকে সারা দেশের পাইকাররা পেয়ারা কিনে সড়ক ও নৌপথে নিজ নিজ মোকামে নিয়ে বিক্রি করছেন। গত প্রায় তিনমাস ধরে ভীমরুলি ও আটঘর-কুড়িয়ানার ভাসমান বাজারে পেয়ারা চাষি ও পাইকারদের ভিড় লেগে আছে। ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, নোয়াখালী ও ফরিদপুর সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বেপারীরা নৌকা থেকেই পেয়ারা কিনে সড়ক ও নৌপথে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে নিয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন সকালে ভরপুর এ বাজারে পেয়ারার বেচাকেনা শুরু হয়ে দুপুরের মধ্যেই শুনশান নিরবতা নেমে আসছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন