শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

শেষ শ্রাবণের পূর্ণিমার জোয়ারে উপকূল সহ দক্ষিণাঞ্চল সয়লাব

সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০২২, ৬:৩৯ পিএম

শেষ শ্রাবণের পূর্ণিমায় ভর করে ফুসে ওঠা বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা জোয়ারের পানিতে উপক’লীয় এলাকা সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিপুল ফসলী জমির সাথে নিম্নাঞ্চল সয়লাব হয়ে আছে। খোদ বরিশাল মহানগরীর অনেক রাস্তায়ও হাঁটু পানি। ভরা জোয়ারে বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইলিশা ও বরিশাল-পটুয়াখালী-বরগুনা মহাসড়কের আমতলী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ ফেরিঘাটের সংযোগ সড়কের জেটি ও গ্যাংওয়ে প্লাবিত হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ প্রায়সই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। শুক্রবার সকালের পরবর্তী ৪৮ ঘন্টায়ও বরিশাল সহ উপক’লভাগে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকার কথা বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।

দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো নদ-নদীর পানিই বিপদ সীমার ওপরে। বৃহস্পতিবার বিকেলে পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টার তুলনায় এ অঞ্চলের মেঘনা, তেতুলিয়া, বিষখালী, আড়িয়াল খাঁ, পায়রা, বুড়া গৌরঙ্গ, সন্ধা, সুগন্ধা ও সুরমা সহ সবগুলো নদ-নদীর পানিই দশমিক ২০ থেকে ২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বেড়েছে। শনিবার পূর্ণিমার ভরা কাঁটাল পর্যন্তই সাগর ফুসে থাকবে বলে আশংকা করছেন পানি বিশেষজ্ঞগন। ফলে রোববারের আগে বঙ্গোপসাগরের সাথে সরাসরি প্রবাহমান নদ-নদীগুলোর পানি হ্রাস পাবার খুব একটা সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল মহল।

বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো নদী বন্দরকে ২ নম্বর নৌ হুশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ফলে অনধিক ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্যের সব যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেতের আওতায় রাখা হয়েছে। সব ধরনের মাছধরা ট্রলার ও জেলে নৌকাকে উপক’লের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।
এদিকে ইতোমধ্যে দু দফায় বীজতলা ও রোপনকৃত ধান প্লাবনের শিকার হওয়ায় শেষ শ্রাবনে এসেও দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনের মাত্র ১০ভাগ রোপন সম্ভব হয়েছে। বেশীরভাগ এলাকার বীজতলা আংশিক বা পূর্ণাঙ্গই প্লাবিত হয়েছে। গত মাসের পূর্ণমার জোয়ারেও কিছু এলাকার আমন বীজতলা আরেকবার প্লাবনের শিকার হয়। চলতি ‘খরিপ-২’ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৭ লাখ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের মাধ্যমে ১৫ লক্ষাধিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগের মতে, বরিশাল বন্দরের কির্তনখোলায় নদীর পানি বৃহস্পতিবার বিকেলে বিপদ সীমার দশমিক ১৮ সেন্টিমিটার এবং ভোলা খেয়াঘাটের তেতুলিয়ার পানিও দশমিক ২৫ সেন্টিমটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। ভোলার দৌলতখানে মেঘনা ও সুরমা নদীর পানি দশমিক ৬৯ সেন্টিমিটার এবং তজুমদ্দিনে একই নদীর পানি দশমিক ৭ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল।

অপরদিকে ঝালকাঠীতে বিষখালীর নদীর পানিও বিপদ সীমার ওপরে ছিল। পটুযাখালীর মির্জাগঞ্জে পায়রা ও বুড়িশ^র নদীর পানিও বিপদ সীমার দশমিক ২৪ সেন্টিমিটার এবং বরগুনার বিষখালী নদীর পানি দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হলেও ভাটির পাথরঘাটায় একই নদীর পানি বৃহস্পতিবার সকাল ১০.২০টায় বিপদসীমার দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছিল। পিরোজপুরের বলেশ্বর নদী বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় দশমিক ৬ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। জেলার উমেদপুরে কঁচা নদীর পানি বৃহস্পতিবার সকালে সাড়ে ১১ টায় দশমিক ১৮ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছিল।

এদিকে আবহাওয়া বিভাগের মতে, একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ দেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে ভারতের আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত থাকলেও একটি বর্ধিত অংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে সক্রিয় রয়েছে। মৌসুম বায়ু দক্ষিণাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকায় মোটামুটি সক্রিয় থাকলেও উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। ফলে বঙ্গোপসাগর থেকে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা ধেয়ে এসে দক্ষিণাঞ্চল সহ উপক’লীয় এলাকায় বৃষ্টি ঝড়াচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত বরিশালে ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

তবে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় দেশের সর্বাধিক বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সাগর উপক’লের কলাপাড়াতে, ৮৯ মিলিমিটার। এসময়ে বরিশাল ও ভোলাতে ১৬ মিলিমিটার করে এবং পটুয়াখালীতে ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন