চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর দাবিতে সারাদেশের চা বাগানে কর্মবিরতি পালন করছেন চা শ্রমিকরা। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত হবিগঞ্জের ২৪টি, সিলেটের ২৩টি, মৌলভীবাজারের ৯২টি বাগানসহ সারাদেশের ২৪১টি বাগানের শ্রমিকরা এ কর্মসূচি পালন করেছেন। চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর দাবি না মানলে সারাদেশের সব চা বাগানে কর্মবিরতি করে মহাসড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দেন তারা।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) নিপেন পাল বলেন, ‘বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে চা শ্রমিকরা দিশেহারা হয়ে গেছে। প্রতিদিন ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে সংসার চলে না। চাল ডাল মসলা কিনতে গিয়ে মাছ কেনার টাকা থাকে না, ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার টাকা জোগাড় করতে অনেক কষ্ট করতে হয়। বাগান মালিকদের সঙ্গে দ্বিপক্ষ চুক্তি অনুযায়ী মজুরি বাড়ানোর কথা থাকলেও, মালিকরা নানা টালবাহানা করে মুজুরি বাড়ছে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা গত ১৯ মাস ধরে তাদের সঙ্গে মজুরি বাড়ানোর জন্য আলোচনা করতে চাইলে তারা (মালিক পক্ষ) আলোচনায় বসতেও রাজি হন না। গত ৩ আগস্ট বাংলাদেশের চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের কাছে মজুরি বাড়ানোর আবেদন দিয়েছি, যদি ১০ তারিখের ভিতরে মজুরি না বাড়ানো হয় তাহলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাবো। প্রয়োজনে বাগান কর্মবিরতি করে বিভিন্ন মহাসড়কে আমরা অবস্থান নিব।’
বাংলাদেশ চা কন্যা নারী সংগঠনের সভাপতি খায়রুন আক্তার বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য হু হু করে বাড়ছে। কিন্তু সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বাগানে কাজ করে ১২০ টাকা মজুরি পাই। অথচ এই টাকা দিয়ে এখন এক লিটার তেলও মিলে না। দুই কেজি সবজি কিনতেই এই টাকা চলে যায়। তাই শ্রমিকদের বাঁচানোর স্বার্থে মজুরি ৩০০ টাকা করতে হবে।’
শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া চা বাগানের নারী শ্রমিক গৌড়ি হাজরা বলেন, ‘আমরা ১২০ টাকা মজুরি পাই, তা দিয়ে আমাদের সংসার চলেনা। আমরা অনেক কষ্ট করে জীবন পরিচালনা করছি। বাজারে সব কিছুর দাম বেশি কিন্তু আমাদের এ কম মজুরী দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না।’
চা শ্রমিক নেতা বিজয় হাজরা বলেন, ‘চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আমরা তিন দিন ধরে সারা দেশে চা বাগানে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করছি। কিন্তু আমাদের কর্মবিরতিকে মালিকপক্ষ কোনো প্রকার গুরুত্বই দিচ্ছে না। কাল শুক্রবার দুই ঘণ্টা কর্মবিরতির শেষ দিন। আপনারা প্রতিটি চা-বাগানে প্রস্তুতি নিন। যদি কালকের ভেতর কোনো আশানুরূপ সমাধান না আসে, তাহলে প্রতিটি চা-বাগানের শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ করে নিকটস্থ শহরের মহাসড়কে অবস্থান করুন। প্রতিটি চা-বাগানে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলুন।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন