একথা কেউ জোর দিয়ে বলতে পারবেন না যে, আমি কখনও ঠান্ডা বা অন্য কোনো ফু¬তে আক্রান্ত হবো না। যে কেউ যেকোনো সময় ঠান্ডায় আক্রান্ত হতে পারেন। কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকলে সহজে ফ্লু ভাইরাস আক্রমণ করতে পারে না- হাত পরিস্কার রাখা: হাত পরিস্কার রাখুন এবং মাঝে মাঝেই হাত ধোবেন। দ্য ইউএস- নেভাল হেলথ রিসার্চ সেন্টারে চল্লিশ হাজার মানুষের ওপর একটি জরিপ করা হয়। স্টাডি অনুযায়ী যারা দিনে অন্তত পাঁচবার হাত ধোয় তারা অন্যদের তুলনায় পয়তাল্লিশ শতাংশ বেশি ঠান্ডা প্রতিরোধে সক্ষম।
গণশৌচাগার ব্যবহারে সতর্কতা: গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ মানুষই পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করার পর হাত ভালোভাবে পরিস্কার করেন না এবং প্রত্যেককেই বের হওয়ার সময় দরজায় হাত দিয়ে খুলতে হয়। সুতরাং টয়লেট থেকে বের হওয়ার আগে হাত ভালোভাবে পরিস্কার করে টাওয়াল বা টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে নেবেন। পরে টিস্যু পেপার দিয়ে দরজার ছিটকিনি খুলে বের হয়ে আসুন।
প্রতিরোধই মূল প্রতিষেধক নিন: ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধের অন্যতম উপায় প্রতিষেধক নেয়া। জটিল ধরনের ফ্লু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভ্যাকসিন নেয়া প্রয়োজন। তবে ডায়াবেটিস, এ্যাজমা, কিডনি সমস্যা, হার্টের রোগী, গর্ভবর্তী মা এবং ৬৫ বছর বয়ষোর্ধদের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন গ্রহণে স্বাস্থ্যকর্মী বা ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেয়া উচিত।
জীবাণু মুক্তকরণ সরঞ্জাম হাতের কাছে রাখুনঃ ঠান্ডা কখনই কাশি বা চুমুর মাধ্যমে ছড়ায় না। যদিও এই দু’টিই সংক্রমণের প্রধান উপায়। কিন্তু ঠান্ডা হাত থেকে হাতে, হাত দিয়ে বিভিন্ন বস্তু ধরার মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে। এমন কি ঠান্ডায় ভাইরাসটি ঘন্টার পর ঘন্টা জীবিত থাকতে পারে। যখন নাকে মুখে হাত দেয়া হয় তখন হাতে লেগে থাকা ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করে এবং অসুস্থতা দেখা দেয়। তাই জীবাণুমুক্তকরণ জেল বা জীবাণুমুক্ত টাওয়াল হাতের কাছেই রাখুন এবং প্রয়োজনে বার বার পরিস্কার করুন। একজনের হাতের জীবাণু থেকে কমপক্ষে ২০ জন সংক্রমিত হতে পারেন।
বার বার হাত ধোয়াঃ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক পরীক্ষা করে দেখেছেন, স্বেচ্ছাসেবকদের হাতের জীবাণু খুব সহজেই অন্য সেবাপ্রাপ্তদের শরীরে প্রবেশ করছে। এমনকি ব্যাকটেরিয়া বিরোধী সাবান ব্যবহার করা সত্তে¡ও। সুতরাং ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে হাত ধোয়ার সময় বার বার পানি দিয়ে পরিস্কার করতে হবে।
তিন মাস পর ট্রুথব্রাশ পরিবর্তন করুন: ট্রুথব্রাশ দাঁত পরিস্কার রাখে। কিন্তু দাঁত ব্রাশ করার পর ব্রাশের নিচে জীবানু জমা থাকে। অধিকাংশ ডেন্টিস্ট দুই-তিন মাসের মধ্যে ব্রাশ পরিবর্তন করতে পরামর্শ দেন। ঠান্ডা এবং ইনফেকশন প্রতিরোধে এটি অন্যতম একটি উপায়।
আঙ্গুলের ডগা দিয়ে চোখ পরিস্কার করাঃ আঙ্গুলের ডগায় জীবাণু অপেক্ষাকৃত কম থাকে। চোখ এ্যান্টি ভাইরাস তৈরি করে। দিনে ২০ থেকে ৫০ বার চোখে মুখে পানির জাপটা দেয়া ভালো।
ব্যায়াম: ব্যায়াম শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে বয়স্ক মহিলারা যারা সপ্তায় অন্তত পাঁচ দিন পয়তাল্লিশ মিনিট করে ব্যায়াম করেন তারা অন্যদের তুলনায় ঠান্ডায় আক্রান্ত হন কম। গবেষকরা জানিয়েছেন, ব্যায়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
দুধ দই বা ঘোল পান করাঃ গবেষণায় দেখা গেছে যারা প্রতিদিন এক কাপ দই বা ঘোল পান করেন তাদের তুলনামুলক ঠান্ডার প্রবণতা অনেক কম। যদিও অনেকে মনে করেন দুধ জাতীয় খাবার ঠান্ডা বাড়ায়। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
ঘরের জানালা খোলা রাখুনঃ আপনি যে ঘরে বেশি সময় কাটান তার জানালা বেশির ভাগ সময়ই খোলা রাখুন। এতে আলো-বাতাস আসবে এবং ঘরের জীবাণু বাইরে নিয়ে যাবে। সহেজ বাতাস মনকেও সতেজ করে তোলে।
অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ না করাই ভালো: ঠান্ডা এবং ফøু ভাইরাস আক্রান্ত অনেকের ধারণা ঠান্ডা হলেই এ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে- যা ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু এমনটি ভাবা ঠিক নয়। এ্যান্টিবায়েটিক জীবাণু ধ্বংস করে ঠিকই, কিন্তু অন্যদিকে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
সপ্তায় তিন / চার দিন টাওয়াল পরিস্কার করুন: সপ্তায় অন্তত তিন থেকে চারদিন গরম পানি দিয়ে আপনার ব্যবহার্য টাওয়াল পরিস্কার করে নিন। গরম পানি জীবাণু ধ্বংস করে। ঠান্ডা বা যেকোনো ধরনের ফ্লুর আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই। নিজেকে গুছিয়ে রাখতে হবে- পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন, সুস্থ থাকুন। আর এ দায়িত্ব আপনার নিজেরই। কারণ জানেন তো প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো। তাইতো বলছি-সুঅভ্যাসে সুস্বাস্থ্য গড়ে তোলি।
চিকিৎসক- কলামিস্ট, মোবাইল-০১৭১৬২৭০১২০
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন