শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

এটিএম বুথে খুন উদ্বেগজনক

| প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ সড়কের ২ নম্বর বাড়ির নিচতলায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে একটার দিকে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে শরীফ উল্লাহ নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। ছিনতাইকারী আবদুস সামাদকে নিরাপত্তাকর্মী ও জনতা আটক করে। গত শুক্রবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সামাদ ছিনতাই ও হত্যার কথা স্বীকার করেছে। জানিয়েছে, বিভিন্ন সময়ে সে বিভিন্ন ধরনের কাজ করত। সম্প্রতি কাজ না থাকায় সে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এজন্য সে ছিনতাইয়ে নামার সিদ্ধান্ত নেয়। সে গাজীপুরের পুবাইলের বদুগাঁও গ্রামে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকে। তার দুটি সন্তান রয়েছে। একটি সন্তান প্রতিবন্ধী। আর্থিক অনটনে পড়ে ছিনতাইয়ের জন্য সে বিভিন্ন এটিএম বুথের সামনে ঘুরতে থাকে। ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে সে উত্তরায় আসে এবং এ ঘটনা ঘটায়। পুলিশ বলেছে, সামাদ পেশাদার ছিনতাইকারি নয়। তার অপরাধের আগের কোনো রেকর্ড নেই।

নিঃসন্দেহে এ ঘটনা অপরাধমূলক ও গর্হিত কাজ। তবে এ ঘটনা ঘটানো এবং জড়িয়ে পড়ার পেছনের কারণটিও উপেক্ষা করার নয়। এর পেছনে রয়েছে, অভাব-অনটন ও বেকারত্বের হতাশা। এ ঘটনা শুধু একটি বা বিচ্ছিন্ন নয়। সমাজের সার্বিক চিত্রের অন্যতম প্রতিফলন। করোনার অভিঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া অর্থনীতি, বেকারত্ব এবং অভাব-অনটনের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে অসংখ্য মানুষের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সার্বিক অর্থনীতিকে আরও অবনতির দিকে নিয়ে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে দিনমজুর থেকে শুরু করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো নিদারুণ কষ্টে জীবনযাপন করছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, করোনার কারণে লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়েছে, সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া বেসরকারি অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবীদের ছাঁটাই ও বেতন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে, দারিদ্র্যসীমা বাড়ছে। প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা দরিদ্র হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ এক দিশাহারা পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, অসংখ্য মানুষ একবেলা খাবার কমিয়েও কুলিয়ে উঠতে পারছে না। অনেকে খরচ কমাতে মাছ-গোশত বাদ দিয়ে ডাল-ভাত নির্ভর হয়ে পড়েছে। সন্তানদের পড়াশোনার খরচ সামলিয়ে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। কর্মসংস্থানের তীব্র সংকট কর্ম হারানো ও কর্মপোযোগী বেকারদের মধ্যে রাজ্যের হতাশা নেমে এসেছে। মানুষ যখন অভাব-অনটনের মধ্যে পড়ে সংসার চালাতে পারে না, তখন তাদের মন-মেজাজ স্বাভাবিক থাকে না। স্বাভাবিক চিন্তাশক্তি হারিয়ে ফেলে। একটা চিন্তাই কাজ করে যেকোনো উপায়ে সন্তান ও পরিবারকে বাঁচাতে হবে। মানসিক এই প্রবল চাপ অনেকের পক্ষে সমাল দেয়া সম্ভব হয় না। এমন পরিস্থিতির শিকার হয়ে অপরাধমূলক কাজে জড়াতে দ্বিধা করে না। সামাদ যে ছিনতাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় এবং খুনে জড়িয়ে পড়ে, তার জন্য নিরুপায় পরিস্থিতি দায়ী। বর্তমানে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যে অত্যন্ত শোচনীয় তা বুঝিয়ে বলার কিছু নেই। অর্থনৈতিক টানাপড়েন তীব্র হওয়ায় সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠছে। সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠলে নানা ধরনের নেতিবাচক ঘটনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। অভাব-অনটনের কারণে যেসব অপরাধমূলক ঘটনায় মানুষ জড়ায়, তা সামাল দেয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ হচ্ছে, পেশাদার অপরাধী সম্পর্কে তাদের ধারণা থাকে। অন্যদিকে, যে কখনো অপরাধে জড়ায়নি, অথচ বেকারত্ব ও অভাব-অনটনের কারণে অপরাধমূলক ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে তাকে আগে থেকে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। এই অচিহ্নিত ও অজানাদের অপরাধ প্রতিরোধের একমাত্র উপায়, সরকারের তরফ থেকে বেকারত্ব ঘুচানোর উদ্যোগ এবং মানুষের অর্থনৈতিক টানাপড়েন লাঘবে পরিকল্পনা নেয়া।

এটিএম বুথে খুনের যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে বুথের নিরাপত্তা রক্ষীদের দুর্বলতা এবং যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবের বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এক্ষেত্রে অধিক সচেতন হওয়া বাঞ্চনীয় ছিল। তা না হওয়ায় এ ঘটনার দায় কিছুটা হলেও তার ওপর বর্তায়। এটিএম বুথ এমন এক ব্যাংকিং সিস্টেম যা দিন-রাত ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে। পুরুষতো বটেই অনেক নারীও দিন ও রাতে বুথ থেকে টাকা তোলার জন্য যায়। ফলে বুথের নিরাপত্তা অত্যন্ত শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন, যাতে ছিনতাইকারি কিংবা ডাকাত দলকে ঘটনাস্থলে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। শুধু সিসি ক্যামেরা দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। যে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে, তা সিসিটিভি প্রতিরোধ করতে পারেনি। এক্ষেত্রে দায়িত্বরত গার্ডের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও প্রতিরোধ করার সক্ষমতা থাকা উচিৎ ছিল। তা হলে এ ঘটনা ঘটত না। আমরা মনে করি, অভাব-অনটনে পড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে অপরাধ প্রবণতা সৃষ্টি হচ্ছে, তা প্রতিরোধে সরকারের পরিকল্পিত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। অবিলম্বে বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য কর্মসূচিমূলক নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু করা প্রয়োজন। এতে কিছু বেকারের কর্মসংস্থান হলে কিংবা অভাবে পড়া মানুষ আর্থিক সহায়তা পেলে অপরাধ প্রবণতার রাস কিছুটা হলেও টেনে ধরা যাবে। সরকারের উচিৎ সাধারণ মানুষের অভাব-অনটনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবা এবং এ অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোরও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসা উচিৎ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ১৪ আগস্ট, ২০২২, ৬:০২ পিএম says : 0
চাঁদাবাজ ঘুষখোর রিমান্ড বাজি ছিনতাইকারী ডাকাত এরা হচ্ছে সন্ত্রাসী ইসলামিক শরীয়ত বিধান অনুযায়ী এই ধরনের সন্ত্রাসীদেরকে হাত এবং পায়ের বিপরীত থেকে কেটে দিতে হবে যদি ছিনতাইকারী চাঁদাবাজ রিমান্ড ডাকাতরা মানুষ হত্যা করে তবে তাদেরকে হাত এবং পা বিপরীত দিকে কেটে শূলে চড়িয়ে হত্যা করতে হবে , তাহলে কখনো এদের সাহস হত না এই ধরনের জঘন্যতম অন্যায় কাজ করার| আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছে এবং তিনিই জানেন কোনটা ভালো কোনটা মন্দ ইসলাম মানলে সমস্যার আগেই সমাধান হয়ে যায়
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন