দেশে পাটশিল্পের চরম দুর্দিন চলছে। বাংলাদেশ জুটমিল করপোরেশন (বিজেএমসি) এর খুলনা জোনাল অফিসের অধীনে খুলনা-যশোরের ৯টি সরকারি পাটকল দু’বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। সরকারিভাবে সহসা পাটকলগুলো চালুর সম্ভাবনা নেই। তাই বেসরকারিভাবে ৪টি পাটকল চালু করার চেষ্টা করছে সরকার।
এদিকে, কোন কাজ না থাকায় বিএজএমসি খুলনা জোনাল অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন। বিজেএমসি খুলনার জোনাল ম্যানেজার পুরো কম্পাউন্ডটিকে গরু-ছাগলের খামার বানিয়ে ফেলেছেন। বিজেএমসি ভবনের কয়েকটি কামরায় বাস করছে তার গরু-ছাগল ও কয়েকটি কামরা ব্যবহার হচ্ছে এসব পশুর খাবার রাখার জন্য। নিয়মিত অফিস করেন না অনেক কর্মকর্তা কর্মচারীই। সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নেই জোনাল অফিস কম্পাউন্ডে। পাটশিল্পের দুর্দিন চললেও পাটকল নিয়ন্ত্রক এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা রাজসিক জীবনযাপন করছেন।
সূত্র জানায়, বিজেএমসি খুলনা জোনের অধীনে খুলনা ও যশোর জেলায় ৯টি পাটকল রয়েছে। ২০২০ সালের ১ জুলাই অব্যাহত লোকসানের কারণে পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়। পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে সমগ্র খুলনা শিল্পাঞ্চল মৃতপ্রায় হয়ে যায়। কর্মহীন হয়ে পড়েন লক্ষাধিক মানুষ। বর্তমানে লিজের মাধ্যমে খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, দৌলতপুর ও যশোরের জেজেআই পাটকল চালুর প্রক্রিয়া চলছে। পাটকলগুলো বন্ধ থাকায় পাট কেনা, উৎপাদনসহ সব কাজই বন্ধ রয়েছে। খুলনার খালিশপুর থানাধীন চরেরহাটে জোনাল অফিসে ১৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন। বর্তমান জিএম গোলাম রব্বানী দুই বছর আগে জোনাল ম্যানেজার হিসেবে যোগ দেন। তার আগে তিনি প্লাটিনাম মিলে জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন। তার স্ত্রী তানজিলা বেগম ছিলেন ওই মিলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। মিলটি বন্ধ হয়ে গেলে একই সাথে তারা জোনাল অফিসে যোগ দেন। অফিসে তেমন কোন কাজকর্ম না থাকায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের এখন অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় জোনাল ম্যানেজার দম্পত্তি অন্তত ১৫টি গরু-ছাগল পালন করছেন। তাদের একান্ত সহযোগী হিসেবে যুক্ত হয়েছেন নিরাপত্তা প্রহরীদের কমান্ডার রাব্বি মন্ডল। রাব্বি মন্ডলের বিরুদ্ধে জোনাল অফিসের বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ রয়েছে। জোনাল ম্যানেজারের কাছের লোক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। জোনাল অফিসের অভ্যন্তরে জলাশয়ে ব্যক্তিগতভাবে মাছ চাষও করা হচ্ছে।
সরেজমিনে জোনাল অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো কম্পাউন্ড জুড়ে গরু ছাগল চড়ে বেড়াচ্ছে। সংশ্লিষ্ট একজন নিরাপত্তা রক্ষীর অভিযোগ, ৪৭টি নারকেল গাছ, ৫৩টি আম গাছ ও ৫২টি কাঠাল গাছ, ৩০০ লেবু গাছের সব ফলফলাদি জোনাল ম্যানেজার নিজেই ভোগ করেন। ব্যক্তি উদ্যোগে তিনটি পুকুরে মাছ চাষ চলছে। অফিস চলাকালীন কর্মকর্তা কর্মচারী তেমন কাউকে পাওয়া যায়নি। দেয়াল ঘেরা পুরো এলাকাটি নিস্তব্ধ হয়ে রয়েছে। সাধারণ মানুষের এখানে প্রবেশাধিকার নেই। তাই ভিতরে কী হচ্ছে না হচ্ছে, তা সাধারণের জানার বাইরে।
জোনাল অফিসের সিকিউরিটি কমান্ডার রাব্বি মন্ডল বলেন, স্যার ও ম্যাডামের কয়েকটি গরু-ছাগল আছে। আমি সেগুলো দেখাশুনা করি। এ জন্য আমি বাড়তি কোন সুবিধা পাই না। স্যার ভালবাসেন তাই স্যারের কাজ করে দেই। কয়েকদিন আগে জোনাল ম্যানেজারের একটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়লে তা খালিশপুরের কসাইদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয় এমন অভিযোগে বিষয়ে তিনি বলেন, একটি গরুকে কুকুর বা অন্য কিছু হয়তো কামড় দিয়েছিল। গরুটি অসুস্থ হয়ে পড়ায় পশু চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। এরপর স্যারের একটি গাড়ি গরুটিকে নিয়ে যায়, তবে কোথায় নিয়েছে, তা আমি জানি না। বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে জোনাল ম্যানেজার গোলাম রব্বানী দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, জোনাল অফিস সবসময়ই কর্মব্যস্ত থাকে। গত দু’বছর ধরে শ্রমিক কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধের হিসাব আমরা তৈরি করেছি। তাদের প্রায় সব বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে। মিলগুলো লিজ দেয়ার বিষয়েও আমরা কাজ করেছি। মন্ত্রণালয় যখন যে নির্দেশ দেয়, আমরা তা বাস্তবায়ন করি।
গরু-ছাগল পালনের বিষয়ে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই আমি গরু-ছাগল পুষছি। এগুলো পোষার জন্য আমার আলাদা কর্মচারী রয়েছে। অফিসের কামরায় গরু-ছাগল দেখা গেলেও অভিযোগটি তিনি অস্বীকার করে বলেন, সব তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন