একসময়ের সন্ত্রাসী জনপদ খ্যাত কুষ্টিয়ায় আবারও বাড়ছে হত্যাকাণ্ড। গত ৪০ দিনে কলেজ শিক্ষার্থী-সাংবাদিকসহ অন্তত ১ ডজন ব্যক্তি খুন হয়েছেন। এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই জনপদের জনমনে বাড়ছে আতঙ্ক। অথচ এসব হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সফলতাও খুব একটা দৃশ্যমান নয়। তবে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা দিনরাত কাজ করছেন।
স্থানীয় পত্রপত্রিকা ও সংশ্লিষ্ট থানার রেকর্ডবুক বলছে, কুষ্টিয়ায় জুলাই মাসের শুরু থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ১২ জন খুন হয়েছেন। যে পরিস্থিতিকে স্থানীয় নাগরিকরা ২০০৮-০৯ সালের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করছে; যখন লাশ নিত্যদিনের বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। এতে নিরাপত্তাহীনতা বাসা বেঁধেছে জনমনে।
জানা যায়, ১ জুলাই কুষ্টিয়ার গড়াই নদী থেকে দীপ্ত বাগচী নামে এক কলেজছাত্রের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। একই দিন দৌলতপুর উপজেলায় পদ্মা নদীতে খোকন নামে একজনের ভাসমান লাশ উদ্ধার হয়। ৩ জুলাই কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার খয়েরচরা গ্রামে কাজলী খাতুন নামের এক গৃহবধূ খুন হন।এর চারদিন পর ৭ জুলাই কুমারখালী উপজেলার নির্মাণাধীন যদুবয়রা সেতুর নিচ থেকে উদ্ধার হয় সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেলের লাশ। ৩ জুলাই পত্রিকা অফিস থেকে নিখোঁজ হন তিনি। এ ব্যাপারে ওই দিনই কুষ্টিয়া মডেল থানায় জিডি হয়েছিল। কিন্তু রুবেলকে জীবিত উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। ১০ জুলাই কুষ্টিয়ার মিরপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শওকত আলী নামে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ১৭ জুলাই নিখোঁজ কলেজছাত্র নয়নকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। ২০ জুলাই কুষ্টিয়ার বটতৈলে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ফরিদ নামে এক কৃষককে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরদিন ২১ জুলাই কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ানে নজরুল মুন্সী নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার হয়।
১ আগস্ট হত্যার পরিশোধ নিতে কুমারখালীতে হত্যা মামলার আসামিকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। ৩ আগস্ট ভেড়ামারা শহর থেকে রক্সিপেন্টের এরিয়া ম্যানেজার লোকমান হোসেনের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের ২ দিন আগে থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। তিনি বাগেরহাট থেকে কুষ্টিয়ায় চাকরি সূত্রে এসে খুন হন। পাওনা টাকা আনতে গিয়ে তিনি হত্যার শিকার হন। এক্ষেত্রে র্যাব আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় পদ্মা নদীতে মিনারুল নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শনিবার কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম সংবাদ সম্মেলন করে আসামি হাজির করেন এবং বলেন, এটি একটি ক্লুলেস মার্ডার ছিলো। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ছিল সাংবাদিক রুবেল খুন। এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এই হত্যাকাণ্ডের ক্লু এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়াও অনেক হত্যাকাণ্ডের পর মামলার মোটিভ পায়নি পুলিশ। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম তোহা বলেন, আইন ভঙ্গ করার প্রবণতা বাড়ছে। কেন হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে, তা খুঁজে দেখার জন্য তিনি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি নাগরিক সমাজের পক্ষে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন