জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে বেনাপোল বন্দরে পণ্য পরিবহনে অস্বাভাবিক ট্রাক ভাড়া এবং বাস ভাড়াও বেড়েছে সমান তালে। ফলে সংকট দেখা দিয়েছে পরিবহনের । পণ্য পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির কারণে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে গিয়ে আমদানিকারক, পরিবহন এজেন্ট ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে এখন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে বেনাপোল থেকে ছেড়ে যাওয়া দুরপাল্লার বাস গুলিও আসন প্রতি ভাড়ার রেট বাড়িয়ে দিয়েছে যাত্রীদের উপর। যার কারনে ভারত থেকে আসা যাত্রীরা পড়েছে বিপাকে।
আমদানিকারকরা জানান, তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ট্রাক মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। আগে বেনাপোল থেকে ঢাকা পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাকের ভাড়া ছিল ১৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২১ হাজার টাকা। তা বাড়িয়ে এখন ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২৫ থেকে ২৮ হাজার টাকা। বর্তমানে ট্রাক সংকটে অনেকে আমদানি পণ্যের শুল্ক পরিশোধ করেও বন্দর থেকে পণ্য খালাস করতে পারছেন না। আর বাস ভাড়া আসন প্রতি বাড়ানো হয়েছে ২শত টাকা থেকে ৪শত টাকা পর্যন্ত আর এসি বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে আসন প্রতি ৬ থেকে ৭ শত টাকা পর্যন্ত।
ঢাকার কয়েকজন আমদানী কারক এ প্রতিবেদক জানান বেনাপোল কাস্টমস বন্দরের সব কার্যক্রম শেষ করেও। অতিরিক্ত ট্রাকভাড়ার কারণে তারা পণ্য বেনাপোল বন্দর থেকে ফ্যাক্টরিতে নিতে পারছেন না।
যশোরের আমদানিকারক আনোয়ার আলী আনু বলেন, গত মাসেও আমরা বেনাপোল থেকে যশোর পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকায় ট্রাকে করে পণ্য এনেছি। কিন্তু এখন সেই ট্রাক ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ১১ হাজার টাকা। এতে করে লোকসানের শিকার হতে হবে। কেননা প্রতিযোগিতার বাজারে পণ্যের দাম বাড়ানো যায় না।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী বলেন, তেলের দাম বাড়লেতো ট্রাকভাড়া বাড়বেই। বর্তমান বাড়তি দামে কমপক্ষে একটি ট্রাকে ১০ হাজার টাকা বেশি লাগবে। সে কারণে বেনাপোল বন্দর থেকে সারা দেশে পণ্য পরিবহনের ভাড়া বেড়েছে।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুজ্জামান সনি বলেন, আগে বেনাপোল থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহনে প্রতি ট্রাকের ভাড়া ছিল সর্বনিম্ন ১৮ হাজার ও সর্বোচ্চ ২৩ হাজার টাকা। একই ট্রাকের ভাড়া এখন বেড়ে হয়েছে ২৭ থেকে ৩৩ হাজার টাকা। একইভাবে কাভার্ডভ্যানের ভাড়া ৩০ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৭ হাজার টাকা। এত বেশি ভাড়া দেওয়া সত্ত্বেও ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মিলছে না। ফলে পণ্য পরিবহন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন বলেন, পরিবহন সংকটের জন্য ট্রাক ভাড়া এখন স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। কাঁচাপণ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে পণ্য খালাস করে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে মার্কিন ডলারের মুল্য বদ্ধি ও টাকার মান কমে যাওয়ায় আমদানী কারকরা ব্যাংকে এলসি খুলতে পারছেন না। ফলে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানী ও অনেক কমে গেছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ¦ শামছুর রহমান জানান, বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন স্বাভাবিক সময়ে সাড়ে ৪শ ট্রাক পণ্য আমদানি ও আড়াইশ ট্রাক পণ্য রফতানি হয়ে থাকে। গেল ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছে ২১ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন। এসব পণ্য ট্রাক বা কার্ভাডভ্যানে পরিবহন করা হয়। তেলের দাম বাড়ায় বেনাপোল থেকে ট্রাক ভাড়া ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা বেড়েছে। এতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন