কৃষি শিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণের পথিকৃৎ হিসেবে ১৯৬১ সালের এই দিনে ময়মনসিংহে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। আজ ১৮ আগস্ট ৬২ তম বছরে পা দিচ্ছে দক্ষিণ উপমহাদেশের আয়তনে সর্ববৃহৎ এই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী থাকলেও শোকের মাস আগস্টের কারণে তেমন কোনো জমকালো কর্মসূচি হাতে নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দিনটি উপলক্ষে সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও কবুতর অবমুক্তকরণ করে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি চত্বরে পুষ্পস্তবক অর্পন করবেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান। পরবর্তীতে বৃক্ষরোপন, গাছের চারা বিতরণ ও মাছের পোনা অবমুক্তকরণের মতো কর্মসূচী হাতে নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, গতবছর সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত টাইম হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) প্রকাশিত র্যাংকিং তালিকায় বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় ১০০১ থেকে ১২০০ এর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) যা দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়। ময়মনসিংহ শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে ১ হাজার ২৫০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার কৃষিবিদ তৈরি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এখানে কৃষি, ভেটেরিনারি, পশুপালন, কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান, কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের আওতায় ৪৩টি বিভাগে সেমিস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে ৯ হাজার ৮১৮ জন শিক্ষার্থী ও ৫৬৬ জন শিক্ষক রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য রয়েছে ১৪টি হল।
৬১ বছরের বিশ্ববিদ্যালয়টির পথচলায় এসেছে বহু সাফল্য। বাউকুল, ধান, সরিষা, সয়াবিন, আলু, মুখিকচুর বেশ কয়েকটি করে জাত উদ্ভাবন করেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। তারাবাইম, গুচিবাইম, বড় বাইম, কুঁচিয়া, গাঙ মাগুর, কই ও বাটা মাছের কৃত্রিম প্রজননপদ্ধতিও আবিষ্কার করা হয়েছে। মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষ প্রযুক্তি, কচি গমের পাউডার উত্পাদন, বিদ্যুৎবিহীন হিমাগার, হিমায়িত ভ্রূণ থেকে ভেড়ার কৃত্রিম প্রজননপদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে এখানে। কলা ও আনারস উত্পাদনের উন্নত প্রযুক্তি, শুকনা পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষের প্রযুক্তি, জৈব সার উৎপাদন প্রযুক্তি, মাটি পরীক্ষার সরঞ্জাম, গবাদিপশুর ভ্রূণ প্রতিস্থাপন, মাছের রোগ প্রতিরোধকল্পে ঔষধি গাছের ব্যবহার ও হাওর এলাকায় হাঁস পালনের কলাকৌশল উদ্ভাবন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। এছাড়াও প্রথমবারের মতো ইলিশ মাছের জীবন রহস্য উন্মোচন, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জীবন রহস্য উন্মোচনসহ অনেক সাফল্য রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের। এখানকার জার্মপ্লাজম সেন্টারটি দাঁড়িয়ে আছে একটা পরিণত গাছের মতো, যার ফল ভোগ করছে গোটা বাংলাদেশ। গৌরবের ৬২ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্পণ নিয়ে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করার যে চ্যালেঞ্জ আমরা হাতে নিয়েছিলাম তাতে আমরা জয়লাভ করেছি। বর্তমানে আমরা দেশ থেকে খাদ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হচ্ছি। এ পর্যন্ত বাকৃবি প্রায় ৫০ হাজার দক্ষ গ্রাজুয়েট তৈরি করেছে। যারা দক্ষতার সহিত বিভিন্ন সেক্টরে দেশে বিদেশে কাজ করে সুনাম অর্জন করছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয় আরও সুনাম করবে। আমরা যেমন দেশে ক্ষুধা-মঙ্গার অবসান ঘটিয়েছি তেমনি আমরাই একদিন পারব মানুষের মাঝে নিরাপদ খাদ্য পৌঁছে দিতে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন